শুক্রবার ● ৩০ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » করোনায় ঝিনাইদহ জেলায় মোট ২৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় ঝিনাইদহ জেলায় মোট ২৬৩ জনের মৃত্যু
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে মৃত্যু শোকে আহাজারি বাড়ছে। ভারি হচ্ছে পরিবেশ। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের হিসাব। করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর থেকে এই প্রথম এই রোগে মৃত্যুর খবর শুনে মানুষ আৎকে উঠলেও এখন প্রতিদিন ৭/৮ জন করে এই রোগে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর খবরে মানুষ আর তেমন বিচলিত নয়। খবরগুলো নিজেদের ফেসবুকের টাইম লাইনে দিয়েই শেষ। জানাচ্ছেন শোক। কিন্তু যে পরিবারের একজন উর্পজনক্ষম মানুষটি চলে যাচ্ছে সেই পরিবারে হা-হুতাশ যেন কমছেই না। মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াাল থাবা ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্কর হচ্ছে দিনকে দিন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহের ৬৭টি ইউনিয়নে হুহু করে মৃত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৬ মাস পার হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছে ২৬৩ জন। এই মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে গড়মিল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআরের তথ্য মতে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ঝিনাইদহে মৃত্যু দখোনো হয়েছে ২৫৮ জন। বৃহস্পতিবার মারা গেছে আরো ৫ জন। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬০ জন হলেও ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে ১৯৪ জনের কথা। বাকী ৬৬ জনের কথা উল্লেখ নেই। অন্যদিকে ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লাশ দাফন করেছে ১৫৭ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের করোনার নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ২৮ জুলাই পর্যন্ত দেশে সর্বমোট মৃত ২০ হাজার ১৬ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চসংখ্যক ৯ হাজার ২৭৩ জন রয়েছেন। আর সর্বনি¤œ ময়মনসিংহ বিভাগে ৫২২ জনের। খুলনা বিভাগের সর্বমোট দুই হাজার ৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বাগেরহাটে ১৯১ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২০৬ জন, যশোরে ৪০৫ জন, ঝিনাইদহে ২৫৮ জন, খুলনায় ৫২২ জন, কুষ্টিয়ায় ৬০১ জন, মাগুরায় ৯০ জন, মেহেরপুরে ১৫৮ জন, নড়াাইলে ১২২ জন এবং সাতক্ষীরায় ৯২ জন রয়েছেন।
ঝিনাইদহে মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
ঝিনাইদহ :: সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহে চলমান কঠোর লকডাউনে মানা হচ্ছে না কোন নির্দেশনা। আইন অমান্য করে বিনা কারণে নানা অজুহাতে বের হচ্ছে মানুষ। সড়কেও বেড়েছে ছোট ছোট যানচলাচল ও লোকসমাগম। শহরের অধিকাংশ দোকান পাট আংশিক খোলা রেখে কেনাবেচা করছে। সকালে শহরের বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। নিদের্শনা অমান্য করে করা হচ্ছে চলাচল। এদিকে হাট ও বাজারগুলোতে গাদা-গাদি করে কেনা-বেচা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। অনেকেই পড়ছেন না মাস্ক। যে কারণে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা ও করোনায় আক্রান্তের হার জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মোড়ে মোড়ে চেক পেস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হচ্ছে তবুও তাদের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম জানান, গতকাল বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা পজেটিভ নিয়ে ৫ জন মারা গেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো ১৯৪ জনে। এছাড়াও নতুন করে ২৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ২৯ দশমিক ৪ ভাগ। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রোধ করা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারি দেওয়া নির্দেশনা না মেনে বিনা কারণে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি আর স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমন দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ বা প্রশাসন কঠোর হলেও মানুষ যদি সচেতন না হয় তবে করোনার সংক্রমন রোধ করা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা বলেন, কঠোর লকডাউন কার্যকরে জেলা ও উপজেলায় ১১ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত সচেতনতামুলক প্রচার প্রচারণা করা হচ্ছে।
অসুস্থ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেন ঝিনাইদহের তদন্ত ওসি এমদাদুল হক
