সোমবার ● ৩০ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » আমরা গুম-খুনের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করিনি : জাফরুল্লাহ চৌধুরী
আমরা গুম-খুনের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করিনি : জাফরুল্লাহ চৌধুরী
নিখোঁজদের ফিরিয়ে দিন, নইলে আমাদেরও গুম করেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে ‘মায়ের ডাক’ নামে এক সংগঠনের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের এক স্বজন বলেন, ‘রাজনীতি করলেই তাকে গুম করতে হবে কেন? আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিন। স্বজন হারিয়ে আমাদের দুর্বিষহ দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অনেকে তাদের নিখোঁজ স্বজনের ছবি প্রিন্ট করে সঙ্গে এনেছিলেন।
নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে হাফসা ইসলাম বলেন, ‘আমি একই জায়গায় ৮ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আমার বাবাকে খুঁজছি। কেউ আমার বাবার খোঁজ দিচ্ছে না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলছি, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমার বাবা বেঁচে আছে না মরে গেছে আমি জানি না। আমার ছোট বোন বাবাকে কখনো দেখেনি। আমি শুধু আমার বাবাকে ফেরত চাই। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আর বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানাতে চাই না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের মাসুম নিখোঁজ হওয়ার পর আট বছর পেরিয়ে গেছে। তার মা আয়েশা আলী এখনো ছেলের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আছেন।
তিনি বলেন, ‘আশায় বুক বেঁধে আছি একদিন ছেলে আমার কোলে ফিরে আসবে। মা বলে জড়িয়ে ধরবেন। কিন্তু সেই প্রতীক্ষা আর শেষ হয় না।’ তার প্রশ্ন, ‘তবে কি এই প্রতীক্ষার অবসান কখনোই হবে না, ছেলে কি ফিরবে না?’
মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেন নিখোঁজ হন ২০১৯ সালের জুনে। তার মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে ফিরে পেতে আর কত বছর লাগবে জানি না। আদৌ ফিরে পাব কি না, সেটাও বলতে পারছি না। বাবা বেঁচে আছেন কি না, এটাও আমরা বলতে পারছি না। আমি জানতে চাই, আমার বাবা বেঁচে আছেন কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ, তিনি যেন আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।’
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘আজ শুধু দেশের অভ্যন্তরে গুম হচ্ছে না। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরেক জায়গায়। এই যে আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থা, এটা কখনোই রাষ্ট্রীয় সম্মতি ছাড়া সম্ভব না। তাই অবিলম্বে এসব ঘটনা তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। কমিশন তথ্য অনুসন্ধান করবেন, তদন্ত করবেন এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসে, গুম কারা করে। এই গুম সরকারি বাহিনী করেছে, সরকার করেছে, এটা বিশ্বাস করার বহু কারণ রয়েছে। যদি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকারি বাহিনী না করে থাকে, তাহলে যারা গুম হয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করছেন না কেন। কেউ কেউ তো গুম হয়েছেন ১০/১২ বছর হয়ে গেছে।’
সভায় নিখোঁজদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তারা গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার তাগিদ দেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। তাদের মধ্যে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমুখ।