সোমবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » নবীগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে ১৩ ইউপির মধ্যে ৪টি নৌকা ৪টি বিদ্রোহী,৩টি বিএনপি,২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী
নবীগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে ১৩ ইউপির মধ্যে ৪টি নৌকা ৪টি বিদ্রোহী,৩টি বিএনপি,২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নবীগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি নৌকা ৪ টি বিদ্রোহী,৩ টি বিএনপি,২ টিতে সতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।
নির্বাচনে ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৪ টিতে নৌকার বিজয় এবং বাকী গুলোতে ভরাডুবি নিয়ে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজনীতির মাঠে থাকা নেতা ও দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জনবিচ্ছিন্নদের দলীয় প্রতীক দেয়ার কারণে নৌকার এমন বিপর্যয় হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নবীগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়ন গুলো হচ্ছে বড় ভাকৈর(পঞ্চিম), বড় ভাকৈর(পূর্ব), ইনাতগঞ্জ , দীঘলবাক, আউশকান্দি, কুর্শি, করগাঁও, নবীগঞ্জ সদর , বাউসা, দেবপাড়া, গজনাইপুর, কালিয়ার ভাঙ্গা ও পানিউমদা।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়
১নং বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রঙ্গ লাল দাশ(সতন্ত্র) ঘোড়া প্রতীকে ৪২০৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি নৌকার প্রার্থী সমর দাশ চন্দ্র দাশ পেয়েছেন ২৯৫০ ভোট অপর প্রার্থী সতন্ত্র বর্তমান চেয়ারম্যান সত্যজিত দাশ পেয়েছেন ২২৮৫ ভোট।
২নং বড় ভাকৈর পুর্ব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্তার হোসেন নৌকা প্রতিকে ৩৬০১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন।
নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেহের আলী মালদার সতন্ত্র আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩১২০ ভোট। অপর সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খালেদ মোশারফ সতন্ত্র ৩৪২৪ ভোাট এবং দিদার আহমদ সতন্ত্র মোটর সাইকেল প্রতিকে পেয়েছেন ৪১০ ভোট।
৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নোমান হোসেন ঘোড়া প্রতিকে ৬৭৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অপর প্রার্থী জায়েদ উদ্দিন সতন্ত্র মোটর সাইকেল প্রতিকে ৪৮১২, মোঃ আছাবুর রহমার নৌকা ১৫৮২,মোঃ মস্তাফা কামাল সতন্ত্র আনারস প্রতিকে ৭৫৭, মোঃ শাহিন আহমদ জাঃপাঃ লাঙ্গল ১৯৭ ভোট পেয়েছেন ।
৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আব্দুল ছালিক আনারস প্রতিকে ৩৯৮৫ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ এওলা মিয়া ৩৪৬০,মোঃ আব্দুল গফফার সতন্ত্র ঘোড়া ৩৪০৫,মোঃ এলাওর মিয়া সতন্ত্র চশমা ৫২০,মোঃ আব্দুল হান্নান জাঃপাঃ লাঙ্গল প্রতিকে পেয়েছেন ৩২৫ ভোট।
৫ নং আউশকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী নৌকা প্রতিকে ৫৭২৫ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোফাজ্জল হক সতন্ত্র চশমা প্রতিকে ৩৭৫৯ ভোট পেয়েছেন । অপর প্রার্থী এজহারুল হক চৌধুরী সতন্ত্র আনারস ২১৭৪ ভোট এবং মোঃ আব্দুল হামিদ নিকছন সতন্ত্র ঘোড়া প্রতিকে পেয়েছেন ১১৩৯ ভোট।
৬ নং কুর্শি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ খালেদুর রহমান চৌধুরী আনারস প্রতিকে ৫০৫৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মুকিত চশমা প্রতিকে ৪৫০১,বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুসা নৌকা প্রতিকে ৩২৩৮ ভোট,শামসুল হুদা চৌধুরী সতন্ত্র ঘোড়া ৬২১ ভোট, আবু তালিম সতন্ত্র সোটর সাইকেল ৩২১ ভোট এবং শেখ মোহাম্মদ আব্দুল গফুর সতন্ত্র রজনীগন্ধা ১১০ ভোট পেয়েছেন।
