বুধবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » দিনাজপুর » ঘোড়াঘাটে মহিলাদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
ঘোড়াঘাটে মহিলাদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
ঘোড়াঘাট প্রতিনিধি :: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট মহিলাদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোড়াঘাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সরকারি ভাবে মহিলাদের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার লক্ষে উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ (আইজিএ) প্রকল্পের ফ্যাশন ডিজাইন ও ক্রিষ্টাল শোপিজ প্রশিক্ষণের ফ্রি কোর্স চালু করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোর্শেদ আলী খান, প্রশিক্ষক পলি রানী ও শারমিন আক্তার এবং বাছাই কমিটির সভাপতি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রুসিনা সরেনের স্বেচ্ছাচারীতায় অফিস সহায়করা নিজেদের পছন্দ মতো লোকজনদের প্রশিক্ষণের তালিকাভুক্ত করেছেন।
জানা যায়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক পলি রানী ও শারমিন আক্তার নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ করে বাছাই কমিটির সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতায় মনগড়া ভাবে নামমাত্র যাচাই বাছাই করে তাদের মনোনীত লোকদের এই প্রশিক্ষণে অর্ন্তভুক্ত করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আবেদনকারী বলেন, আসন সংখ্যা ৫০ জনের মধ্যে অধিকাংশই স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণের জন্য তালিকা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১ টায় সরেজমিনে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে কোনো প্রশিক্ষককে পাওয়া যায়নি। তাদের প্রত্যেকের মুঠফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের ফ্যাশন ডিজাইনের প্রশিক্ষক পলি রানী দুপুরের খাবার খেতে বাড়িতে গেছেন বলে জানান কিন্তু সারাদিনেও তিনি আর ট্রেনিং সেন্টারে ফেরেননি। অপরদিকে ক্রিষ্টাল শোপিজের আরেক প্রশিক্ষক শারমিন আক্তারের সাথে বহুবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করার পর প্রায় ১ঘন্টা পর তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং তিনি বলেন আমি এইমাত্র খেতে আসলাম, বৃষ্টির জন্য আটকে আছি একটু পরে ট্রেনিং সেন্টারে যাব। বিস্তারিত কথা সাক্ষাতে বলবো বলে মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে কল কেটে দেয়। অথচ বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাদের অফিস করার কথা থাকলেও তারা কেউই আর অফিসে ফেরেননি। এভাবেই বিভিন্ন টালবাহানা করে সরকারের সময় এবং অর্থ দুটোই নষ্ট করছেন তারা। হাজিরা খাতা চেক করে দেখা মেলে অনেক শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত।
এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন বাস্তবসম্মত মতামত পাওয়া যায়নি। এখানে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে দু’রকম ভাষ্য পাওয়া যায়। একজন বলছেন এক শিফটে ট্রেনিং চলছে তো আরেক জন বলছেন দুই শিফটে ট্রেনিং চলছে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) আবারও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৫০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত আছেন ৩৮ জন। আর ১২ জন কোথায় জানতে চাইলে প্রশিক্ষক শারমিন আক্তার ও পলি রাণী এর কোন উত্তর না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে এবং হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের বলেন যে তাদের উর্ধতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে এবং শেষমেশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দোহায় দেয়। অনেকটা এভাবেই চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, যেন দেখার কেউ নেই! প্রশিক্ষকরা সরকারি বিধি ব্যবস্থাকে অমান্য করেই নিজ ক্ষমতায় প্রতি ব্যাচেই অনিয়ম করছেন, এমন অভিযোগ প্রশিক্ষণার্থীদের।
এ বিষয়ে বাছাই কমিটির সভাপতি রুসিনা সরেনের সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে না পেয়ে ২/৩ দিন তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রশিক্ষকরা অফিস টাইমে কেন উপস্থিত নেই এমন প্রশ্নের জবাবে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোর্শেদ আলী খান মুঠো ফোনে বলেন, তারাতো অনুপস্থিত থাকার কথা না। ১৬ তারিখ থেকে নতুন সেশন শুরু হওয়ায় প্রথম ২/৪ দিন ট্রেডগুলো পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওখানে কর্মকর্তা না থাকায় আমি নিজেই অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম জানান, ট্রেনিং শুরু হয়েছে আমি জানতাম না। অনুপস্থিত থাকা বা অন্যান্য বিষয়ে আমি নিজেই দেখতে যাবো এবং কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।