বুধবার ● ৯ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » মাথায় চুল লম্বা থাকায় ছাত্রকে মারধর : শিক্ষক পলাতক
মাথায় চুল লম্বা থাকায় ছাত্রকে মারধর : শিক্ষক পলাতক
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৯ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৫০মিঃ) গাজীপুরের শ্রীপুরে মাথায় চুল লম্বা থাকায় শ্রেণীকক্ষে এক ছাত্রকে শিক্ষক বেদম মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ মারধরের পর ওই শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লেও রেহাই পায়নি ৷ অজ্ঞান অবস্থায় সহপাঠীদের সামনে তাকে লাথি মেরেছেন ওই শিক্ষক ৷
৭ মার্চ সোমবার সকালে শ্রীপুর পৌর এলাকার বেড়াইদেরচালা আবদুল আউয়াল একাডেমিতে ওই ঘটনা ঘটে ৷ শিক্ষকের নিমর্মতার শিকার ছাত্রের নাম হাবিবুর রহমান (৮)৷ সে ওই এলাকার ডিমের আড়তদার খলিলুর রহমানের ছেলে ৷ হাবিবুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ৷ ঘটনার পর হাবিবুরকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাধীন রাখা হয়েছে ৷
হাবিবুর রহমানের বাবা খলিলুর রহমান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হাবিবুর বিদ্যালয়ে যায় ৷ সকাল ১১টায় প্রথম বিষয়ের পাঠদান হয় ৷ তৃতীয় বিষয় গণিতের পাঠদানকালে শিক্ষক নাঈম ফোরকান মাথায় চুল লম্বা থাকায় হাবিবুর রহমানকে বেদম মারধর করেন ৷
সহপাঠীরা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানায়, পাঠদানকালে নাঈম ফোরকান হঠাত্ হাবিবুর রহমানের কাছে এগিয়ে যান ৷ ‘মাথায় চুল লম্বা কেন’ জানতে চেয়েই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ৷ তিনি মাথার চুল টেনে ধরে পিঠে সজোরে উপর্যুপরি ঘুষি মারেন ৷ চিত্কার করে হাবিবুর ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে টেনে তুলে দুই গালে চর-থাপ্পর দেন শিক্ষক নাঈম ৷ এক পর্যায়ে হাবিবুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে ‘ভান ধরেছে’ বলে লাথি মারেন ওই শিক্ষক ৷ ওই সময় শিক্ষকের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আতঙ্কে অনেকেই কেঁদে ফেলে ৷ পরে টের পেয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ছুটে গিয়ে হাবিবুরকে উদ্ধার করে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেন ৷ স্বজনরা তাত্ক্ষণিক তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাধীন রাখেন ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, নাঈম ফোরকান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদের শ্যালক ৷ প্রায় দুই বছর আগে মোমবাতির আগুনে স্টিলের টুকরো গরম করে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রের গালে ছেঁকা দিয়েছিলেন শিক্ষক নাঈম ৷ প্রায় বছর খানেক আগেও শ্রেণীকক্ষের ভেতর দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রকে বেদম মারধর করেছিলেন ৷ প্রতিবারই শ্যালকের পক্ষ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন সেলিম আহমেদ ৷
নির্যাতিত ছাত্রের বাবা খলিলুর রহমান অভিযোগ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে করে বলেন, তাঁর শিশু ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী গিয়ে তাঁদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন ৷ ঘটনা কারো কাছে জানালে তাঁর শিশু ছেলেরই বেশি ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন ৷
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাঈম ফোরকান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি ৷
আবদুল আউয়াল একাডেমিরে প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ঘটনার জন্য নাঈম অনেক অনুতপ্ত হয়েছেন ৷ এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে ৷
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. সেলিনা আক্তার আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর শিশু ছাত্রের জ্ঞান ফিরেছে ৷ মনে হয় আতঙ্কে সে জ্ঞান হারিয়েছিল ৷ গায়ে নিলাফুলা জখমের চিহ্ন আছে ৷
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না ৷ নির্যাতিত ছাত্রের স্বজনরা অভিযোগ দিলে মামলা নেয়া হবে ৷
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি ৷ আমি আপনার কাছেই শুনলাম ৷ আমি খোঁজ নিচ্ছি ৷ ঘটনা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