সোমবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের দিশায় নিয়ে যেতে হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের দিশায় নিয়ে যেতে হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
আজ সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্দের ৫০-জনআকাঙ্খা’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ছিল এই জনপদের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল বাস্তবে একটা জনযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পূর্ববঙ্গের সমগ্র জনগোষ্ঠির এক সম্মিলিত লড়াই। ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল ও পরবর্তীতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে নতুন নাম নেওয়া বাংলাদেশের আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিশা হিসাবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার ও সংবিধানের চার মূলনীতি ছিল এদেশের মুক্তিকামী মানুষের গণআকাঙ্খার প্রতিফলন। স্বাধীনতার পর জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা বাস্তবায়নে যে অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনীতি দরকার ছিল তার অনুপস্থিতিতে অচিরেই জনগণের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে আর আশা হতাশায় পর্যবসীত হয়। গত ৫০ বছরে এই বেদনা কেবল আরো গভীর ও প্রকট হয়েছে।
বক্তারা বলেন সাম্যের পরিবর্তে বাড়ছে অসাম্য, মানবিক মর্যাদা ভূলুষ্ঠিত, সামাজিক ন্যায়বিচার নির্বাসিত, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বাস্তবে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়ারা ভয়ংকর চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বিদ্যমান অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের রাস্তা তৈরী হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশী পশ্চাৎগমন ঘটেছে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে। জনগণের ভোটের অধিকার এখন অস্বীকৃত। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের সুযোগও অবরুদ্ধ। তারা বলেন, করোনা দুর্যোগ ও গভীর রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে যখন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণকে আস্থায় নেয়া দরকার তখন হিংসা আর ঘৃণার রাজনীতিকে আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু, বৈষম্যমূলক ও কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের দিশায় নিয়ে যেতে নতুন গণজাগরণের আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, গণফোরাম নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টু, লেখক ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, মুক্তিযোদ্ধা ও উন্নয়ন সংগঠক শারমিন মোরশেদ, বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি আবদুন নূর, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন অর রশিদ।
আলোচনা সভায় সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য পেশ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী বহ্নিশিখা জামালী। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ইফতেখার আহমেদ বাবু।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের সুবর্ণজয়ন্তী আজ বিবর্ণ। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব এদেশের জনগণের সরকারের নয়। তিনি বলেন, সমতা ছাড়া উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধি অর্থহীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শাসন আছে, সুশাসন নেই।
মোস্তফা মহসীনন মন্টু বলেন, এখন ইচ্ছেদ করেই জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য।
সাইফুল হক বলেন, সরকার কেবল ভোটের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, মানুষের মর্যাদাও কেড়ে নিয়েছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে যেয়ে গোটা দেশ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
সোহরাব হাসান বলেন, সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের রাজনীতিতে কোন সুবর্ণরেখা দেখা যাচ্ছে না। অধিকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানী জমানার চেয়েও খারাপ অবস্থায়।
শারমিন মোরশেদ বলেন, ৭১ সালে আমরা যে মুক্ত জীবনের জন্য যুদ্ধ করেছি আজ তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাজ বিশেষ কোন ধর্মের চর্চা নয়, সুনাগরিকক তৈরী করা।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ততটুকু গণতন্ত্রের চর্চা করে যেটা তার গদির জন্য হুমকি নয়।