শুক্রবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » অবৈধ ড্রেজিংয়ে নদীতে ঝালকাঠি নলছিটি‘র বিস্তীর্ণ এলাকা
অবৈধ ড্রেজিংয়ে নদীতে ঝালকাঠি নলছিটি‘র বিস্তীর্ণ এলাকা
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি :: নদীর এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে প্রকৃতির এই নিয়মের বাইরেও মানবসৃষ্ট প্রকৃতির বিরুদ্ধচারণে নদী ক্ষেপে ওঠে। এমনই এক মানবসৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন নলছিটির সদর উপজেলার মগড় ইউনিয়নের সুগন্ধা নদীর পাড়ের জমির মালিকেরা।
নলছিটিতে অবৈধভাবে ড্রেজিং দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একরের পর একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এসব নদীরপাড় ভেঙে নদী এখন সাগরে পরিণত হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের শিকারের ফলে নিঃস্ব হচ্ছেন নদীর পাড়ের মানুষেরা।
এ ব্যাপারে আবেদন-নিবেদন করেও স্থানীয় থানা কিংবা প্রশাসনের অসহযোগিতার কথা জানান ভুক্তভোগীরা। আর বালুখেকোদের অপ-তৎপরতায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন মগড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
এব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়,আমার বাড়ী ঘর নদীর মধ্যে চলে গেছে,ঘরের অর্ধেক নদীতে রাতে নদীর মধ্যে ঘুমাই। বহু নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাবাবুদের কাছে গিয়েও কোন বিচার পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ঝালকাঠির নলছিটিতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ভাঙনের ফলে সুগন্ধা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি, বসতভিটা, হাট-বাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত বিঘা কৃষিজমি।
এদিকে বালুবোঝাই ভারি ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলাচলের কারণে নদী তীরবর্তী গ্রামীণ মাটির সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে এসব বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও বা বালু উত্তোলনের কোনো ইজারা না থাকলেও প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে অবাধে এ বালু উত্তোলন এবং রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
এ থেকে সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এদিকে বালু উত্তোলনের খবর পত্রিকায় প্রকাশ হলে মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান চালানো হলেও অভিযানের একদিন পরই তারা আবারও একইভাবে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বালু সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ঘরবাড়ি বসতভিটা ও কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে এলাকায় বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী। তারা বালু উত্তোলন বন্ধে এমপি আমির হোসেন আমু ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন নদীপারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভৈরবপাশা ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রাম,ফেরিঘাট ও মগড় ইউনিয়নের আমিরাবাদ,উত্তর মগড়,দক্ষিন মগড়,রায়পুর,সুজাবাদসহ বহু গ্রাম নদীর পাড়ের কয়েক কিলোমিটার বসতভিটা ও জমি নদীগর্ভে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থাপনায় মারাত্মক ফাটল।
নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীরপাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলনের ফলে অসময়ে সুগন্ধা নদীতে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড ভাঙন। ভাঙনে নদী তীরবর্তী শত শত বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
এসব জমিতে টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ছিল কৃষকের। কিন্তু নদীগর্ভে জমি চলে যাওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন হচ্ছে এই ইউনিয়নে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন জানান,আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কিছু দিন আগেও জেল জরিমান করা হয়েছে। আবারো অভিযান চানানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।