বৃহস্পতিবার ● ১৫ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » লকডাউন শিথিল না করে আরও বাড়ানোর সুপারিশ
লকডাউন শিথিল না করে আরও বাড়ানোর সুপারিশ
অনলাইন ডেস্ক :: চলমান বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরও ১৪ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সেইসঙ্গে সারাদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় লকডাউন শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, সোমবার (১২ জুলাই) কমিটির ৪১তম অনলাইন সভায় এ সুপারিশ করা হয়।
সুপারিশ আরও উল্লেখ করা হয়, লকডাউনের অংশ হিসেবে কমিটি কোরবানির হাট বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেছে। প্রয়োজনে ডিজিটাল হাট পরিচালনার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। তবে সরকার লকডাউন শিথিল করে সীমিত পরিসরে কোরবানির হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলে সেক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
সরকার সারাদেশে কোভিড ১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করেছে যা সন্তোষজনক। জাতীয় পরামর্শক কমিটির পূর্ববর্তী সভার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি পর্যায়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করায় সভায় সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়। দৈনিক টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য বেসরকারি পর্যায়েও টেস্ট বৃদ্ধির প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় কিটের দাম আরও হ্রাস হওয়ার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মূল্য কমিয়ে এক হাজার থেকে ১৫শ টাকার মধ্যে নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বর্তমানে অনেক কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে। যার ফলে চিকিৎসা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন অতিব জরুরি।
আবারও টিকার আওতায় দ্রুত আরও বেশি মানুষকে আনার উদ্দেশ্যে বয়সসীমা ১৮ তে নামিয়ে আনা, এনআইডিবিহীন জনসাধারণকে টিকার আওতায় আনা, রেজিস্ট্রেশন সহজীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে অতিসত্বর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
কোভিড ১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপসমূহ সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়।
করোনা সংক্রমণ রোধে ঈদুল আজহা ও কোরবানির হাটের জন্য সুপারিশ
১. শহর এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি না দেওয়া।
২. শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে উন্মুক্ত স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
৩. বয়স্ক ব্যক্তি (৫০ বছর বা তার বেশি) এবং অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কোরবানির হাটে না যাওয়া।
৪. হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে আলাদা পথ রাখা।
৫. বাজারে আসা সবার জন্য মাস্কপরা বাধ্যতামূলক করা।
৬. জনসাধারণকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে যে যেখানে আছেন সেখানে অবস্থানের বিষয়ে উৎসাহিত করা।
৭. জনসাধারণের অনলাইন কোরবানির হাটের সুবিধা গ্রহণে উৎসাহিত করা।
৮. বাড়ির আঙিনায় কোরবানি না করে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই করা।
৯. ঈদুল ফিতরের নামাজের জামায়াত যেভাবে আয়োজন করা হয়েছিল এবারও তেমনিভাবে ঈদুল আজহার জামাত আয়োজন করা।
এদিকে লকডাউন শিথিল করায় বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বুলেটিনেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই ৮ দিনের জন্য লকডাউনের যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, তাতে সারাদেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে চালু হওয়া গণপরিবহন, শপিংমল ও কোরবানির পশুর হাটে যদি স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানা না হয়, তবে সংক্রমণের মাত্রা কমার কোনো সুযোগ থাকবে না।
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের মাত্রা ৩০ শতাংশ রয়েছে জানিয়ে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, কোরবানির পশুর হাটে মাস্কের ব্যবহার ১০০ ভাগ করা না গেলে সংক্রমণের মাত্রা আপ্রাণ চেষ্টা করেও কমানো যাবে না। তাই জনে জনে যেন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অনুরোধ জানাই।
গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আসন্ন ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরণের বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। অর্থনৈতিক সব কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ফলে ৮ দিনের জন্য শেষ হচ্ছে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’। তবে আগামী ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হবে বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
লকডাউন শিথিল হওয়ার সময়ে জনগণকে মাস্ক পরা এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত নতুন করে যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে।