বৃহস্পতিবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ঢাকা » খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে : দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে বিশিষ্ট্য ২২ নারী নেত্রীর বিবৃতি
খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে : দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে বিশিষ্ট্য ২২ নারী নেত্রীর বিবৃতি
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি বাংলাদেশের একটি বড় দল বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিশেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিতবাংলাদেশেরপ্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে তিনি কয়েকটি মামলার আসামী এবং দণ্ডপ্রাপ্ত। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে তার মোকাবিলা তিনি আইনীভাবে করছেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত২৫ মাস কারাবাস খেটেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। তাঁর শারিরীক নানা জটিলতার কারণে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক কারণে সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাঁকে ছয় মাস করে করে বাড়ীতে রেখে দেশের ভেতর চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছেন।
বর্তমান সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হচ্ছে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বেশ কয়েক ধরণের শারিরীক সমস্যায় ভুগছেন, যার সর্বাঙ্গীণ চিকিৎসা এই দেশে সম্ভব নয়বলে বিভিন্ন সুত্র থেকেজানা যায়। সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী ‘অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন’ হিশাবে গণ্য হয় (দেখুন, Convention against Torture and Other Cruel, Inhuman or Degrading Treatment or Punishment)। নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার ‘ব্যক্তির অন্তর্গত মর্যাদা’ (rights derived from the inherent dignity of the human person) থেকে উদ্ভুত বলে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত।
বেগম খালেদা জিয়ার বয়স ৭৭ বছর। মেডিকেল বোর্ডের মতে সর্বশেষ শারিরীক জটিলতা হচ্ছে তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন এবং এ পর্যন্ত তিন দফায় রক্তক্ষরণহয়েছে। তৃতীয়বার রক্তক্ষরণ অনেক বেশি ছিল। লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ। চিকিৎসকদের মতে খালেদা জিয়ার লিভারে পরিপাকীয় চাপ কমাতে বাইপাস প্রক্রিয়া সঞ্চালন নালিতৈরি করতে হবে। এটি টিপস (টিআইপিএস ট্রান্সজাগিউলার ইন্ট্রাহিপাটিকপোর্টোসিস্টেমিকশান্ট)। পদ্ধতিতে করা হয়যার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবংদক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল বাংলাদেশে নাই। বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা হিশাবে দেয়া হয়। তাঁর শারিরীক অবস্থা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল থাকা অবস্থায় তাঁকে বিদেশে চিকিৎসারজন্য প্রেরণ করাই সর্বাপেক্ষা কাম্য ।
বেগম খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে বিদেশে হলেও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও বিধান অনুযায়ী কোন রাষ্ট্রেরই বাধা দেওয়া কিম্বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি অনুচিতও অগ্রহণযোগ্য।
সময় খুব বেশি নেই, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ি প্রযুক্তিগত এবং ব্যবস্থাপনা দিক থেকে যে দেশে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব সেখানেই বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে পাঠানো হোক। দ্রুত বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
স্বাক্ষর করেছেন,
১। ডা. নায়লা জামান খান, শিশু বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রী
২। শিরীন প হক, নারী নেত্রী
৩। ফরিদা আখতার , নারী নেত্রী
৪। শারমিন মোরশেদ, পরিবেশ আন্দোলন নেত্রী
৫। সুলতানা আখতার রুবী, নারী নেত্রী ও আইনজীবি
৬। দিলশান পারুল, নারী নেত্রী
৭। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরি, শিক্ষক
৮। সায়েদা গুলরুখ, সাংবাদিক
৯। সাইদা আখতার, নারী আন্দোলন কর্মী
১০। সীমা দাস সীমু, শ্রমিক আন্দোলন কর্মী
১১। ময়মুনা আখতার, উন্নয়ন কর্মী
১২। সামিয়া আফরিন, নারী নেত্রী,
১৩। বহ্নিশিখা জামালী, রাজনৈতিক নেত্রী
১৪। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবি ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী
১৫। মাহা মীর্জা, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
১৬। নাজমুন নাহার, নারী আন্দোলন কর্মী
১৭। মীনা মাশরাফী, লেখিকা
১৮। সামসুন নাহার- সমাজ কর্মী
১৯। রেহনুমা আহমেদ, লেখক
২০। সেলিনা রশীদ- সমাজ কর্মী
২১। আন্জুমানারা শিউলি - লেখিকা
২২। রুবিনা রহমান - সমাজ কর্মী