মঙ্গলবার ● ৮ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » তুঁই আঁরে কিছু কিনি দিবা পল্লা
তুঁই আঁরে কিছু কিনি দিবা পল্লা
নারী দিবসে ‘পুরুষ ভাবনা’
অধ্যাপক আকতার চৌধুরী :: (৮ মার্চ ২০১৬ : কক্সবাজার ) আমার বউ গতকাল তার এক নিকট আত্মীয়কে দেখতে গেছে চট্টগ্রাম। তাই স্বাভাবিক কারণে বাসায় নেই। এদিকে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত ও অসম্মানিত নারীদের মুক্তির জন্য ১০৫ বছর আগে নারীরা নিজেদের অধিকারের জন্য যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল তার বিশেষ দিবস অাজ। ওমেন্স ডে বা নারী দিবস।
তাই আমার জীবনে বিশেষ নারী গুলোকে হ্যালো করব এটা ভেবে রেখেছি অনেক রাত থেকে।
অনেকের সাথে হাই হ্যালো হল। কলিগদের ফুল দিয়েও ওইশ করলাম।
কিন্তু আসল নারীকে ওইশ করতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে!
দুই চাটগাইয়া এক জায়গায় হলে যা হয় অার কি!
পরিবারে আমরা সাধারণত সন্তানদের সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলি।কিন্তু খুব ঘনিষ্ট বন্ধু বা কাছের কেউ হলে সমস্যাটা ভিন্ন রুপ মাত্রা নেয়।
এই যেমন , দুই চাটগাইয়া বন্ধু হলে কোন কথাই নেই ।
-দোস্ত কেমন আছিস !
এমনটা বলার বলার সাথে সাথে ডায়লগ ছাড়বে ।
-ওউড়া ফুড়ানি মারদ্দে নে!
-ছাবাইয়া কথা কত্তে শিখখছ । ইত্যাদি ইত্যাদি..।
আমারও একই অবস্থা। আমার বউও চাটগাইয়া, আমিও চাটগাইয়া।
তাই দুজনে সমানে চলে চাটগাইয়া ডায়লগ।
বউয়ের ক্ষোভ, কখনো তার সাথে রোমান্টিকভাবে কথা বলি না। কেন জানি মনে হয় , রোমান্টিকভাবে কথা বলাটা চাটগাইয়াদের জন্য একটু জঠিল ব্যাপার ।কারণ চাটগাইয়া ডায়লগগুলোকে নাটক বা হাস্য কৌতুকে এমনভাবে উপস্থাপনা করা হয় যেন এটা ফান করার উপাদেয় ভাষা!
যার কারণে কোন বিশেষ দিবসে রোমান্টিক হয়ে কথা বলা আর ফান করা একই কথা ।
আজকালকার চাটগাইয়া টিনেজরাও নিশ্চয় এভাষায় ভাবের আদান প্রদান করে না।
তবে প্রত্যেক ভাষার আলাদা মাধুর্যতা আছে। আছে রোমান্টিকতার আলাদা শব্দ ভান্ডার। কিন্তু শুদ্ধ ভাষার সাথে তুলনামূলক আলোচনায় সে মাধুর্যতা একটু বিব্রতবোধ করে।
আমার আরেকটা অভ্যাস আছে । অকপটে বলে ফেলি ।
যদি চা দেয়া হয় তার সাথে বিস্কুট থাকে আগে পরিবেশটা দেখে নিই। যদি দেখি পরিবেশ অনুকূলে অমনি বিস্কুটটা চায়ের মধ্যে চুবিয়ে খাই । এটা আগে চাটগাইয়াদের ক্ষেত্রে কমন ছিল। বিশেষ করে ‘বেলা বিস্কুট’ চুবিয়ে খাওয়া । এখন অনেকে সচেতন হয়ে গেছে । বাইরের কেউ থাকলে চুবিয়ে খায় না । তবে মনের ভেতরে খাওয়ার অপূর্ণতা থেকে যায় ।
যাক , আজকে আমার ভাষাতত্ত্ব মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।
দুপুরে কলেজে থাকতে বউকে রিং দিলাম।
হ্যালো…..
অপর প্রান্ত থেকে বউ-
-কি কঁঅনা ।
-হ্যাপি ওমেন্স ডে ।
-ওমা , ইবা আবার কি !
-আজিয়া বিশ্ব নারী দিবস।
-তয় আই ক্যান গইত্তাম।
আমি বললাম – ধূঁরু…. , তোয়ারে কিছু গইত্তাম কইদ্দে নয়।
-শুধু ওইশ গরিদ্দে।
বউকে একটু রোমান্টিক মনে হল। এর পরই সুরটা একটু মোলায়েম করে বলল
-ওওও…… বুইজ্জি ….. তুই আঁরে কিছু কিনি দিবা পল্লা , কি কিনি দিবা ইয়ান কঅ।
বুঝলাম আমি মাইনকা চিপায় আটকে যাচ্ছি। পে- স্কেলের আশায় অগ্রীম বাকি খাওয়া কলেজ মাস্টার!
অামি অবস্থা বেগতিক দেখে আস্তে করে লাইনটা কেটে দিলাম ।
আর মনে মনে ভাবলাম –
নারী দিবসে ‘পুরুষ নির্যাতন’!
হাজার হলেও নিজের নারী , কিছুতো খসাবেই । হা হা হা ।
তবে মনে মনে বলি – ভাইরে – পুরুষ দিবসটা কবে হবেরে….!
সেদিন হয়তো আমিও বলব
– তুঁই আঁরে কিছু কিনি দিবা পল্লা !
হয়তো সেদিন সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক : সম্পাদক , কক্সবাজার নিউজ ডটকম