

বুধবার ● ২৫ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » ঢাকা » ঢাকা, ফুলবাড়ীসহ সারাদেশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি
ঢাকা, ফুলবাড়ীসহ সারাদেশে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল ও বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জির দেশ ত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত জনতার ওপর গুলি চালায় পুলিশ ও বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) চাঁদপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম (২২), বারকোনা গ্রামের শিশু আমিন (১০) ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ঝড়ারপাড় গ্রামের সালেকিনের (১৫) মৃত্যু হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী। এছাড়া তিন শতাধিক মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি দেশব্যাপী এ দিনটিতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে :
সকালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শোক র্যালি ও সকাল ১০ টায় স্মৃতিস্তম্ভে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
ঢাকায় সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশ।
সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় কমিটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে অনলাইন আলোচনা সভা।
সারাদেশে ও বিদেশে এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট বিকেল ৩টায় ফুলবাড়ী উপজেলার ঢাকা মোড়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত এ কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন।
এরপর ফুলবাড়ী শহরে সাধারণ জনতা বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে এশিয়া এনার্জি কোম্পানির অফিসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ছোট যমুনা ব্রিজের উপর বিডিআর ও পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে।
এতে চাঁদপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম (২২), বারকোনা গ্রামের শিশু আমিন (১০) ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ঝড়ারপাড় গ্রামের সালেকিনের (১৫) মৃত্যু হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৫০ জন মানুষ। এছাড়া তিন শতাধিক মানুষ আহত হন।
এ ঘটনার পরের দিন ফুলবাড়ীর সর্বস্তরের জনতা প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীরা গাছের গুঁড়ি দিয়ে রেলপথ ও রাজপথ বন্ধ করে দেয়। সারা দেশের সঙ্গে ফুলবাড়ীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অচল হয়ে পড়ে ফুলবাড়ী। শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এদিন বিডিআর ও পুলিশ কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে নারীদের লাঞ্ছিত করে। সকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জনতার মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ফুলবাড়ী শহর। শহরের সমস্ত দোকানপাট, ব্যাংক-বীমা, অফিস আদালতের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২৮ আগস্ট সকালে বিডিআর প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা এশিয়া এনার্জির দালালদের বাড়িতে ও অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করে। ২৯ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দায়িত্ব নিয়ে দুই মন্ত্রী খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু ও রাজশাহী সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এমপি জাতীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনার জন্য দিনাজপুরে আসেন। কিন্তু সেদিন কোনো আলোচনা হয় না। পরদিন ৩০ আগস্ট জাতীয় কমিটির সাথে পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা শেষে সরকার এশিয়া এনার্জিকে প্রত্যাহার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণসহ ছয় দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত করতে বাধ্য হয়। ঐ ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। জাতীয় কমিটি ও দাবি বাস্তবায়নের সংগ্রাম করে চলেছে।