শুক্রবার ● ২২ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত-৭, আহত-১০ : আটক-১
রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত-৭, আহত-১০ : আটক-১
কক্সবাজার প্রতিনিধি :: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সাত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। পুলিশ সশস্ত্র এক রোহিঙ্গাকে সন্ত্রাসীকে আটক করেছে।
আজ শুক্রবার ২২ অক্টোবর ভোরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১৮ নং ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অস্ত্রসহ মুজিবুর রহমান নামে এক সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছেন ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
নিহত রোহিঙ্গারা হলেন উখিয়ার বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩২), বালুখালী ১ নম্বর ক্যাম্পের ইব্রাহীম হোসেন (২২), বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আজিজুল হক (২৬) ও মোহাম্মদ আমিন (৩২), রোহিঙ্গা শিবিরের ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া’ মাদ্রাসার শিক্ষক ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২–এর নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), মাদ্রাসাশিক্ষক ও ক্যাম্প-২৪–এর হামিদুল্লাহ (৫৫) ও মাদ্রাসাছাত্র ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক- এইচ- ৫২-এর নুর কায়সার(১৫)। এর মধ্যে শেষের তিনজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
এ বিষয়টি কক্সবাজার ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, কি কারণে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। অস্ত্রসহ একজনকে আমরা আটক করেছি। চারজন নিহত হয়েছেন। আরও ৭ জনকে আহত অবস্থায় এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ১১ নাম্বার ক্যাম্প থেকে ধারালো ভয়ংকর অস্ত্রসহ ৪ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ১১ নং ক্যাম্প এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এসব সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অস্ত্রসহ আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উখিয়া ৮, এপিবিএন ময়নারঘোনা ১২ নং পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা বিশেষ অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিহ্নিত ৪ জন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করেছে।
এসব আটক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা হচ্ছে, ১১ নং বালুখালী ক্যাম্পের মৌলভী নুর হোসেন ওরফে মৌলভী মাজেদ(৪২), মো. গণি ওরফে ইউনূস ওরফে আব্দুল্লাহ(৩৫), ১২ নং ক্যাম্পের মৌলভী করিমুল্লাহ(২৮) এবং ৮ নং ক্যাম্পের মৌলভী নুরুল বশর(৩০)।
এঘটনায় ৮ এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) বলেন, গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে দেশীয় ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র এবং ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসময় আরে ১৬/১৭ জন দুষ্কৃতিকারী পালিয়ে যায়।
আটককৃত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের উখিয়া থানায় সোপর্দ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খাঁন বলেন, আজ শুক্রবার ভোর চারটার দিকে উখিয়া বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এতে সাত রোহিঙ্গা নিহত ও আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। ঘটনার পর অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত মুজিবুর রহমান নামের একজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। হামলার জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’ আরসা (আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত) দায়ী করা হয়েছিল। এ সময় আরসার কয়েকজন অস্ত্রধারীর নাম প্রচার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মুহিবুল্লাহকে খুনের ঘটনায় পুলিশ পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই দফায় ওই পাঁচ রোহিঙ্গাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে উখিয়া থানার পুলিশ। তাঁদের একজন মোহাম্মদ ইলিয়াছ কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। কিন্তু মুহিবুল্লাহ হত্যার মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।