বৃহস্পতিবার ● ২৬ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » মমেক হাসপাতালের হল রুম থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার
মমেক হাসপাতালের হল রুম থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের হল রুম থেকে চৌধুরী আরেফিন (৩০) নামে এক ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তার পাশে থাকা সাতটি অ্যাম্পুল ঘুমের ইনজেকশন ও সিগারেট উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মমেক হাসপাতালের ডা. মিলন হলের ২০৭ নম্বর কক্ষ থেকে মৃত অবস্থায় চৌধুরী আরেফিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চৌধুরী আরেফিন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার চৌধুরী মোস্তফা হাবিবের ছেলে। তিনি যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এ বছরের মার্চ মাস থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন তিনি।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ এ সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক সমস্যার কারণে অতিরিক্ত ঘুমের ইনজেকশন নেয়ার ফলে তার মৃত্যু হতে পারে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক)হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘গত রাতে নাইট ডিউটি করার পর সকালে ছাত্রাবাসের ২০৭ নম্বর কক্ষে এসে দরজা আটকে ঘুমিয়ে আরেফিন। এরপর থেকে তার রুমের দরজা না খোলায় এবং কোনো সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান, বিছানায় মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনার পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।’
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে চৌধুরী আরেফিনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ছুটে আসি। তবে কী কারণে এমন হয়েছে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। তবে এ ধরনের অনাকাক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
গফরগাঁওয়ে উপার্জিত টাকার হিসেব চাওয়ায় রড দিয়ে পিটিয়ে প্রবাসী ছেলেকে হত্যার অভিযোগ বাবা-মা ও ভায়ের বিরুদ্ধে
ময়মনসিংহ :: ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে প্রবাসে জীবনবাজি রেখে উপার্জিত টাকার হিসেব চাওয়ায় শারফুল ইসলাম ঢালী (২৮) নামের এক প্রবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে মা, বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই যুবকের মা হোসনে আরাকে (৪৭) আটক করেছে পুলিশ। নিহত শারফুল ইসলাম ঢালী উপজেলার চাকুয়া গ্রামের ইসহাক ঢালীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারফুল ইসলাম ঢালী মারা যান। এর আগে বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামে শারফুল ইসলাম ঢালীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন মা, বাবা ও ভাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রামের ইসহাক ঢালীর (৪৫) বড় ছেলে শারফুল ইসলাম ঢালী প্রায় ৭-৮বছর লেবাননে ছিলেন। সেখানে ভালো বেতনে চাকরি করা অবস্থায় তার বাবার নামে প্রায় ৬০-৭০লাখ টাকা প্রেরণ করেন। কিন্তু সমুদয় টাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা আত্মসাৎ করেন। মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবের পর শারফুল ইসলাম ঢালী দেশে ফিরে বাবার কাছে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসেব চাইলে শুরু হয় টালবাহানা ও মনোমালিন্য। এক পর্যায়ে তা বিবাদে রূপ নেয়। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই শারফুলের সাথে তার বাবা, মা, ভাই বোনদের ঝগড়া হতো। কয়েকদিন পূর্বে এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে বিচার সালিশও হয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে আবারো শারফুলের সাথে পরিবারের অন্য সদস্যদের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে শারফুলকে ঘরের ভিতর আটকে তার বাবা ইসহাক ঢালী, মা হোসনে আরা ও ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম অকথ্য নির্যাতন চালায়। শাবল ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে মেঝেতে ফেলে রাখে। এ সময় শারফুলের ডাক-চিৎকার শুনে চাচা ইসমাইল এগিয়ে এলে শারফুলের মা হোসনা খাতুন তাকে দা নিয়ে তাড়া করেন।
পরে খবর পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেও বাধা দেয়া হয়। তবে বাধা উপেক্ষা করে তারা মুমূর্ষূ অবস্থায় শারফুলকে উদ্ধার করে প্রথমে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৬ আগষ্ট) সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক)হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারফুল মারা যান।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পাগলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িতদের পায়নি। তবে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহতের মা হোসনে আরাকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবসীরা জানান, বিদেশে জীবন বাজি রেখে শত দুঃখ কষ্টে উপার্জিত টাকার জন্যই শারফুলকে জীবন দিতে হলো।পরিবারের সদস্যদের লোভের বলি হতে হলো। তবে শারফুলকে নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি না হলে ওরা এ ঘটনায় প্রতিবেশীদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো।
পাগলা থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের মাকে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের পাশাপাশি এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি এবং জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে।’