সোমবার ● ১৬ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » দেশ ছাড়লেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি
দেশ ছাড়লেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি
তালেবান দখলে চলে গেছে গোটা দেশ। অবশেষে রাজধানী কাবুলও। এ পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে দেশে ছেড়ে পালালেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। বর্তমানে তিনি তাজিকিস্তানে অবস্থান করছেন। রবিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়াটার্স।
গত তিন মাসে একের পর এক শহর দখল করেছে তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকেও অবরুদ্ধ করে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে রবিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলের দিকে রক্তপাত এড়াতে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ ঘোষণা আসে আফগান সরকারের তরফ থেকে। বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মিরজাকওয়াল স্থানীয় টোলো টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তালেবান কাবুলে হামলা করবে না। এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগ করবেন। তবে কাবুল ঘেরাওয়ের পরই দেশজুড়ে গুঞ্জন চলতে থাকে প্রেসিডেন্ট দেশ ত্যাগ করতে পারেন। সেই গুঞ্জনই এখন সত্যে পরিণত হলো।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আশরাফ গনি রোববার সন্ধ্যার দিকে দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট অফিস বলছে, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ আশরাফ গনির যাত্রাপথ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হবে না।
রবিবার সকালে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদের দখল নেয় তালেবান। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই তালেবান শহরটির দখল নিতে সক্ষম হয়। জালালাবাদ দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২৮টির রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যায়।
এরআগে বিকেল ৪টার দিকে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আশরাফ গনি।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, তালেবানের উপপ্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। তালেবানের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বর্তমানে মোল্লা আবদুল গনি বারাদার দলটির রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও অস্ত্র বিরতি নিয়ে দোহার আলোচনাকারী তালেবান প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের একজন হিসেবে পরিচিত মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। পাকিস্তানের দক্ষিণ করাচিতে ২০১০ এ তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও ২০১৮ সালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তালেবানের অস্থায়ী সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মিরজাকওয়াল।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় এক টুইটে তিনি বলেন, তালেবান মুখপাত্র সুহায়েল আফগানিস্তানে ‘আগ্রাসনকারীদের ক্ষমা’ ঘোষণা করেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পদত্যাগের পর আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার অন্তর্বতীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আফগান গণমাধ্যমে খবর এসেছে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক আলী আহমাদ জালালি।
জালালি ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। আর জার্মানিতে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
এদিকে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর আতঙ্কিত অধিবাসীরা কাবুল ছাড়তে শুরু করেছেন। বিশেষ করে দেশটির কর্মজীবী নারীরা বেশ আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। কাবুলে এখন বোরকা কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্তে ভীড় করেছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ আফগান্সিতানের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানের ‘প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন’ তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার
আফগানিস্তানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। তালেবান যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে রাজধানী কাবুল ঘিরে ফেলেছে। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তালেবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।
সূত্র বলছে, তালেবানের এই নেতা রোববার সকালে আশরাফ গনি এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির হন।
এর আগে শনিবার রাতে আফগানিস্তানের উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। রোববার সকালে জালালাবাদ দখলের মাধ্যমে বর্তমান আফগান সরকারের চূড়ান্ত পতন শুরু হয়। এর পর তালেবান যোদ্ধারা দলে দলে রাজধানী কাবুলে ঢুকতে শুরু করেন।
তবে তালেবান যোদ্ধারা সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা মেনে রাজধানীর প্রবেশ পথের গেটে গেটে অবস্থান নেন। তালেবানের নেতৃত্ব ঘোষণা দেন, শক্তি প্রয়োগ করে তারা রাজধানী শহর দখল করতে চান না।
এর পরেই মার্কিন কূটনীতিবিদ এবং ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তালেবান নেতৃত্বকে। মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন আশরাফ গনি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, তালেবান নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হয়েছেন। তবে তালেবান কিংবা আফগান সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত না।