ঝিনাইদহ :: ৪-৫ দিন আগে স্বজনদের ফেলে যাওয়া ৫৬ বছর বয়েসি এক অসুস্থ ও মানসিক বৈকল্যসম্পন্ন শোভা বিশ^াসকে উদ্ধার করে বুধবার রাতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন সদর থাানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত এমদাদুল হক। ওই নারি এখন হাসপাতালের মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসাদানকারি ব্যক্তিদের সাথে কিছুটা স্বাভাবিক কথাবার্তা বললেও তিনি খুুুুবই দুর্বল এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন। সদর থাানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত এমদাদুল হক জানান, লোকমুখে খবর পেয়ে তিনি শহরের ভুটিয়ারগাতি এলাকার মাহমুদ হাসান আলিফ নামের এক ব্যবসায়ির নির্মাণাধিন ছয়তলা একটি বাড়ির নিচ থেকে সংজ্ঞাহীন ওই নারিকে উদ্ধার করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহয়োগিতায় তিনি শোভা বিশ^াসকে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। আলিফ জানান, খবর পেয়ে নির্মাণাধিন ওই বাড়িতে এলে প্রতিবেশিরা তাকে জানিয়েছেন ৪-৫দিন আগে কে বা কারা এসে তাকে ওখানে রেখে গেছেন। সেই থেকে কেউ তাকে খাবার দেয়নি, খোজ করেনি। ঝিনাইদহ সদর হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক (ইএমও) ডা. নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন ভর্তির সময় তিনি এতটাই দুর্বল ছিলেন যে তেমন কিছুই বলতে পারছিলেন না। বেশ কিছুদিন অনাহারে থাকা এবং কিছুটা মানসিক সমস্যাক্রান্ত শোভা বিশ^াস এখন কথা বলছেন, অস্পষ্ট গলায় অবিবাহিত ওই নারি তার বাবার নাম তারক চান্দ্র দাস এবং বাড়ি রামপালের গিলেতলা বলে উল্লেখ করছেন।
ভোটা তালিকায় ৩ বছর আগে ‘মৃত’ ঝিনাইদহের আনোয়ার বাঁচার জন্য টিকার নিবন্ধন করতে চান
ঝিনাইদহ :: ভোটা তালিকায় তিন বছর আগেই ‘মৃত’ তিনি। এখন বাঁচার জন্য টিকা দরকার। কিন্তু ভোটার তালিকায় তার নাম মৃত তালিকায় থাকায় টিকার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছেন না। ঝিনাইদহ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাঞ্চন নগর গ্রামের মৃত শেখ মোহাম্মদ আলী ছেলে এসএম আনোয়ার হোসেন দিব্যি জীবিত থাকলেও তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। তার এনআইডি নং ৮২৪৪৯৬১২৮৩। ফলে জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় কোন কাজই তিনি করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি এ প্রতিনিধির কাছে আনোয়ার জানান, নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজে তিনি মৃত। কিন্তু বাঁচান জন্য এখন তার দরকার টিকার রেজিষ্ট্রেশন। এসএম আনোয়ার ছোট-খাটো ঠিকাদারি কাজ করেন। করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন তিনি ‘মৃত’। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, এসএম আনোয়ার নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেইজে ২০১৮ সালের আগ থেকেই ‘মৃত’। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে পৌরসভা থেকে স্মার্টকার্ড গ্রহণ করেন আনোয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম তার এলাকার ডাটাবেইজ তৈরী করেন। তিনিই তাকে ‘মৃত’ দেখিয়েছেন। তবে শরিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাড়ির লোকজনের দেওয়া তথ্য নিয়ে তিনি ফর্ম পূরণ করেছেন। ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এরকম করা হয়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মশিউর রহমান জানান, কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল হতেই পারে। তবে আবেদন করে সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। এসএম আনোয়ার জানান, তার পরিচয় পত্রে এতোবড় ভুল থাকার কারণে শতবার চেষ্টা করেও টিকা নিবন্ধন করা যায়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবির জানান, সরকার ৮০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় আনার চিন্তা করেছে। সে লক্ষ্যে নিবন্ধন না করে শুধু মাত্র জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার লিখে রেখে টিকা দেওয়া ব্যবস্থা করছে। এদিকে নির্বাচন অফিসের দৃষ্টিতে এটা খুব ছোট সমস্যা হলেও এমন সমস্যা নিয়ে অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারও বাপের থেকে ছেলে দুই বছরের বড়। কারো নামের বানান ভুল, সার্টিফিকেটে এক নাম জাতীয় পরিচয় পত্রে আরেক নাম, প্রকৃত বয়সের চেয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স ১৫/২০ বছর কম এমন সমস্যা নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঝিনাইদহ নির্বাচন অফিসে ভীড় করছে মানুষ। ভুক্তভোগীদের দাবি সরজমিনে না গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করায় এমন বড় দাগের ভুলের মাশুল দিচ্ছে গ্রামের সাধরণ মানুষ।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহ জর্জ কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী’র চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ঝিনাইদহ :: মহামারী করোনা ভাইরাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৭-১৯৯৮ সেশনের আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্র। ঝিনাইদহ জজ কোর্টের তরুন আইনজীবী এ্যাডঃ বাচ্চু মিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২১/৭/২১ তারিখে ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯/৭/২১ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ৯.২৫ মিনিটে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত এ্যাডভোকেট বাচ্চু মিয়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১২ নং সুরাট ইউনিয়নের বানিয়াবহু গ্রামের কৃতি সন্তান ও ঝিনাইদহ সাধু প্রতিরাম স্কুলের স্কাউটের সাবেক শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কারের জামাতা। তিনি দির্ঘদিন ঝিনাইদহ আদর্শপাড়াই বসবাস করতেন। তার মৃত্যুতে ঝিনাইদহ জেলা উকিল বারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।