বুধবার ● ১৬ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষাণার্থীদের বিক্ষোভ
গাজীপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষাণার্থীদের বিক্ষোভ
গাজিপুর প্রতিনিধি :: (১৬ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪০মিঃ) গাজীপুরে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম এবং প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে দূর্রবহারের প্রতিবাদে বিভিন্ন কলেজের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকগণ ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে ৷১৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে এ ঘটনা ঘটে ৷
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকগণ জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে ১৬ মার্চ বুধবার পর্যন্ত ২৪ জন শিক্ষক ১১তম ব্যাচে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন কলেজ থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা, জীববিদ্যা ও পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন ৷ প্রশিক্ষণের সময় তাদের সঙ্গে ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে নানা সময়ে অসৌজন্য আচরণ ও দূর্রবহার করে থাকেন ৷ দিনে দুই বেলা টিফিনের জন্য ৮০ টাকা করে বাজেট থাকলেও তাদের প্রতিবার ৮/১০ টাকার সম পরিমাণ টিফিন প্রদান করা হয় ৷ এ সব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আহাম্মদ উল্লাহ প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে র্দূব্যবহার করেন ৷ প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের অভিযোগ, বিষয় ভিত্তিক ডিজিটাল ক্লাসসমূহ ঠিক মতো করা হয়না ৷ বিদ্যুত্ চলে গেলে জেনারেটর থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়না ৷ ফলে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ক্লাস থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন ৷
প্রশিক্ষণার্থী বড়লেখা ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. নিয়াজ উদ্দিন জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টিকিউআই-২ প্রকল্পের আওতায় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের কন্টিনিউয়াস প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি)-কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ চলছে ওই ইনস্টিটিউটে৷ প্রথম দিকে কয়েকটি ব্যাচে দৈনিক প্রশিক্ষণ ভাতা, যাতায়ত ভাতা দেয়া হলেও মঙ্গলবার শেষ হওয়া প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা না দিয়ে শুধু যাতায়াত ভাতা দিয়ে বিদায় করেন কর্তৃপক্ষ ৷ ১৬ তারিখে বাংলা, পদার্থ বিদ্যা ও জীব বিদ্যার ৮৩ জনের ২৪দিনের কোর্স শেষ হচ্ছে ৷ প্রশিক্ষণার্থীরা জানতে পারেন তাদেরও প্রশিক্ষণ ভাতা না দিয়ে শুধু যাতায়াত ভাতা দেয়া হবে৷ এ বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষকরা দুপুরে বিক্ষোভ করেন ৷
নরসিংদী জেলার পলাশ শিল্পাঞ্চল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জহুরা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মো. আহাম্মদ উল্লাহ বিষয় ভিত্তিক ছাড়া তার লেখা ১০০টাকা মূল্যের আব্বাসীয় স্বর্ণময় যুগে ইলমে তাফসীর, আল হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের উত্পত্তি এবং ক্রমবিকাশ নামের একটি বই কিনতে প্রশিক্ষণার্থীদের বাধ্য করেন ৷ বইটি না কিনতে চাইলে তাদের সাথে দূব্যহার ও নানা হুমকি দেন ৷ এছাড়া প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সামগ্রী না থাকা, নিম্নমানের অপর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা ও বিকল্প বিদ্যুত ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে কোর্সের (প্রশিক্ষণ) পরিচালক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে জানাতে গেলে তিনি তাদের চাকুরির বিষয়ে হুমকি দেয়াসহ দূরব্যহার করেন ৷ এসব কারণে তারা বিকেলের প্রশিক্ষণ ক্লাস বর্জন করেছেন ৷
তারা অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দুপুরে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা এসব অব্যবস্থাপনার কথা অধ্যক্ষকে জানাতে গেলে অধ্যক্ষ প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ৷ পরে তারা দুপুরের পর থেকে ক্লাস বর্জন করে একাডেমিক ভবনের নীচে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেন ৷ এসময় অধ্যক্ষ নীচে নেমে আসেন এবং নরসিংদী জেলার পলাশ শিল্পাঞ্চল কলেজর এক নারী শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করেন ৷ এ ঘটনায় ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করেছে ৷
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মো. আহাম্মদ উল্লাহ জানান, সমপ্রতি প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব বনমালী ভৌমিক বদলী হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের টাকা ছাড় করা যায়নি৷ এতে প্রশিক্ষণ ভাতার অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে ৷ তবে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে দূরব্যহার ও তার লেখা বইটি কিনতে বাধ্য করার বিষয়টি অস্বীকার করেন ৷ তিনি আরো বলেন, নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের পরই অর্থ সংকট কেটে যাবে ৷ বিকল্প হিসেবে আগামী তারিখে তাদের প্রশিক্ষণ ভাতার চেক প্রদানের চিন্তা করা হচ্ছে ৷