রবিবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » দেড় বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে স্কুল, কলেজ খুলেছে
দেড় বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে স্কুল, কলেজ খুলেছে
ঘড়িতে সকাল ৮টা। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। হাতে ফুল, চকোলেট। অপেক্ষায় শিক্ষকরা। মুখে মাস্ক। কিন্তু তাতে কি! শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ, আবেগ একটুও ঢাকা পড়ছে না। কতদিন পর দেখা। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে, প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে। ফেরা প্রিয় প্রাঙ্গণে। সকাল থেকেই ঢাকার চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যায়। নিত্যদিনকার যানজট আরও তীব্র হয়।
ক্যালেন্ডারের হিসাবে ৫৪৩ দিন। করোনার কারণে দীর্ঘ এই ছুটি শেষে আবার বেল বেজেছে স্কুল-কলেজে। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো একই চিত্র সারা দেশে। গ্রাম থেকে শহর উৎসব সর্বত্র। গল্প, হৈ-হুল্লোড়। শিক্ষার্থীদের কাছে এ যেন মুক্তির আনন্দ। এতোগুলো দিন তো একরকম বন্দিই ছিল ওরা.কারও কারও কাছে এই অনুভূতি প্রকাশের মতো নয়। ঠিক স্কুল জীবনের প্রথম দিনটির মতো। তবে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের মধ্যে উদ্বেগও ছিল। করোনা যে এখনও যায়নি! এর মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি। কোথাও কোথাও দেখা গেছে বিশৃঙ্খলা।বিশেষ করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছিল অভিভাবকদের জটলা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, অভিভাবকদের জটলায় সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে সংক্রমণ দশ এর নিচে নেমে এসেছে।
রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় ক্লাসরুমে ময়লা থাকায় কলেজের অধ্যক্ষসহ দুইজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলেও ছিল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, এতোদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বাসায় থেকে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। অনেকদিন পর স্যার ওবন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। কী যে আনন্দ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না। তবে দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানায় অনেক শিক্ষার্থী।
এই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সোহেল আহমেদ বলেন, দুইটা শিফটে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আজ ৫০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে জোর দেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে দুই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকেই স্কুলে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা। প্রথম শিফটের শিক্ষার্থীরা সাড়ে ৭ টা থেকে ৭টা ৫০ মিনিটের মধ্যে ক্লাসে প্রবেশ করে। এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়। কিন্তু বিশৃঙ্খলা দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার সময়। হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কি করে বের হয় শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে অনেক অভিভাবক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এভাবে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজধানী ঢাকার মতোই চিত্র ছিল সারা দেশে। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল চলছে। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে ২৯৪ জন শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে। তাদের আগমন যেন আনন্দময় হয়, সেজন্য স্কুল রঙিন বেলুন দিয়ে সাজিয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে চকোলেট ও মাস্ক বিতরণ করেছি। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছি।
মাগুরার মহাম্মদপুরের স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদুন নবী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় আনন্দিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় ধোয়াইল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও ছিল।
স্কুল-কলেজ খোলার এই উৎসবের দিনেও আলোচনায় রয়েছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা। করোনার এই দীর্ঘ ছুটিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এরই মধ্যে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল বন্যা কবলিত এলাকায়। অনেক স্কুল ও কলেজ রবিবার খুলেনি।