৭ নং করগাঁও ইউনয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিমললেন্দু দাশ রানা ঘোড়া প্রতিকে ৭৭২৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ছাইম উদ্দিন আনারস প্রতিকে ৬০৯১ ভোট এবং বজলুর রহমান নৌকা প্রতিকে ১৬৫৬ ভোট,শেখ মোঃ ইসহাক মিয়া সতন্ত্র মোটর সাইকেল ১২৮ ভোট,মোঃ সাইফুল ইসলাম জাঃপা লাঙ্গল প্রতিকে পেয়েছেন ১০২ ভোট।
৮ নং সদর ইউনিয়নে মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতিকে ৪৪৩৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল ইসলাম চৌধুরী সাজু আনারস প্রতিকে ৩৫০৪ ভোট,জাকির হোসেন চৌধুরী সতন্ত্র মোটর সাইকেল প্রতিকে ২১৪৩ ভোট,মুফতি মিয়া লাঙ্গল ৬৮৮ ভোট,হাফেজ কাজী রোহামা ইর রশিদ চৌধুরী ইসলামী আন্দোলন হাতপাখা প্রতিকে ২৫৯ ভোট,মোঃ আতাউর রহান চৌধুরী ঘোড়া প্রতিকে ৯৩ ভোট এবং খাজা ওসমানী খাকী চৌদুরী সতন্ত্র চশমা পেয়েছেন ৭০ ভোট ।
৯ নং বাউসা ইউনয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিকুল ইসলাম শিশু আনারস প্রতিকে ৬২০৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামিলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী ঘোড়া ৫১০৪ ভোট এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সিদ্দীক নৌকা প্রতিকে পেয়েছেন ৩৯১৯ ভোট ।
১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে সতন্ত্র প্রার্থী শাহ রিয়াজ নাদির সুমন চশমা প্রতিকে ৫৯৬০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত চৌধুরী পেয়েছেন ৩৫৮৪ ভোট। অপর প্রার্থী শামীম আহমদ সতন্ত্র ঘোড়া প্রতিকে ৩২২০ ভোট,মোঃ ফখরুল ইসলাম সতন্ত্র মোটরসাইকেল ৬০৪,মোঃ কুহিনুর মিয়া সতন্ত্র আনারস প্রতিকে পেয়েছেন ৩৮৪ ভোট।
১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল আনারস প্রতিকে ৬৮৬৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তা নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি
বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিউল আলম চশমা প্রতিকে পেয়েছেন ৪৫৫৯ ভোট। নৌকার মনোনীত সাবের আহমদ চৌদুরী ১৯৭১ ভোট,
অপর সতন্ত্র প্রার্থী আবুল খায়ের খায়েদ ঘোড়া ৪৫৩ ভোট এবং হাফিজ মোঃ আইয়ুব আলী সতন্ত্র অটোরিক্সা ৬৭ ভোট পেয়েছেন।
১২ নং কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুল হক চৌধুরী আনারস প্রতিকে ৩৬১৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিদ্দকী ঘােড়া প্রতিকে পেয়েছেন ২৮৩৪ ভোট । অপর প্রার্থী হাজি আজিজ আহমদ মেরাজ সতন্ত্র চশমা প্রতিকে ২৫৩২ ভোট, ফরহাদ আহমদ নৌকা প্রতিকে ২৩৫৭ ভোট এবং হাফিজুর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল প্রতিকে ১৩৬ ভােট পেয়েছেন।
১৩নং পানিউন্দা ইউনয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান নৌকা প্রতিকে ৭৩৫৮ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল হাসান মামুন আনারস প্রতিকে পেয়েছেন ৫৫১৯ ভোট।
উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ০৪ প্রার্থী, আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী ০৪, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ০৩ জন ও সতন্ত্র প্রার্থী ০২ নির্বাচিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের দলের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কারণে নৌকার এমর ভরাডুবি হয়েছে। নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, জনগণের সাথে যাদের সম্পর্ক নেই তাদেরকে বিভিন্ন লবিংয়ে দলীয় প্রতীক পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটের এমন ফলাফল থেকে আগামী দিনের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গতি গোবিন্দ দাশ জানান, আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে থেকে একাধিক নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। কেন্দ্র থেকে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে থেকে অনেকে নির্বাচনে অসহযোগিতা করেছেন।