বুধবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিরাজগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রাপ্তিতে এগিয়ে বিতর্কিতরা
সিরাজগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রাপ্তিতে এগিয়ে বিতর্কিতরা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: আসন্ন দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে ছিল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভীড়। এ অবস্থায় ৭ অক্টোবর জেলার ১৭টি ইউপিতে নৌকার প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে আওয়ামীলীগ। এদের মধ্যে জামায়াত পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাও মনোনয়ন পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অধিকাংশ ইউপিতেই বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাওয়ায় ফুসে উঠছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিছিল সমাবেশ ও দলের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে মনোনয়ন পূর্নবিবেচনার দাবী করছেন তারা। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। আগামী ১১ নভেম্বর এ ইউপি গুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সিরাজগঞ্জ সদরের ৮টি মধ্যে কালিয়া হরিপুর, শিয়ালকোল, বাগবাটি, সয়দাবাদ ও বহুলী এ ৫টি ইউপিতে নৌকা প্রতিক প্রাপ্তদের নিয়ে তৈরী হয়েছে বির্তক।
কালিয়া হরিপুর ইউপির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর মনোনয়ন পাওয়ায় ইউনিয়ন ও ১০টি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকরা যৌথভাবে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সোমবার করা ওই অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, বিগত ৫ বছরে দায়িত্ব পালনকালে চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর হতদরিদ্রদের ভিজিডির বরাদ্ধ ও বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে অর্থ আত্বসাত ও অনিয়ম করেছেন। যা প্রশাসনের তদন্তে প্রমানিতও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ রয়েছে। সে বিগত ৫ বছর দলীয় কোন কর্মসূচিতেও অংশ নেয়নি। উপরোন্ত দলের বদনাম করে বেড়িয়েছেন। তারপরও দল থেকে তাকেই আবারও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যে কারনে দলের অভ্যন্তরে ও সাধারন ভোটারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় দলের মনোনয়ন পূর্নবিবেচনার দাবী করেছেন অভিযোগকারীরা।
শিয়ালকোল ইউপিতে দলের শীর্ষ নেতাদের উপেক্ষা করে তরুণ ছাত্রলীগ নেতা সেলিম রেজাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত এ ইউপিতে ছাত্রলীগ নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় নৌকার বিজয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শংকা।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম আজম তালুকদার বাবলু জানান, বিতর্কিত প্রার্থীকে বাদ দেয়ার জন্য আজ মঙ্গলবার দলের বিশেষ বর্ধিত সভা করে রেজুলেশন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি দল বিষয়টির মূল্যায়ণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমিসহ ৭জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছি। দলীয় ভাবে যদি প্রার্থী পরিবর্তণ করা না হয় তাহলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা মিলে একক প্রার্থী নির্ধারন করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা হবে।
বাগবাটি ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম আবারও মনোনয়ন পাওয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রস্তাবিত মনসুর নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক আমজাদ হোসেন ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ইউসুফ আলীর হাজারো কর্মী-সর্মথকরা মিছিল সমাবেশ করেছেন। তাদের দাবী মনোনয়ন পূর্নবিবেচনা না করা হলে এ ইউপিতে নৌকার ভরাডুবি হবে। দলের সিদ্বান্ত পরিবর্তন না হলে আমজাদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।
শুণ্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া সয়দাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম নানা বির্তকের কারনে বিগত বছরগুলোতে মাঝে মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত: ৮/১০টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনেও রয়েছে অভিযোগ। যার তদন্ত এখনও চলছে। আবারও মনোনয়ন পাওয়ায় ১০ অক্টোবর এলাকায় বিশাল শোডাউন করেছেন তিনি। এ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নবীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে দলের কাছে পাহাড় সম অভিযোগ জমা পড়েছিল। তারপরও দল আমাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। এখন যারা নৌকার বিরোধীতা করবেন তারা আওয়ামীলীগ বিরোধী হিসাবে গণ্য হবেন।
বহুলী ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সাধারন সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারা। বিগত বছরগুলোতে মাঝে মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে শিরোনামও হয়েছেন তিনি।
এ ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এনামুল হক সেখ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী তালুকদার।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান আব্দুল বারী তালুকদার বলেন, অতীতে জেলা কমিটির কয়েকটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এরআগে ইউপির চেয়ারম্যানও ছিলাম। বর্তমানে সদর থানা আওয়ামীলীগে সদস্য হিসাবে আছি। জীবনের শেষ সময়ে আশা করেছিলাম দলীয় মনোনয়ন পাব। কিন্ত দল আমাকে মনোনয়ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবো। প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এনামুল হক সেখ বলেন, দল মনোনয়ন দেয়নি তাতে কি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েছি। দল যদি বহিস্কারও করে তাতেও কোন সমস্যা নেই। নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাব না।
এদিকে, রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টির মধ্যে ধুবিল ইউপিতে জামায়াত নেতার ছেলে এবং পাঙ্গাসীতে বিএনপির নেতাকে নৌকা প্রতিক দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় মনোনয়ন পূর্নবিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত পত্র দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, রফিকুল ইসলাম খান নান্নু নৌকা প্রতিক পাওয়ায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। আওয়ামীলীগে তার কোন সদস্য পদও নেই। সে এখনও ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। নান্নু নৌকা প্রতিক পাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসাহাসি করছে। মনোনয়ন পূর্নবিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত পত্র দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একই উপজেলার ধুবিল ইউনিয়নে জামায়াত নেতার ছেলে মিজানুর রহমান রাসেল নৌকা প্রতিক পাওয়ায় এ ইউনিয়নেও দলের মধ্যে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে ধুবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম সরকার জানান, নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন পূর্নবিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত পত্র দেয়া হয়েছে। আশা করছি দলের স্বার্থে কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলার অর্ন্তগত সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রিপন হাসান জানান, মিজানুর রহমান রাসেলের বাবা প্রয়াত প্রফেসর আবু বকর তালুকদার ১৯৮৬ সালে জামায়াত ইসলাম থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন তুলেছিলেন। তার চাচা ও শ্বশুরের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার ভাই নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য। অর্থের প্রভাবে আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে সে নৌকা প্রতিক পেয়েছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান রাসেল এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন দাবী করলেও তার সময়ের কমিটির কারো নাম জানাতে পারেননি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড: কে,এম হোসেন আলী হাসান জানান, দলের সিদ্বান্ত নেয়ার মালিক নেত্রী ( শেখ হাসিনা)। তিনিই সকল প্রার্থীর মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকে তাদের পক্ষেই কাজ করবো, এর কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রার্থী পূর্নবিবেচনার জন্য অনেকে আমাদের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে। সেগুলো আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়েছি। আবার অনেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটিতে দরখাস্ত পাঠিয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত নেবেন। আমাদের কিছু করার নেই।