রবিবার ● ১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাঙামাটিতে এক বছর পর ৪ আসামীর পক্ষ নিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইনে পুলিশের চার্জসীট : বাদির ক্ষোভ প্রকাশ
রাঙামাটিতে এক বছর পর ৪ আসামীর পক্ষ নিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইনে পুলিশের চার্জসীট : বাদির ক্ষোভ প্রকাশ
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলায় গ্রীণ হিল এনজিও পরিচালিত সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখার একজন নারীকে নানাভাবে অনলাইনে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করার অপরাধে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করার প্রায় এক বছর পর পাঁচজন অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনের পক্ষ নিয়ে একজন আসামী (নকুল চন্দ্র শর্মা)কে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছেন তদন্তকারী অফিসার ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ মামলা তদন্ত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) আদালতে জমা দেয়ার আইনী বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিন্তু এধরনের একটি চাঞ্চল্যকর মামলার চার্জশীট (চুড়ান্ত অভিযোগপত্র) ৩৫০ দিন পর মামলার আইও আদালতে জমা দিতে সক্ষম হয়েছে।
বরকল থানা এফআইআর নং-০১ তারিখ ২২ জুন-২০২০ এবং রাঙামাটি কগনিজেন্স আদালতের মামলা নং- ২০৯/২০২০।
এফআইআর সুত্রে জানাযায়, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রটি প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলেক্টনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এছাড়া খাবারে নেশা জাতীয় দ্রব মিশিয়ে তা পান করিয়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারন এবং ঐ ভিডিও সহ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করায় রাঙামাটি জেলার বরকল থানায় গত ২২ জুন-২০২০ ইংরেজি তারিখ ভুক্তভোগি রাখী খীসা বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলা অভিযুক্তরা আসামীরা হলো, ১। নকুল চন্দ্র শর্মা, পিতা-মৃত সুধন চন্দ্র শর্মা, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা, ২। মো. সোহেল ৩। মো. সুমন পারভেজ উভয়ের পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), ৪। মো. ইউছুফ রানা, পিতা-মৃত আলি আহম্মদ, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল ও ৫। অমর শান্তি চাকমা, পিতা- চিরনজীব চাকমা, মাতা- ইন্দ্রদেবী চাকমা, গ্রাম-কুসুমছড়ি, সুভলং, বর্তমান ঠিকানা- গ্রাম-ধনুবাগ-মাষ্টার পাড়া (সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
গত ২৭ ডিসেম্বর-২০২০ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মজ্জারটেক এলাকার সনজিত সেলুন থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যারা আসামী নকুল চন্দ্র শর্মা (৩১) কে আটক করে চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশী পিবিআই কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামীর তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর পিবিআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) বরকল থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন।
পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর-২০২০ রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় এনে মামলার নথি প্রস্তুত করে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আসাদ উদ্দীন আসিফ এর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেন।
গত ৬ জানুয়ারি-২০২১ বুধবার দুপুর ২টায় রাঙামাটি জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বেলাল হোসেন ভার্চুয়াল আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রিমান্ড আবেদন শুনানীর মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামী নকুল চন্দ্র শর্মাকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার আলামত উদ্ধারের জন্য ২ দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন।
এ মামলার মুল হোতা নকুল চন্দ্র শর্মা ২৮ ডিসেম্বর-২০২০ থেকে রাঙামাটি জেলা কারাগারে আটক রয়েছে।
