সোমবার ● ৯ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » অধ্যক্ষের কারণে বেতন পাচ্ছে না ৯৮ জন কর্মচারী
অধ্যক্ষের কারণে বেতন পাচ্ছে না ৯৮ জন কর্মচারী
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ সরকারী মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়ম, দূনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে কলেজের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ এনে কলেজ গভর্নিং কমিটির সদস্যরা তাকে বহিস্কার করেছেন। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্না রানী সাহা তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূনিতির সত্যতা পান। কলেজের ৯৮ জন শিক্ষক কর্মচারির বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রমানের খামখেয়ালি পনার কারনে। ২০১৬ সালের ২৪ জুন কলেজের গভর্ণিং বডি প্রথমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পক্ষান্তরে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান কে চুড়ান্ত বরখাস্ত করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে পত্র প্রেরন করেন এবং ২০১৬ সালের ২৪ জুন থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহন করেন আব্দুল মজিদ মন্ডল। দূনীতিবাজ মাহবুবুর রহমান হাইকোটে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান রিট মামলার আদেশ, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ৬/৫/২০২১ তারিখের ৪৩৫৯৮(৪) নং স্বারকের পত্র, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ৩১৭/১৯ তারিখের ২২০/১(৯) স্বারকের নির্দেশে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ৭/৮/২০১৯ তারিখের ৩২৩২/৮ স্বারকে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ৮/৮/২০১৯ তারিখে সরকারী মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্না রানীর নিকট যোগদান পত্র দাখিল করেন। দাখিলকৃত কাগজ পত্র দেখে সভাপতির সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে সভাপতি তাকে যোগদান না করিয়ে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রেরন করেন। এ ছাড়া সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুুর রহমান যোগদানপত্রের সাথে সংযুক্ত হাইকোর্টের রায়ে, কলেজের নামকরন মিল না থাকা, ভুয়া স্বাক্ষর করে কাগজপত্র দাখিল করেন। কাগজপত্র দেখে সভাপতির সন্দেহ হলে তিনি যোগদানপত্র গ্রহন করেননি। সংশোধিত করে যোগদানের জন্য লিখিত আদেশ দেন। সাবেক অধ্যক্ষ হাইকোটে মামলা করার আদেশের রায় তার বিপক্ষে যায়। কিন্তু তিনি কাগজপত্র জাল জালিয়াতি করে, স্বাক্ষর জাল করে যোগদান করতে আসে। অদ্যবধি ২০২১ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সংশোধিত কাগজ পত্র দাখিল করতে ব্যার্থ হওয়ায় তিনি যোগদান করতে আসে নাই। তারই কারনে অত্র কলেজের ৯৮ শিক্ষক কর্মচারি বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে তিনি বিভিন্ন সময়ে কলেজে উৎকোচ গ্রহন করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কলেজের আয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ২২ লাখ টাকা। ঝিনাইদহ ৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ২০১৬ সালের ২০ জুলাই সুপ্রিম কোটে একটি রিট করেন যার নং ১২২৬১/১৯। সেই রিটের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোটে সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান রায়ের বিরুদ্ধে আফিল দায়ের করেন। দায়েরকৃত আফিল অদ্যবধি পর্যন্ত শুনানি হয়নি। সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি যোগদান করেন। যোগদানের এক বছর পর তার বকেয়াসহ তার এমপিও হয়েছিল ৯ কোডে। দুই বছর পরে তার এমপিও হয়েছিল ৪ কোডে। কিন্তু যোগদানের পর থেকে তিনি পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ৪ কোডে প্রদত্ত ২০% বেতন ছাড়া ও অধিক হারে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ১ লাখ ৩ হাজার ১৮০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করেন। অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আত্মসাতকৃত টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অনার্স ভবন মেরামত কাজের বাবদ ১৫ লক্ষ ২২ হাজার টাকা, ২০১১ সালের ছাত্র ছাত্রী ভর্তি বাবদ ৫৫ হাজার টাকা, যাতায়াত বাবদ ৫৫ হাজার টাকা, সোনালী ব্যাংকে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। ২০১৫ সালে কলেজে আয় দেখানো হয়েছে ৯১,৫৮৫৮৭ টাকা, ব্যায় দেখানো হয়েছে ৮৫০৩৭৯৩ টাকা। কিন্তু অবশিষ্ট ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯৪ টাকার তিনি আত্মসাত করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মাহবুবুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। যেসব মিথ্যাচার করা হয়েছে তার কোন সত্যতা নেই।