মঙ্গলবার ● ১৭ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » তালেবানের আয়ের উৎস আফিম ব্যবসা
তালেবানের আয়ের উৎস আফিম ব্যবসা
আফগানিস্তানে ১৫ বছর ধরে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানের আফিম, হেরোইন ব্যবসা থেকে তালেবানের মুনাফা অর্জন বন্ধ করা। এই অভিযানে পপি চাষ নির্মূল থেকে শুরু করে সন্দেহভাজন ল্যাবে বিমান হামলাও চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের অবসানের পথে থাকলেও আফগানিস্তান এখনও বিশ্বের বৃহত্তম অবৈধ আফিম সরবরাহকারী। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, লাখো মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া, বিদেশি সহযোগিতা হ্রাস, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের স্থানীয় বাজারে ব্যয় কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের কারণে আফগানরা বেঁচে থাকার জন্য মাদক ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
তাদের মতে, এই নির্ভরশীলতা আরও অস্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে। কারণ তালেবানসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী, আদিবাসী নেতা ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তারা মাদকের মুনাফা ও ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তান বিশৃঙ্খলায় পতিত হলে অবৈধ আফিম উৎপাদন আরও বেড়ে যেতে পারে। যা তালেবানের জন্য সম্ভাব্য আশীর্বাদ হতে পারে।
কাবুলে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংস্থার প্রধান সিজার গুডেস বলেন, তালেবানরা নিজেদের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে আফিম ব্যবসাকে বিবেচনা করে। বেশি উৎপাদন হলে মাদকের মূল্য কম ও আকর্ষণীয় হবে। ফলে তা একেবারে সহজে পাওয়া যাবে।
আফগানিস্তানে অবৈধ আফিমের ব্যবসা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন বাহিনী
রবিবার কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হলো সবচেয়ে আদর্শ মুহূর্ত যখন অবৈধ গোষ্ঠীগুলো নিজেদের অবস্থান সংহত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার আশায় পপি চাষ নিষিদ্ধ করে তালেবান। কিন্তু এতে তাদের জনরোষের মুখে পড়তে হয়। পরে তারা নিজেদের এই বদলে ফেলে অবস্থান
জাতিসংঘ সংস্থার মতে, গত চার বছরে আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারিতেও গত বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় তালেবান ও সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। যদিও অনেকেই তালেবানের ভূমিকার ব্যপ্তি ও মুনাফা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।
জাতিসংঘ ও ওয়াশিংটনের মতে, পপি চাষ থেকে শুরু করে, আফিম আহরণ, পাচার ও উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ‘কর’ সংগ্রহ করে তালেবান। মাদক ল্যাব থেকে পাচার থেকেও মুনাফা আসে গোষ্ঠীটির। আফ্রিকা, ইউরোপ, কানাডা, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক পাচার থেকে ফি আদায় করে তালেবানরা।
আফগানিস্তানে অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ে গবেষণা করা ডেভিড ম্যান্সফিল্ডের মতে, এসব মাদকের কিছু চালান কঠোর নিরাপত্তা থাকা সীমান্ত দিয়ে ইরানের পাচারকারীদের কাছে পাঠানো হয়।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাদক ব্যবসা থেকে ৪০০ মিলিয়নের বেশি মুনাফা অর্জন করেছে তালেবান।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিবেদনে একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে, তালেবানের বার্ষিক আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে অবৈধ মাদক থেকে।
ম্যান্সফিল্ডের মতে, অবৈধ আফিম থেকে তালেবানের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৪০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। এই অর্থ আসে মূলত আফিম উৎপাদন, হেরোইন ল্যাব ও মাদক পাচারের চালান থেকে লেভি সংগ্রহের মাধ্যমে। কিন্তু বৈধ আমদানি ও রফতানি থেকে ফি নিয়ে মাদকের চেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহ করে তালেবান যোদ্ধারা। সূত্র: আল জাজিরা।