সোমবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » হিজড়া প্রার্থীর কাছে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার ভরাডুবি
হিজড়া প্রার্থীর কাছে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার ভরাডুবি
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। তিনি নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানাকে রেকর্ড ভোটে হারিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এ নিয়ে জেলাব্যাপী হৈ চৈ পড়েছে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজরুল ইসলাম ঋতুই একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী, যিনি সরাসরি ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পিরষদ নির্বাচনে রোববার অনুষ্ঠিত ভোটে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার প্রতিক ছিল আনারস। এর আগে কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী সাদিয়া আক্তার পিংকী সরাসরি ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নজরুল ইসলাম ঋতু কালীগঞ্জে উপজেলার দাদপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকায় থাকেন এবং বোনেদের সব বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর ৫ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা এলাকায় তার দলের গুরুমার কাছে বেড়ে ওঠেন। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। এলাকাবাসি জানায়, ঋতু ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৫ বছর ধরে তিনি ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বিভিণœ গ্রামের অসহায় মানুষকে আর্থিক সহযোগীতা করে আসছেন। এভাবেই এলাকায় তার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কি তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোটে দাড় করিয়েছেন। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করলেও আমার কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি। ভোটে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছি, এখন জীবনের বাকি সময় নিজ ইউনিয়নবাসির সেবা করতে চাই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার হিজড়াদের ভোটাধিকার ও নানান সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। হিজড়া হওয়াতে আমার কোন দুঃখ নেই। আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থ্যভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। নির্বাচনে আমাকে নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন কঠোর থাকায় সুষ্ঠ ভোট হয়েছে। এতে আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রাপ্ত ফলাফলে ত্রিলোচরপুর ইউনিয়ন পিরষদ নির্বাচনে ৯টি ভোট কেন্দ্রে নজরুল ইসলাম ঋতু আনারস প্রতিক নিয়ে ৯৫৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি নৌকার নজরুল ইসলাম ছানা পান ৪৫১৭ ভোট। ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ১৯ হাজার ৬’শ। এদিকে হিজড়া প্রার্থীর কাছে নৌকার প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় প্রার্থী নিবার্চনে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ পক্ষপাতিত্ব ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তৃনমুলের অভিযোগ, জন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ার কারণে আর হিজড়া প্রার্থীর কাছে হারতে হলো।
ঝিনাইদহের দুই উপজেলায় ৯ টিতে নৌকা, ৭ টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে সুন্দুরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকার ওহিদুজ্জামান ওদু (বিনা-প্রতিদ্বন্দিতায়), জামাল ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোদাচ্ছের হোসেন মন্ডল, কোলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী আলা-উদ্দিন আল আজাদ, নিয়ামতপুর ইউনিয়নে নৌকার রাজু আহম্মেদ রনি লষ্কর, সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নে নৌকার নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী সতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ওরফে ঋতু হিজড়া, রায়গ্রাম ইউনিয়নে নৌকার আলী হোসেন অপু (বিনা-প্রতিদ্বন্দিতায়), মালিয়াট ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আজিজুল ইসলাম খাঁ, বারোবাজার ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ (বিনা-প্রতিদ্বন্দিতায়), কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আয়ুব হোসেন ও রাখালগাছি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মহিদুল ইসলাম মন্টু। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকায় থেকে যে ভাবে রাত দিন নৌকার পক্ষে ভোট করেছেন তা না হলে নৌকার প্রার্থীদের আরো পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হতো। ভোটের দিনও কালো গাড়িতে প্রেস স্টিকার লাগিয়ে দেখভাল করেছেন তিনি। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে। ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে নৌকা জয়লাভ করেছে। বাকী চারটিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। বেরসকারী ফলাফলে দেখা গেছে দোড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীনকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল জলিল বিশ^াস, কুশনা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাবুজ্জামান সবুজ, বলুহর ইউনিয়নে বিদ্রোহী নজরুল ইসলাম, সাবদারপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান ও এলাঙ্গী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মিজানুর রহমান খান। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কোটচাঁদপুরে একটি নৌকা, চারটি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুকি ঘটেছে। ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে নৌকা জয়লাভ করেছে। বাকী চারটিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। বেরসকারী ফলাফলে দেখা গেছে দোড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীনকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল জলিল বিশ^াস, কুশনা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাবুজ্জামান সবুজ, বলুহর ইউনিয়নে বিদ্রোহী নজরুল ইসলাম, সাবদারপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান ও এলাঙ্গী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মিজানুর রহমান খান। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শৈলকুপায় নির্বাচন নিয়ে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২০
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মূমূর্ষ অবস্থায় শৈলকুপা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ তিন রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের বিপ্রবকদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন শৈলকুপা থানার এস আই সিহাবুল ইসলাম, কনস্টেবল খাদেমুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, গ্রামবাসি মর্জিনা খাতুন, মেহেদী হাসান, আইয়ুব হোসেন, আব্দুর রহিম, নবিরুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, লিটন আলী, হাফিজুর রহমান, নবাব আলী, রাসেল হোসেন, আব্দুর রফিক ও আজিজুর রহমানসহ ২০ জন। পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিপ্রবকদিয়া গ্রামে আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জিকু ও বিপ্রবগদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান সাচ্চু গ্রুপের লোকজন দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। রোববার সকালে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী দু’দলে বিভক্ত হয়ে লাঠি-সোটা, রাম দা, হাসুয়া, লোহার রডসহ দেশীয়ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। এ প্রসঙ্গে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে এ ঘটনায় কাউকে এখনও আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্লেখ্য শনিবার (২৭ নভেম্বর) শৈলকুপা উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। তবে পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে ওসি জানান।
কালীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে ১৩৩ ভোট, মেম্বার পদে মাত্র ২টি ভোট এবার তৃতীয়বারের মতো করছেন মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দিতা
ঝিনাইদহ :: কে এম জালাল উদ্দিন। তবে ‘জালাল কবিরাজ’ নামেই তিনি এলাকায় বেশি পরিচিত। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামের মৃত আরশেদ আলীর ছেলে। রোববার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে (১ নম্বর ওয়ার্ড) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পেয়েছেন মাত্র তিন ভোট। এনিয়ে ওই ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিলেন জালাল কবিরাজ। ২০১১ সালের নির্বাচনে ১৩৩ ভোট পেয়েছিলেন। পরে ২০১৬ সালে পান মাত্র দুই ভোট। এবারের নির্বাচনে তার ওয়ার্ডে আরও তিনজন মেম্বার প্রার্থী ছিলেন। প্রার্থীদের মধ্যে হুমায়ুন কবির ফুটবল প্রতীকে ৬৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৪১০ ভোট এবং মির্জা আব্বাছ টিউবওয়েল প্রতীকে একটি ভোটও পাননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের দুই নির্বাচনে এলাকার কোনো ব্যক্তি জালালের সমর্থন ও প্রস্তাবকারী ছিলেন না। পরে উপজেলার দুই কর্মকর্তা সেখানে তাদের নাম লিখে সহযোগিতা করেন। তবে এবার তার নির্বাচনী ফর্মে স্থানীয় দুইজন প্রস্তাব ও সমর্থন করেছিলেন। আগের দুই নির্বাচনে নিজেই ভ্যান চালিয়ে মাইকে করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এবার মাইকিং না করলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হাতে তার লাটিম প্রতীকের পোস্টার ধরিয়ে দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন জালাল। হলফনামা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন জালাল উদ্দিন। তার সংসারে তিন স্ত্রী, চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে। তিন ভোট পেয়ে ফেল করলেও তার কোন আক্ষেপ নেই। নিজের পরিবারেই রয়েছে ৪ ভোট। কিন্তু নির্বাচনে কেন তিনি ৩ ভোট পেলেন, তার কোন উত্তর দিতে পারেননি জালাল কবিরাজ।