বৃহস্পতিবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ঝালকাঠিতে ১০ টাকার চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ
ঝালকাঠিতে ১০ টাকার চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠিতে হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্ডধারীদের জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ওজনে ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত চাল কম দিচ্ছেন ডিলার। কয়েকজনকে সেপ্টেম্বর মাসে চাল দেওয়া হয়নি। বুধবার সকালে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী গ্রামে চাল বিক্রির সময় অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে।
জানা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হতদরিদ্র ৭৯৩ জনের তালিকা করে কার্ড দেওয়া হয়। এ ইউনিয়নে দুইজন ডিলার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেন। এর মধ্যে দেউরী বাজার এলাকায় চাল বিক্রির জন্য ডিলার নিয়োগ করা হয় আমিরুল বিশ্বাসকে। তিনি ৩৫৫ জন কার্ডধারীর মাঝে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি করবেন। সপ্তাহে সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এ চাল বিক্রি করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে কার্ডধারী ৬ জনকে চাল না দিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে ডিলারের বিরুদ্ধে। যাদের চাল দিয়েছেন, তাও ওজনে কম। অক্টোবর মাসেও কার্ডধারী হতদরিদ্রদের চাল ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করেন, বাজারের মধ্যে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাল বিক্রির নিয়ম থাকলেও, আমিরুল বিশ্বাস দেউরী গ্রামের রব মৃধার বাড়িতে বসে এ চাল বিক্রি করছেন। নিয়মানুযায়ী চাল বিক্রির সময় ডিলারকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু আমিরুল বিশ্বাস নিজে উপস্থিত না থেকে চাচা বাদল বিশ্বাসকে দিয়ে চাল বিক্রি করাচ্ছেন। সঠিক মাপে তিনি চাল দিচ্ছেন না কার্ডধারীদের। এতে ওজনে চাল কম পাওয়া ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দিয়াকুল গ্রামের মো. ইশ্রাফিল বলেন, বুধবার সকালে চাল আনতে গিয়ে দেখি ডিলার নেই। তাঁর চাচা বাদল বিশ্বাস চাল দিচ্ছে। তাকে ৩০০ টাকা দেওয়ার পরে টিপসই নিয়ে চাল দেয়। পাশের দোকানে গিয়ে মেপে দেখি ২৮ কেজি ৫০০ গ্রাম রয়েছে বস্তায়। আড়াই কেজি চাল কম দেওয়ার বিষয়ে ডিলারের চাচার কাছে জানতে চাইলে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলেন। চালের বস্তায় ঘাটতি আছে জানিয়ে যা পেয়েছি, তা নিয়ে চলে যেতে বলেন।
কার্ডধারী একই গ্রামের শেসন আলী ফকিরের ছেলে মিলন ফকির বলেন, বাবা অসুস্থ, তাই আমি চাল নিতে এসেছি। সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের চাল দেওয়া হয়নি। দুই মাসের চাল এক সঙ্গে চাইলে তা দেওয়া হয়নি। শুধু আমি না, গতমাসে ৬ জনকে চাল না দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। এ মাসে যে চাল দেওয়া হয়েছে, তাও ওজনে কম। ২৯ কেজি চাল পেয়েছি। টাকা নেয় ৩০ কেজির, অথচ চাল দেয় ২৯ কেজি। এক কেজি তারা আত্মসাত করে।
অভিযোগের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইদুর রহমান শাহীন বলেন, ওজনে চাল কম পেয়ে আমার কাছে অনেকেই ফোন করে। আমি এসে দেখি, ঘটনা সত্য। প্রত্যেককে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। কাউকে আধা কেজি, কাউকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দিচ্ছে। চাল বিক্রির সময় ডিলারের এখানে থাকার কথা, কিন্তু তিনি চাচাকে দিয়ে চাল বিক্রি করাচ্ছেন। এ ধরণের অনিয়ম আমরা সহ্য করবো না। গ্রামের দরিদ্র মানুষের তালিকা আমরাই করেছি। তারা সঠিক ওজনে চাল পাবে এটাই ডিলারের কাছে আশাকরি। কিন্তু তিনি অনিয়ম করছেন, এ ব্যাপারে আমরা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
ডিলার আমিরুল বিশ্বাস বলেন, জরুরী কাজে আমি বরিশালে গিয়েছিলাম। এই সময় চাচাকে দায়িত্ব দিয়েছি। ৫০ কেজির সবগুলো বস্তাতেই চালের ঘাটতি থাকায় আমরাও কার্ডধারীদের ২০০ গ্রাম করে চাল কম দিয়েছি। ইচ্ছে করে কোন অনিয়ম করা হচ্ছে না। আমি একজন সৎ মানুষ, কাউকে ঠকানোর কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শাহনাজ পারভিন বলেন, ডিলারের উপস্থিতি ছাড়া কাউকে চাল দেওয়ার নিয়ম নেই। ওজনে কম দেওয়ার কোন সুযোগই নেই। আমাদের চালে কোন ঘাটতি থাকে না। ডিলারের অনিয়মের ব্যাপারে অনেকে ফোনে জানিয়েছেন, আমরা তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবো।
ঝালকাঠিতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ৫১ হাজার মিটার জাল আটক ও ২৫ কেজি ইলিশ জব্দ
ঝালকাঠি :: নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরার সময় ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে ৫১ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ২৫কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ পুলিশের সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান টের পেয়ে নৌকা ও জাল ফেলে পালিয়ে যায় জেলেরা। পরে জব্দকৃত জালগুলো জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, সুগন্ধা নদীর নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেরা ইলিশ ধরার সময় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৫১ হাজার মিটার জাল ২৫কেঝি জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ৪ উপজেলায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
ঝালকাঠিতে গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী পলাতক
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠিতে পারিবারিক বিরোধের জেরে পারভিন আক্তার নামে (২৫) এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকালে সদর উপজেলার বেরমহল গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন একটি ডোবা থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেরমহল গ্রামের মৃত আবু হানিফের ছেলে তানজিল হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয় চাঁদপুর সদরের কল্যাণদি এলাকার জিন্নাত আলী মোল্লার মেয়ে পারভিন আক্তারের। তাদের ১৮ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এক বছর ধরে স্বামী ও শাশুড়ির সাথে বিরোধ চলছিল ওই গৃহবধূর। এ অবস্থায় এক মাস আগে পারভিন আক্তার সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিছু দিন আগে তিনি জানতে পারেন স্বামী তাকে খোলা তালাক দিয়েছেন। এর সত্যতা যাচাই করতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি স্বামীর বাড়ির পাশের একটি ঘরে ওঠেন। রাত ১১টার দিকে তার ফোনে কল এলে তিনি দরজা খুলে বাইরে বের হন। এর পর থেকেই নিখোঁজ থাকেন পারভীন। সকালে বাড়ির পাশের একটি ডেবা থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জেরে রাতে পারভিনকে ডেকে নিয়ে তার স্বামী হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
খবর পেয়ে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন ডলি, অতিরক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) প্রশান্ত কুমার দে, সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঝালকাঠি থানার ওসি খলিলুর রহমান জানান, গৃহবধূর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে পিটিয়ে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী তানজিল হাওলাদার পলাতক রয়েছেন।