বৃহস্পতিবার ● ৭ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথে দখল আর দূষণে বিলীন চরচন্ডি নদী
বিশ্বনাথে দখল আর দূষণে বিলীন চরচন্ডি নদী
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর সীমান্ত দিয়ে সুরমা নদী প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে এই সুরমা নদীর একটি উপনদীর নাম বাসিয়া।
কালের বিবর্তনে অনেক নদ-নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। মানুষ বেড়েছে দখল হচ্ছে নদ-নদী। রাজনৈতিক ক্ষমতার ধাপটে দখল হচ্ছে সরকারি খাস খতিয়ানের সকল ভূমি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের খাল-বিল, নদী জলাশয় উদ্ধারের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কিন্তু উপজেলায় সরকারি নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় জবর দখল থেকে উদ্ধারে তেমন কোন লক্ষণ দেখা হচ্ছেনা।
বাসিয়া নদীর যৌবনের তরঙ্গ এখন শুধু গল্প। বৎসরের ৮মাস থাকত এই নদীতে ব্যাপক স্রোতে। ভয়ে অনেকেই নদীতে নামতেন না।
এদিকে, বিশ্বনাথ নতুন বাজারের মোড় থেকে সোজা পশ্চিম দিকে মুফতির গাঁও, চৌধুরী গাঁও, গোয়ালগাঁও, মীরের চর, মীয়াজনের গাঁও, চরচন্ডি, মাছুখালি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান চরচন্ডি নদীটি চাউলধনী হাওরের একপাশ দিয়ে টুকের বাজারের কাছে মাকুন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে।
বাসিয়া নদীর মত চরচন্ডী নদীর যৌবন ছিল। ৯০ দশকের দিকে বাসিয়া ও চরচন্ডি নদী দিয়ে ছোট বড় নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করত। প্রতিদিন সারি সারি পাল তোল নৌকা দেখা যেত। নৌকার গুনটানা ছিল অপরূপ এক দৃশ্য।
আশ্বিন ও কার্তিক মাসে চরচন্ডি নদীর তীরের মানুষ হরেক রকম জাল পলোসহ বিভিন্ন মাছ ধরার যন্ত্র দিয়ে দেশিয় প্রজাতির ধরতেন। এই অঞ্চলের প্রবিণরা শুধু গল্প করছেন।
নতুন প্রজন্মরা চরচন্ডি নদীর কাহিনি শুনে তা কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না। নদীটি প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০/৬০ মিটার। লম্বা ছিল প্রায় ২০কিলোমিটারের মতো।
আশ্বিন কার্তিক মাসেও কয়েত ফুট জল থাকত। নদীর দুই তীরের জমিতে শীতকালিন তরি-তরকারি শাক-সবজি ও চৈত্র বৈশাখ মাসে ইরি ব্যুরো ফসল এই নদীর পানি দিয়ে ফলানো হতো।
কিন্তু গত ২০ বছরের ব্যবধানে নদীটি যেন কোথায় হারিয়ে গেল। চরচন্ডি নদী এখন আর খাল নয়, দুই দিকে ভরাট হয়ে গ্রামের ল্যাটিনের ময়লা আবর্জনা মলমুত্রের নালায় পরিনত হয়েছে।
এক শ্রেনীর লোক রান্না বান্না আবর্জনা ও পলিতিন ফেলে চরচন্ডি নদীকে ডাস্টবি করে রেখেছে। বিএনপির শাসননামলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচীর আওতায় নদীটির খনন কাজ শুরু হলে নদীর দুই তীরের ঘাস পরিস্কার করে সব হালাল করে দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও সহকারি কমিশনার ভুমির রেকর্ড পত্রে নদীর নাম ও আয়তন থাকলেও জবর দখল করা নদীটিকে বাঁচাতে কারো কোন আগ্রহ নেই।
নদীটি উদ্ধার করা হলে বিশ্বনাথ, দৌলতপুর, দশঘর এ ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের জীবন মানের উন্নতি হবে এবং কৃষি ও মৎস উৎপাদনের ব্যাপক সাড়া জাগাবে।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির আলীর বলেন, চরচন্ডি অনেক বড় একটি নদী ছিল, নদীটি বিলীন হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষি ক্ষেতে বিরাট প্রভাব পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে দখল উচ্ছেদ করে খনন না করলে কৃষি ক্ষেত বিলুপ্তি হয়ে যাবে।
চরচন্ডি নদীর উৎপত্তিস্থল বাসিয়া নদী পারে বাসিন্দা হাজি সিতাব আলী জানান, চরচন্ডি ও বাসিয়া নদীর একটি মোড় ছিল। মানুষ নাম শুনলে ভয় পেত। এখানে অনেক নৌকা, বাঁশের ছাই আসলেই ডুবে যেত।
দখল আর দুষনে বিলীন হয়ে এখন আর নদী নেই। একইভাবে বক্তব্য দিয়েছেন দশঘর ও দৌলতপুর দুই ইউনিয়ের শতাধিক কৃষক ও বয়স্ক লোকজন।
চরচন্ডি নদীর ব্যাপারে কোন হদিস পাওয়া যায়নি উপজেলা ভুমি অফিসে। তবে, ইউনিয়ন তফসিলদার জানান, চরচন্ডি নদী নামে কিছু নেই। চরচন্ডি খাল নামে একটি তথ্য কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকে দেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।