বৃহস্পতিবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আজ চুক্তির ২৪ বছর পর মনে হচ্ছে, চুক্তি করে আমি অপরাধ করেছি : সন্তু লারমা
আজ চুক্তির ২৪ বছর পর মনে হচ্ছে, চুক্তি করে আমি অপরাধ করেছি : সন্তু লারমা
১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে তিনি কোনো অপরাধ করেছেন কি না, সরকারের কাছে প্রশ্ন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটা বড় সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা সমাধানে আমি সরকারকে সহযোগিতা করেছি। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমি সেই সহযোগিতা দিয়েছি। কিন্তু আজ চুক্তির ২৪ বছর পর মনে হচ্ছে, চুক্তি করে আমি অপরাধ করেছি। আমাকে এবং পিসিজেএসএসকে এখন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে পিসিজেএসএস-মুল ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন সন্তু লারমা।
আজ বৃহস্পতিবার ২ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। এর মাধ্যমে দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা সশস্ত্র আন্দোলনের সমাপ্তি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় ছিল। আর যখন চুক্তির দুই যুগ পূর্তি হচ্ছে, তখনো সেই সরকার ক্ষমতায় আছে। কিন্তু সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয়। বরং শাসক দল এখন পাহাড়ে দমন–পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।
সন্তু লারমা বলেন, ‘সরকার মনে করে আমি সন্ত্রাসী। স্বাধীনতার জন্য নয়, শুধু অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের জন্য আমরা করেছিলাম; কিন্তু এরপর আমরা চুক্তি করেছি। আমাদের যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে চুক্তি করতাম না। কিন্তু সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে আজ পদে পদে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ের মানুষের ওপর যে নির্যাতন ও দমন-পীড়ন চলছে, তা বর্ণনাতীত। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যাবে না। কিন্তু পাহাড়ে গেলে বোঝা যাবে, পাহাড়ি মানুষদের কষ্ট–বেদনার কথা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন বাদ দিয়ে সরকার দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। পিসিজেএসএস কর্মীদের একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাড়ে ৩০০ মামলা হয়েছে।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন এক বড় কারাগার। সেখানে হাজতিরা আজ যেমন করে থাকে, তেমন করে আছে পাহাড়ের মানুষ।
সাবেক এই গেরিলা নেতা বলেন, পাহাড় অশান্ত থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না। কাউকে কষ্টে রেখে ভালো থাকা যায় না। সরকারের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি আবারও জানান সন্তু লারমা।
আজকের অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আজ বিপন্ন। পাহাড় বিপন্ন এবং বিপন্ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। চুক্তি বাস্তবায়ন না করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার কথা।
আজকের অনুষ্ঠানে অন্যতম আলোচক ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি দীর্ঘসময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোচনার প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। মেনন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির এই দিবস আনন্দের উৎস হতে পারত। কিন্তু এ দিবসে কাউকে অভিনন্দন জানানো যাচ্ছে না। চুক্তির বাস্তবায়নের করুণ হাল এর জন্য দায়ী।
আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, পর্যটনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফাইভ স্টার হোটেল হচ্ছে। পাহাড়িদের ভূমির অধিকার লঙ্ঘন করে এসব কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যাঁরা বাধা দেন, তাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহী। চুক্তিটি কোনো দুই ব্যক্তির চুক্তি ছিল না। এই চুক্তি করেছিল রাষ্ট্র। তাই রাষ্ট্রকে তার কথা রাখতে হবে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সব সময় আন্তরিকভাবে চেষ্টা সহযোগিতা করেছে। তারা কোনো দিন এর বিরুদ্ধাচরণ করেনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আধিপত্যবাদী আচরণের জন্যই চুক্তির সফল বাস্তবায়ন আটকে আছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মেইনথেইন প্রমিলা।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সাদেকা হালিম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ ও আইনজীবী সারা হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।