শুক্রবার ● ৫ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » সমগ্র দেশে হঠাৎ করে শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ
সমগ্র দেশে হঠাৎ করে শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ
সমগ্র দেশে হঠাৎ করে শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী ও সরকারি চাকরি প্রার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভর্তি পরীক্ষা চলছে। আবার প্রতি শুক্রবারে নেওয়া হচ্ছে সরকারি চাকরির পরীক্ষা। প্রায় সব পরীক্ষাই ঢাকা কেন্দ্রিক। এতে চরম বেকায়দায় তারা। করোনাকাল কাটার পর এখন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জনবল নিয়োগের হিড়িক। শুধু এই শুক্রবারই সরকারি অন্তত ১৯টি দপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষা হবে, যেখানে অনেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাতেই পারবেন না; বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে। আবার অনেকে এরইমধ্যে এলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে কী করে যাবেন এমনকি পরীক্ষা দিয়ে কী করে ফিরবেন, সে চিন্তায় উদ্বিগ্ন। শুক্রবার বিকেল ৩টায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাকরির পরীক্ষা। এতে অংশ নিতে চেয়েছিলেন অনেকেই। সে সুযোগ আর সবার হচ্ছে না।
সিলেট থেকে আজহার উদ্দিন খোকন নামে এক চাকরি প্রার্থী বলেন, বিকেল ৩টায় পরীক্ষা। ভেবেছিলাম শুক্রবার সকালে রওনা দেব। এরপর পরীক্ষা দিয়ে আবার চলে আসব। এখন পরীক্ষায় যেতেই পারছি না। খুলনার তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ গ্রাম থেকে শিক্ষা প্রকৌশলের পরীক্ষায় অংশ নিতে গত বুধবার ঢাকায় এসেছেন আলতাফুন্নেছা সাথী। মিরপুরে বড় ভাইয়ের বাসায় উঠেছেন। জানালেন, শুক্রবার বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে রাতের কোচে খুলনায় ফিরে যাবার পরিকল্পনা ছিল। বাড়িতে সাত বছরের ছেলেকে স্বামীর কাছে রেখে এসেছেন। এখন ঢাকায় আটকে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
একটি ব্যাংকের পরীক্ষায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী থেকে আসা মনজুরুল ইসলাম নয়ন সমকালকে বলেন, কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে যেন অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এমন বিপদে ফেলার মানে কী ?
গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের ঘোষণা
গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এই খাতের মালিক-শ্রমিকেরা। তাঁরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যমান ভাড়ায় চালিয়ে পোষাতে পারছেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও আগামীকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এসব পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। পরিবহন সূত্রগুলো বলছে, জ্বালানি তেলের নতুন মূল্যহার কার্যকর হওয়ার পর পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক থেকেই ভাড়া বৃদ্ধি না করার ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ সংগঠনের নেতারা সরকারপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট ঘোষণা করতে চান না। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস, ট্রাকসহ বাণিজ্যিক যানবাহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। বাসমালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এই সংগঠনের মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রস্তাব তৈরি করে। করোনার সময় সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এর মধ্যে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় বাস চালিয়ে আয় দূরে থাক, লোকসান গুনতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন জেলার পরিবহনমালিকেরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে তাঁদের কিছু করার নেই। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামে সম্প্রতি একটি সংগঠন হয়েছে। তারা পণ্যবাহী যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। এ সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান ও সদস্যসচিব তাজুল ইসলাম জানান, মালিক-শ্রমিকেরা বাড়তি দামে জ্বালানি কিনে যানবাহন চালাতে চাইছেন না। সারা দেশ থেকে ফোনে যান বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরাও একমত হয়েছেন।