শুক্রবার ● ২২ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » কুমিল্লা » কক্সবাজারে আটক ইকবালকে কুমিল্লায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
কক্সবাজারে আটক ইকবালকে কুমিল্লায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
কুমিল্লার পুলিশ নিশ্চিত করেছে কক্সবাজারে আটক ইকবাল হোসেনই সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি, যে কিনা পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এমনটিই নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারে তাকে আটক করা হয়। শুক্রবার দুপুরে ইকবাল হোসেনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেছেন, ইকবালকে কোরআন অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানার চেষ্টা করা হচ্ছে- কেন সে পূজামণ্ডপে কোরআন রেখেছিল। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি-না।
পুলিশের তদন্তের বাইরে জোরালো প্রশ্ন হচ্ছে, কে ৯৯৯-এ ফোন করে জানিয়েছিল মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখা হয়েছে।
১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন, পূজামণ্ডপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। হিংসা ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইকবাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকায়। পুলিশ আগেই বলেছিল, সে একজন মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে। ওই এলাকার নূর আহমেদ আলমের বড় ছেলে ইকবালকে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ খুঁজছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ইকবালকে দেখা গিয়েছিল ওই মণ্ডপে। ইকবালের দুই স্ত্রী। কিছুদিন আগে এক স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। মাঝে মধ্যে সে রঙ মিস্ত্রির কাজ করে। বারবার অবস্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সময় লাগে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভবঘুরে ইকবালকে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি বা পাগল কি করে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার এই ছক তৈরি করতে পারে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেছেন, ইকবাল হোসেন নামে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার নামের আগে পুলিশ একটা শব্দ জুড়ে দিয়েছে। আর সেটা হলো ভবঘুরে। কখনো কখনো এমন যাদের ধরা হয় তাদের বলা হয় পাগল কিংবা ভবঘুরে। তার মতে, এটা কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কাজটি পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। এর পেছনে কেউ রয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ দুটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছে, ঘটনার দিন দিবাগত রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে কিছু সময়ের জন্য মন্ডপ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়েছিল কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হনুমান মূর্তির কোলের উপর রাখা কোরআন শরীফটি সরিয়ে নেয়ার পর কেন ভিডিও করার সুযোগ দিলেন। যে ভিডিও পরবর্তীকালে ভাইরাল হয়েছে।
পূজা উদযাপন পরিষদ আরো বলেছে, রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক দোষারোপের কারণে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কোনো কোনো হামলার ক্ষেত্রে সর্বদলীয় অংশগ্রহণের ঘটনা ঘটেছে।
ওদিকে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সময় ইটের আঘাতে আহত দিলীপ কুমার দাস বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেলকলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে কুমিল্লার ঘটনায় এখন পর্যন্ত আট জনের মৃত্যু হলো।