এ মামলার বরকল থানার তদন্তকারী অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর বিপি-৭৪৯৪০০৭৯৭৩, মো. কামাল হোসেন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, “মামলার তদন্তকালে ও সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে আসামীর দখল হইতে ট্যাব, মোবাইল, মেমোরী কার্ড ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি গ্রহণ পূর্বক প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬১ ধারা মতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা প্রেরন করি এবং ফরেনসিক পরীক্ষার মতামত সংগ্রহ করি। ফরেনসিক পরীক্ষক জব্দকৃত আলামত (ইলেকট্রনিক ডিভাইস) পরীক্ষা করে মতামতে উল্লেখ করেন যে, মেমোরী কার্ডের “নকুল চন্দ্র শর্মা” Download Folder এ তন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রেরিত নমুনা ছবির ভিকটিমের ০৪ (চার) টি নগ্ন ভিডিও রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন আসামী নকুল চন্দ্র শর্মার হেফাজত হইতে জব্দকৃত আলামত বাদির দেওয়া ফেসবুক আইডির তথ্য ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট দৃষ্টিতে ১। মো. সোহেল, ২। মো. সুমন পারভেজ, ৩। ইউছুফ রানা ৪। অমরশান্তি চাকমা দের ঘটনার সাথে জরিত থাকার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই বলে মতামত দেন এবং এ মামলার আইও উল্লেখিত এই চারজনকে এই মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রার্থনা।” এজাহার নামীয় ১ নং আসামী নকুল চন্দ্র শর্মা (৩২) পিতা মৃত সাধন চন্দ্র শর্মা, গ্রাম- হরিনা বাজার এলাকা, থানা বরকল, জেলা রাঙামাটি বাদির নিকট হইতে সত্তর হাজার টাকা হওলাত নেয়ার কথা স্বীকার করে, তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণে ও ফরেনসিক মতামতসহ ঘটনার পরিপাশির্^কতায় বাদিনীর অজান্তে বাদিনীর নগ্ন ভিডিও বিবাদীর মোবাইলে সংরক্ষিত মেমোরী ডিভাইসে সংরক্ষনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায়, বিবাদী পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন- ২০১২ এর ৮(২) ধারায় অপরাধ করিয়াছে বিধায় বর্ণিত আসামী নকুল চন্দ্র শর্মার বিরুদ্ধে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযোগপত্র দাখিল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৪ (১)/২৫(২)/২৯/৩০/৩১(২)৩৫(২) ধারার অভিযোগ অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রমানিত না হওয়ায় অত্র ধারার দায় হইতে অব্যাহতি প্রদানের মতামত ব্যক্ত করে চুড়ান্ত আদেশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে আসামী নকুল চন্দ্র শর্মা (৩২) জাতীয় পরিচয়পত্র (৮৪১২১৬৩২১০৪৭৯) এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে বরকল থানার অভিযোগপত্র নং-১৬ তারিখ ০৭/০৬/২০২১ ইংরেজি তারিখ প্রতিবেদন দাখিল করিলাম।”
এবিষয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখার ভারপ্রাপ্ত শাখা ম্যানেজার মামলার অপর অভিযুক্ত আসামী অমর শান্তি চাকমা মুঠোফোনে বলেন, আপত্তিকর ভিডিওটি মুলতঃ মাঠকর্মী মৌসুমী চাকমার মোবাইল থেকে সূর্যের হাসি ক্লিনিক এর প্রধান কার্যালয় গ্রীণ হিলে পাঠানো হয় এছাড়া মামলার তদন্তকারী অফিসার আইও তার (অমর শান্তি চাকমা) মোবাইল ফোনটি জব্দ করে আইও জিম্মায় নিয়ে গেছেন এবং আপত্তিকর ভিডিওটি আমার মোবাইলেও ছিলো যা পুলিশ খুজে পেয়েছেন, বলে স্বীকার করে অমর শান্তি চাকমা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মামলার অভিযোগপত্রে অমর শান্তি চাকমা বাদ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এ মামলার তদন্তকারী অফিসার তার অভিযোগপত্রে অমর শান্তি চাকমার বিষয়টি গোপন করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে মামলার বাদি বলেন, বরকল থানার তদন্তকারী অফিসার অভিযোগপত্র থেকে যে চার আসামীর নাম বাদ দিয়েছেন এসব আসামীদের সাথে পুলিশের শখ্যতা ও গোপন আতাত রয়েছে। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আসামীরা দাপটের সহিত এলাকায় চলাফেলা করছে। একবারের জন্য পুলিশ এসব আসামীদের জিজ্ঞাবাদ পর্যন্ত করেনি। বাদি রাখি খীসা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার আইও অভিযোগপত্র দিয়েছেন পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে কিন্তু সত্তর হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেননি।
বাদি বলেন, আইন সকলের জন্য সমান আমি নিরাপেক্ষ ভাবে তদন্তের মাধ্যমে সকল অপরাধিরাদের শাস্তি চাই। পুলিশ এ মামলার তদন্তে পক্ষপাতিত্ব করেছে এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে। তিনি তার আইনজীবির মাধ্যমে আদালতের কাছে এ মামলার পূর্ণতদন্তের দাবি করবেন বলে জানান।