বুধবার ● ৯ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আজ মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশ বিধুবাবুর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী
আজ মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশ বিধুবাবুর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :: (৯ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.১০মিঃ) আজ ৯ই মার্চ ২০১৫ইং মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি পুরুষ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, কালজয়ী ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট সমাজ সেবক সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত বিধুবাবুর ২য় মৃতু্যবার্ষিকী ৷
দেশকে শত্রুমুক্ত করতে রাজাকার ,আলবদল, আলশামস বাহিনীর আক্রমনকে মোকাবেলা করতে এবং দেশের লাল সবুজ পতাকা অর্জন করতে তিনি জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন বলেই প্রাপ্তী আজকের এই স্বাধী বাংলাদেশ ৷ স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অকোতোভয় সৈনিক কালজয়ী এক মুক্তি সেনানী হলেন শ্যামা প্রসন্ন দাশ বিধু বাবু ৷ মুক্তিযুদ্ধের কীর্তিমান এ বীর ১৯২৭ সালের ২৭ শে মে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ৮নং ইউনিয়নের গোজাখাই গ্রামের এক সম্বান্ত জমিদার পরিবারে জম্ম গ্রহন করেন ৷ তার পিতার নাম জমিদার সুরেন্দ্র নাথদাশ গুপ্ত এবং মাতার নাম রাজকুমারীদাশ গুপ্ত৷ শৈশব থেকেই দুরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রতিভার অধিবারী বিধুবাবু সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এন্টাস (এস,এস,সি) এবং হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রী অর্জন করার পর বিশ ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন ৷ অসীম সাহসের অধীকাল সৈখিন মনের মানুষ বিধু বাবু ছোট বেলা থেকেই বাহারী ফুলের বাগান পরিচর্যা করাসহ পিঠে দুনলা বন্দুক ঝুলিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন ৷ পাক-ভারত বিভক্তির পর ১৯৬৫ সালে তিনি নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পরিষদ প্রধান চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন যদি ওতার মেধা মননে তিনি দেশের বহু জন গুরুত্বপূর্ন স্থানে আসীম হতে পারতেন ৷ ১৯৭১ সালে যখন বঙ্গবন্দু শেখমুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষনে দেশের মানুষকে যার যা আছে তা নিয়েউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহবান জানান ৷ তখন বিধুবাবু দেশ মাতৃকার অসত্মিস্থ হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ তথা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে যুদ্ধের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এবং যুদ্ধের বিভিন্ন কলাকৌশল অর্জনের জন্য যৌথভারে বালাট সীমান্তে পাড়ী দেন ৷ প্রশিক্ষন সহ তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি দেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন ৫নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার হিসাবে বিভিন্ন স্থানে সম্মূখ যুদ্ধে পাকবাহিনীদের মোকাবেলা করেন ৷ যুদ্দকালীন সময়ে তিনি আজমমিরীগঞ্জ,বদলপুর তাহিরপুর, জামানগঞ্জ, দিরাই, নবীগঞ্জ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে অদম্য সাহসের সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন এবং কোনো কোনো স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনকারী মাটির গর্তে লুকিয়ে রাজাকার বাহিনীর লোকজনকে মাথার চুলধরে টেনে বেড় করে আক্রমন ও আঘাত করেছেন ৷ অসীম সাহসের অধিকারী কৃর্তিমান এ বীর যুদ্ধকালীন সময়ে অসংখ্য রাজাকারকে হত্যা করলে ও এলাকার কিছু ছদ্দবেশী রাজাকার ঐ সময়ে বিধুবাবুর সরলতার সুযোগে তার হাত থেকে প্রান ভিক্ষা নিয়ে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে ৷ দেশ স্বাধীনের পরে তিনি নবীগঞ্জ ত্যাগ করে হবিগঞ্জ শহরস্থ তিন কোনা পুকুর পাড় সংলগ্ন স্থানে নিজ বাসায় বসবাস করছেন ৷ যদি পরবর্তীতে তিনি মাঝে মধ্যে নবীগঞ্জ আসতেন৷ নবীগঞ্জের আপামর জনতার কাছে সর্বশেষ তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের মায়া চিরতরে ত্যাগ করে জম্মভূমি ছেড়ে ভারতের কলকাতায় স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য চলে যান ৷ বেশ ক’বছর বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ৯ ই মার্চ রাত ৯.৩০মিনিটে ভারতের নিজ বাসায় ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান ৷ তার মৃত্যুর সংবাদ শোনে নবীগঞ্জ তথা বৃহত্ত হবিগঞ্জের অসংখ্য মানুষ তাকে আবার শেষ বারের মত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ৷ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চিরকুমার থাকার কারনে আজীবন শুধু মানবতাধিকার সংরক্ষন, মানবকল্যান ও দেশপ্রেমের কথাই চিন্তা করেছেন সবসময় ৷ ন্যায় পরায়ন একজন বিচারক হিসাবে আজো তার নিজ গ্রামসহ নবীগঞ্জের সর্বত্র একটা সুখ্যাতি রয়েছে ৷ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর দেশের অন্যান্য বীর সেনানীদের বিভিন্ন খেতাবে ভৃষিত করা হলে সেইরুপ কোন খেতাবে এই অকোতভয় বীরসৈনিক বিধুবাবুকে ভুষিত করার প্রানের প্রত্যাশা ছিল নবীগঞ্জবাসীর ৷ কিন্তু এই প্র্যত্যাশা শুধু প্রত্যাশাই থেকে গেল৷ ক্ষনজম্মা পুরুষ বিধু বাবু মরেও অমর হয়ে চিরদনি বেঁচে থাকবেন দেশের মানুষের কাছে এই প্রত্যাশাই সকলের ৷