সোমবার ● ২৬ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » ঝিনাইদহে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে কঠোর লকডাউন
ঝিনাইদহে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে কঠোর লকডাউন
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে কঠোর লকডাউনের ৩য় দিনে চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। সড়ক মহাসড়কে বাস বন্ধ থাকলেও ইজিবাইক, মাহেন্দ্র চলাচল করছে। গাদা-গাদি করে বহন করা হচ্ছে যাত্রী। রোববার সকালে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজার, ভাটই বাজারসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে বসানো হয়েছে হাট-বাজার। চলছে কেনা-বেচা। সেখানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি। অনেকেই মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন। খোলা হচ্ছে হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের দোকান, পোশাকের দোকান। ভাটই হাটে আসা রাসেল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, লকডাউন দিয়েছে তো কি করব ভাই। সকালে মানুষ হাটে পেয়াজ আনছে। পেয়াজ আনছে তাই কিনছি। একটু ভীড় হচ্চে কিছু তো করার নেই। চা দোকানী হাসান আলী বলেন, ভাই পেটের দায়ে দোকান খুলিছি। লকডাউন চললেও কিছু করার নেই। ছবি তুলে আমার আবার বিপদে ফেলেন না। দোকান না খুললি চলব কি করে। মাস্ক পরেন নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কত সময় মাস্ক পরে থাকবো। দোকান চালাচ্ছি তাই খুলে রাখছি। আবার পরবানে। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের পোস্ট অফিস মোড়, মুজিব চত্বর, আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরে চলাচলকারীদের থামিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। বিনা কারণে বাইরে বের হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা বলেন, লকডাউন কার্যকরে জেলা শহরসহ ৬ টি উপজেলায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত দুই দিনে জেলায় ৮৬ টি মামলায় ৪৩ হাজার ৭’শ ৫০ টাকা জরিমারা করা হয়েছে। তাছাড়া লকডাউনে জরুরী প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ঝিনাইদহে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ৬, নতুন আক্রান্ত ২৮৯ জন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে আবারো বাড়তে শুরু করেছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৬ জন। এছাড়াও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৯জন। সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম জানান, শনিবার সকাল ৮ টা থেকে রোববার সকাল ৮ টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনায় ২ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ২৪ ঘন্টায় আসা ৭’শ ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২’শ ৭৯ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ৩৮ দশমিক ৯১ ভাগ। আক্রান্তদের মধ্যে সব থেকে আক্রান্তের সংখ্যা সদর উপজেলায় ১৫৪ জন। এছাড়াও শৈলকুপায় ১৫ জন, হরিণাকুন্ডুতে ১৮ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪৯ জন, কোটচাঁদপুরে ৩৫ জনও মহেশপুরে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাড়ালো ৭ হাজার ১’শ ৫ জনে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: হারুন অর রশিদ জানান, হঠাৎ করেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ বেড়েছে। গত ২ দিন হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেশি হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৮৭ জন। সেখানে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০৬ জন।
আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও সামাজিক দ্বন্দ্বের জের ধরে খুন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দামুকদিয়া গ্রামে রোববার রাতে রাশিদুল ইসলাম মৃধা (৪৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় দামুকদিয়া গ্রামের ইউসুফ মোল্লার ছেলে ঝন্টু মোল্লা আহত হন। এই হত্যার জন্য আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপকে দায়ী করে নিহতের ভাতিজা আজমীর শরীফ জানান শুক্রবারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রামে মারামারি হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আজ রোববার রাতে শৈলকুপা থানায় বৈঠকের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাকেন। ওসির মীমাংসা বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য নিহত রাশিদুল ইসলাম মৃধাসহ তার লোকজন রওনা দিলে পথিমধ্যে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বকুল ও জাহিদের নেতৃত্বে দুস্কৃতিকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। রাতের আধারে তারা রাশিদুল ইসলাম ওরফে উকিল মৃধাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত উকিল মৃধা আওয়ামী লীগের মন্নু-নায়েব গ্রুপের সমর্থক বলে তার স্ত্রী মনোহরপুর ইউনিয়ন এর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তানিয়া খাতুন জানান। শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও সামাজিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
