রবিবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পুলিশ কী সাংবাদিকতা করতে পারেন ?
পুলিশ কী সাংবাদিকতা করতে পারেন ?
হাসান শান্তনুর :: চট্টগ্রামের রাউজান থানার ভেতর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণী সীমা চৌধুরী প্রথমে ধর্ষণ, এরপর হত্যার শিকার হন। অভিযোগ ছড়ায়, ওই থানার তখনকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কয়েক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা ১৯৯৬ সালের শেষ দিকের। পোষাক কারখানার কর্মী, চৌদ্দ বছরের বালিকা ইয়াসমিন গণধর্ষণ, হত্যার শিকার হন ১৯৯৫ সালে। দিনাজপুরের কয়েক পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেন। ইয়াসমিন হত্যা ওই সময়ের বিএনপির ‘সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়’।
উপরের বর্বরোচিত দুটি ঘটনায় প্রথমে অভিযুক্ত, এটাপরে দায়ি পুলিশ। পুলিশ প্রশাসনের কেউ ‘সাংবাদিকতা’ করলে ওই জাতীয় ঘটনা কীভাবে লিখবেন? তাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের আদৌ কোনো সুযোগ আছে? এগুলো উদাহরণ মাত্র। মাঝেমধ্যে এমন ঘটনার অভিযোগ উঠে- যেগুলোর আসামি, বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা হন পুলিশ। এ ‘তিনপক্ষ’ মিলে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে দিলো কী না, চাকরিরত পুলিশের ‘সাংবাদিকতার সময়’ এসব প্রশ্ন তোলা সম্ভব হবে?
সাংবাদিকতা আর দশটা পেশার মতো খুব সাধারণ কিছু নয়। সারাক্ষণ ‘নিজের, বা বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর গুণগান’ মানে সাংবাদিকতা নয়। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার যেসব বৈশিষ্ট্য আছে, সেগুলো রক্ষা করে অন্য পেশাজীবীদের পক্ষে ‘সাংবাদিকতা’ করা খুব কঠিন। তাছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে সবাই নিয়োগ পান নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য, সরকারি চাকরিতে সাংবাদিকতার জন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় না। তথ্য বা জনসংযোগ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কিছুতেই সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে না। জনসংখ্যার অনুপাতে এমনিতেই পুলিশের সংখ্যা কম। এর মধ্যে ওয়েবসাইটে ‘সার্বক্ষণিক সাংবাদিকতায়’ ব্যস্ত থাকার সুযোগ কম।
পুলিশের সাধারণ সদস্য থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রায়ই নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দেন। এর জন্য অবশ্য কিছুতেই পুরো প্রশাসন দায়ি নয়। পুলিশের ইতিবাচক কাজ অজস্র আছে; অর্জন, দক্ষতা নিয়েও প্রায় ক্ষেত্রে প্রশ্ন নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে ভালোবাসা জাগানিয়া কার্যক্রমও তাদের আছে। একাত্তরে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। এরপরও সত্য হচ্ছে- নানা কারণে এ বাহিনীর প্রতি অনেকের অনাস্থা আছে। এ বাহিনীর ওয়েবসাইটের ইতিবাচক কোনো তথ্য মানুষ যতোটা আস্থায় নেবে, এর চেয়ে বেশি আস্থা জন্মাবে ওই সংবাদ মূলধারার প্রচারমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ, প্রচার হলে।
পুলিশের ইতিবাচক কার্যক্রম, অর্জন মূলধারার প্রচারমাধ্যমগুলো আরো বেশি করে তুলে ধরার চর্চা করতে পারে। সেগুলোর প্রচার, প্রকাশে পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ আরো যত্নশীল হতে পারে। আরেকটা সত্য হচ্ছে- বাংলা ভাষার সব অক্ষর শহিদের রক্তে ভেজা। সরকারি যে কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের বাংলা বানানে ‘খেয়ালখুশিমতো আচরণের’ সুযোগ নেই। বানান বিশৃঙ্খলা ভাষার প্রতি অমর্যাদা। বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতাও আছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বানান নৈরাজ্য হতাশাজনক। প্রচারমাধ্যমের পেশাদারত্বের সঙ্গে শুদ্ধ বাক্য, শব্দ, বানান চর্চার বিষয়টিও জড়িয়ে আছে।
লেখক : সাংবাদিক, গণমাধ্যম গবেষক হাসান শান্তনুর।সূত্র : নোয়াখালী টুয়েন্টিফোর