মঙ্গলবার ● ৩১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » হেলিকপ্টার যোগে সীডবল নিক্ষেপের মাধ্যমে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেষ্টে বনায়ন
হেলিকপ্টার যোগে সীডবল নিক্ষেপের মাধ্যমে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেষ্টে বনায়ন
হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সাঙ্গু ও মাতামুহুরী। দেশের সর্ব দক্ষিনের জেলা পার্বত্য বান্দরবানে এই দুই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। জুম চাষ ও বৃক্ষ নিধনের কারণে ধংসের নিপতিত হয়েছে এই বনাঞ্চল দুটি। সম্প্রতি সাঙ্গু ও মাতামুহুরী রিজার্ভ সংরক্ষণে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে (সীডবল) বীজ ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছে লামা বন বিভাগ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় আলীকদম সেনানিবাস থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে উপজেলার বাবু পাড়া এলাকা থেকে শুরু করে প্রায় ছয় লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতীর গাছের বীজ ছিটানো হয়।
বান্দরবান সেনা রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জীববৈচিত্র দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বৈশি^ক উষ্ঞতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ ও প্রানী বৈচিত্রের অনেক প্রজাতী ইতিমধ্যে আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে গেছে। বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী বিরল তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এমন ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য বৃক্ষ ও বনাঞ্চল এর কোন বিকল্প নাই। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস, জীববৈচিত্র সংরক্ষন এবং সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের মূল ধারা অব্যহত রাখতে হলে ব্যপক হারে বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরী। একই সাথে জনসাধারণকে জালবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করা এবং বনাঞ্চল সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করা একান্ত অপরিহার্য।
এ উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম বন সংরক্ষনে এমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হল। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই কার্যক্রম লামা বন বিভাগের জন্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে। চম্পাফুল, পুতিজাম, ঢাকিজাম, কালোজাম, গামর, করই, জারুল, হারগাজাসহ প্রায় ৭০টি প্রজাতীর বীজ সম্বলিত সীডবল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এ দুটি রিজার্ভ পরেষ্টে ব্যপক হারে জুমচাষ হওয়ায় জুম চাষীরা হাজার হাজার একর জমি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে প্রায় বিভিন্ন এলাকা ন্যাড়া পাহাড়ে পরিনত হচ্ছে। অপরদিকে কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়া মাতৃবৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। ফলে বৃক্ষের প্রাকৃতিক পরাগায়ন ও প্রাকৃতিক বনায়ন নেমে এসেছে শুন্যের কোটায়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য ব্যতিক্রমি এই উদ্যোগ গ্রহন করেছে লামা বন বিভাগ।
অপরদিকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর সহয়তায় আলীকদম-পোয়ামুহুরী নির্মানাধিন সড়কের প্রায় বার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতীর শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা রোপন করেছে লামা বন বিভাগ।
৭৪ হাজার হেক্টরের ভার্জিন ফরেষ্ট খ্যাত সাঙগু ও মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল দেশের সর্বদক্ষিনের জেলা বান্দরবানের থানচি ও আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। এটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্রের হটস্পট হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বৃক্ষ নিধনের ফলে এখানকার বন্য প্রাণীদের অধিকাংশ বিলুপ্ত প্রায়। এসব বন্য প্রাণী বিলুপ্তির পেছনে অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরো একটি হল, পাহাড়ে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে এদের অনেকেই। এছাড়াও পাথর উত্তোলন, বাঁশ ও গাছ কর্তন করার ফলে পানির উৎস্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এদের অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেষ্টের কালাইয়ারছড়া এলাকায় একটি বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ঘোষনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এসময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল সরকার, বর্ডার গার্ড আলীকদম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মো. ইফতেখার হোসেন পিএসসি, আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন, লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাইছার, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা, সাধারণ সম্পাদক ধুংড়ি মার্মা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।