শুক্রবার ● ৮ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » নজরদারীর অভাবে ঝিনাইদহে আবারও শুর হয়েছে জুয়ার আসর
নজরদারীর অভাবে ঝিনাইদহে আবারও শুর হয়েছে জুয়ার আসর
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :; ঝিনাইদহে আবারো জুয়া খেলার রমরমা আসর শুরু হয়েছে। সাবেক পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ঝিনাইদহ জেলাকে জুয়া মুক্ত করে চলে যাওয়ার পর জুয়াড়িরা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উছেছে। তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে গোপন আস্তানা গড়ে তুলে নতুন করে এই মরণ খেলা শুরু করেছে। সম্প্রতি র্যাব ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুল অংকের টাকাসহ জুয়াড়িদের আটকের খবর প্রমান করে জেলায় জুয়াড়িদের দাপট আগের মতো শুরু হয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা সামনে করে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানেও এই আসর বসতে পারে এমন আশংকা করছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গোয়েন্দা নজরদারীর অভিাবে হরিণাকুন্ডুর বিভিন্ন এলাকার পান বরজ ও বাজারে নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাত করে এই খেলার আসর চলছে বলে কথিত আছে। পশ্চিমাঞ্চলে সাধুহাটি, সাগান্না, হলিধানি, কুমড়াবাড়িয়া, গান্না ও মহারাজপুর এলাকায় জুয়াড়িদের অভয়ারণ্য হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জুয়ার বোর্ড বসছে এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গান্না ইউনিয়নের গান্না, চন্ডিপুর, পশ্চিম ঝিনাইদহ, পার্শ্ববর্তী ইকড়া (কোটচাঁদপুর উপজেলার), কুমড়াবাড়িয়ার জাড়গ্রাম, ধুপাবিলা, ডেফলবাড়ী এলাকায় নিয়মিত বসছে জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে মহেশপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ড, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও যশোর থেকে জুয়াড়িরা আসে। ফোরগুটি, ওয়ানটেন, ফ্লাসসহ বিভিন্ন জুয়া খেলা চলে এই আসরে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে সেখানে নিজস্ব পাহারাদার নিয়োগ করা থাকে। তারা লোকজন চলাচলের রাস্তায় জুয়া বোর্ড থেকে অনেক দুরে পাহারা দেয়। পুলিশ বা আইন শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীর গাড়ি দেখলেই সতর্ক করা হয় জুয়াড়ির। গান্না অঞ্চলে জুয়া খেলা হয় কিনা জানতে চাইলে চন্ডিপুর পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের মধ্যে চায়ের দোকানে তাশ খেলে কিছু মানুষ। কিন্ত তাস খেলার আড়ালে জুয়া খেলা হয় কিনা তা দেখা হয়নি। তবে গ্রামবাসির অভিযোগ গান্না কারিগরি স্কুলের পাশে, গান্না গ্রামের মধ্যে ও পশ্চিম ঝিনাইদহ গ্রামে কয়েক দিন পর পর জুয়ার আসর বসে। এই আসরে মাইক্রো গাড়িতে করে দূর দুরান্ত থেকে জুয়াড়িরা আসে। এছাড়া কুমড়াবাড়িয়া, নগরবাথান, ধোপাবিলা, জাড়গ্রাম, হলিধানি অঞ্চল, সাগান্না, সাধুহাটি, কালীগঞ্জের বারোবাজারসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জুয়ার আসর বসে বলে জানা গেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনেক জুয়াড়িকে আটক ও বসার জায়গার ভেঙ্গে দিলেও আবার তারা চালু করে। ৪ দিন আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসুন্ধি অঞ্চলের কুশাবাড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯ জুয়াড়িকে আটক করে র্যাব। তাদের কাছ তেকে উদ্ধার হয় টাকা।
‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের ভুইফোড় এনজিও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি ভুইফোড় এনজিও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে হা-হুতাশ বড়ছে। টাকার শোকে অনেকে কাহিল। কেও কেও সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেনা করে ‘সিরাক বাংলাদেশ’ এনজিওতে টাকা লগ্নি করেছিলেন। তাদেরই একজন হচ্ছে শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার। তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে ক্ষ্রদ্র ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন অফিসের ভিতরে লাইট জ¦ললেও অফিসের প্রধান ফটকে তালা। পরে জানতে পারেন এনজিও উধাও। শুধু মৌসুমী আক্তারই না, এরকম শত শত স্বল্প আয়ের মানুষ হা হুতাশ করছেন অফিসের সামনে দাড়িয়ে। তাদের ভাষ্য, জামানত হিসেবে আনুমানিক দুই কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছে এনজিওটির প্রতারক সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছে, পৌর এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে এনজিওর নামে এমন আর্থিক লেনদেন করলেও নজরদারী ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ এ ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও শুধু সমিতির নাম ঠিকানা নিয়েই বিদায় করেন তাদের। কবিরপুরের মৌসুমী আক্তার বলেন, প্রবাসী আকবর আলীর বাসায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসেই তাদের এক নারী সদস্যসহ ১০/১২ জন পাড়ায় পাড়ায় দ্রুতঋণ দেওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঋণের সুবিধা ছিল অন্য এনজিও থেকে অনেক সহজ। এ কারনে তিনি তার স্বামীর ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা রাখেন তিনি। কিন্ত সোমবার জানতে পারেন এনজিওটি টাকা নিয়ে উধাও। ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের মসলেম মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম, নাদপাড়া গ্রামের বজলু মোল্যা ও চরমৌকুড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, তারা প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জামানত রেখেছিলেন সিরাক বাংলাদেশে। কিন্ত তারা লোন না দিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে। সাতগাছি গ্রামের ফিরোজ বিশ^াস জানান, তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দেন। কিন্ত লোন না দিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি। তিনি আরো বলেন, তাদের মত স্বল্প আয়ের কম পক্ষে ৩’শ সদস্য এ প্রতারনার শিকার হয়েছেন। ‘সিরাক বাংলাদেশ’ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। সিরাক বাংলাদেশ। ক্ষুদ্রঋণ দান ও কুঠির শিল্প প্রকল্প। যার সনদ নং০০৩৫৬-০০৮৯৪-০০০৯১। ঋণের পাশ বইয়ে দেখা গেছে ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’’ এবং কিছু শর্তের কথা। বাসার মালিক প্রবাসী আকবর আলীর কন্যা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাসা সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ভাড়া নেয়। তাদের সাথে চলতি মাসের ৫ তারিখে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, সিরাক বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিস থেকে তারা তাকে টেলিফোনে জানান তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নেই। শৈলকুপাতে যারা এ কাজটি করেছে তারা প্রতারক চক্র। শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরাক বাংলদেশ নামের এনজিও’র কোন গ্রাহক তাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, শৈলকুপাতে সিরাক বাংলাদেশ নামের কোন এনজিও ঋণ কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধিত নেই।