কোরবানী ঈদে শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করল স্বামী
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কোরবানির ঈদে শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত না দেওয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার পর ঘরে ঝুলিয়ে রেখেছেন স্বামী। শনিবার রাতে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সাথী খাতুন। তিনি একই গ্রামের ফজলু ম-লের স্ত্রী। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন। সাথী খাতুনের বাবা একই ইউনিয়নের ভাটবাড়িয়া গ্রামের নজরুল ম-ল জানান, সাথীর স্বামী ফজলু ও শ্বশুর বারিক ম-ল মাদকাসক্ত। তার মেয়ের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই সাথীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন ফজুলসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তিনি আরো জানান, কোরবানির ঈদে আর্থিক অনটনের কারণে জামাইকে দাওয়াত দিতে পারেননি তিনি। এরই জেরে শনিবার দিনে ও রাতে তার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন ফজলুর বাবা-মা। এতে সাথী মারা যান। মৃত্যুর পর আত্মহত্যার নাটক সাজাতে ঘরের বারান্দায় তার মেয়েকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। রোববার সকাল ৭টার দিকে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান তিনি। ঘটনার পর পরই জামাই ফজলু ও ফজলুর বাবা বারিক ম-লসহ বাড়ির সবাই পালিয়ে যান। সাথীর মেয়ে শারমীন জানায়, শনিবার সকালে তার দাদা-দাদি মায়ের বুকের ওপর উঠে নির্যাতন করে। তখন থেকেই তার মা আর কথা বলতে পারেননি। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাথী ও তার স্বামী ফজলুর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের কালো দাগ ও গলায় রশির চিহ্ন পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শহীদদের স্মৃতি চিহ্নই মুছে দিল ঝিনাইদহের গণপূর্ত বিভাগ
ঝিনাইদহ :: ভাঙ্গা হয়েছে ঝিনাইদহ শৈলকুপার কামান্না ট্রাজেডির ২৭ বীরসেনাদের গণকবর। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে কামান্না হাইস্কুল বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান। যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে শৈলকুপার বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ। অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা বিএম লুৎফর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নাম পরিচিতি স্পষ্ট একটি গণকবর কখনোই বধ্যভূমি হতে পারেনা, তাছাড়াও যাঁদের স্মৃতি রক্ষায় স্তম্ভ নির্মান হচ্ছে তাদের কবরের চিহ্নই মুছে ফেলা খুব দুঃখজনক এবং রীতিমত অসম্মানের। তাঁর মতে নকসার মধ্যেই স্থায়ী কবরের সীমানা নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন ছিল অথবা কবর আলাদা রেখে কমপ্লেক্স নির্মান করলে ভাল হতো। এখন যা হলো ভবিষ্যত প্রজন্ম এর ইতিহাস বিকৃত করতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তবে অভিযোগ ওঠায় আবাইপুর গণকবরটির প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার পর সেখানে নির্মাণ কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। গণকবর দুটির মধ্যে আবাইপুরে থাকা বহুপূরনো বড় বড় মেহগনি, নারিকেল গাছ ও কামান্না’র আম গাছ টেন্ডার ছাড়াই কর্তন হয়েছে কিনা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, স্থান ও ডিজাইন বুঝে দেওয়ার পর কাজ শুরু হয়েছে, কবরের স্মৃতিচিহ্ন রাখার বিষয়ে কোন কিছুই আদেশ নিষেধ করা হয়নি বলেই কবর ভেঙ্গে উপরিভাগসহ জায়াগা নিয়ে গণপূর্তের আদেশে কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভের কাজ কামান্না প্রায় শেষ আবাইপুর শুরু হতে যাচ্ছে। ঢাকার এসএ কর্পোরেশন ও কুষ্টিয়ার গ্যালাক্সি এসোসিয়েট নামে দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজ পেয়েছে। সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী মন্টু জানান, প্রতি বছর শহীদদের স্মরনে সেখানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়ে থাকে এছাড়াও অনেক পথচারী কবর জিয়ারত করে থাকে। এখন কবরের চিহ্ন না থাকায় স্বাভাবিকভাবে পথচারীরা বীরমুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করবে বলে মনে হয়না, তাঁর মতে গণ কবরের নির্দিষ্ট স্থান ফাঁকা রেখে নতুন স্থাপনা তৈরির প্রয়োজন ছিল।