বৃহস্পতিবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে
ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের কৃষকদের স্বপ্ন এখনো পানির নিচে ভাসছে। চারিদিকে কেবলই যেন হা-হুতাশ। ধানের ক্ষেত, সবজি, বীজতলাসহ সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। রসুন, মরিচ, পেয়াজ, সরিষা, গম ও আলু রোপনের পর পনিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ সব ফসলের ভবিষ্যাত নেই। এ ভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবার নতুন করে প্রস্তুত নেওয়ার সমর্থও অনেক কৃষকের নেই। ফলে দায় দেনায় জড়িয়ে এ বছর পথে বসার উপক্রম হবে কৃষকদের। ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য রীতিমতো উদ্বেগজনক। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে জেলার ৩ লাখ ৫৬ হাজার কৃষক পথে বসেছে। তাদের চলতি আবাদ মৌসুমে ৪১ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শত শত হেক্টর জমির পেয়াজ ও বোরো ধানের বীজতলা জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে শুর করার মতো আর্থিক সঙ্গতি অনেকের নেই। এ সব কৃষক পরিবারের এখন মাথায় হাত। ফসল না হলে আগামী দিনগুলোতে কি ভাবে সংসার চালাবেন এই চিন্তায় অনেকে বিপর্যস্ত। ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সবজি ক্ষেত। সব ধরণের সবজি মিলিয়ে জেলায় ৭৯০২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এ বছর জেলায় সবজির দাম আরো বৃদ্ধি হতে পারে। এছাড়া ৪২০ হেক্টর জমির বোরো বীজতলা, ৪০০৭ হেক্টর জমির গম, ৯৮৬ হেক্টর জমির আলু, ৭৮৩৮ হেক্টর জমির সরিষা, ৮৩৪২ হেক্টর জমির ভুট্টা ক্ষেত, ৬৪৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, ১৭৮৫ হেক্টর জমির রসুন, ৬৭৫৫ হেক্টর জমির মসুর, ৪৫৫ হেক্টর জমির মরিচ ও ২৩৯২ হেক্টর জমির আমন ধান ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে ব্যাপক ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ভুট্টার ক্ষেত ছাড়া বাকী ফসলগুলো বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই বলে কৃষিবিদরা মনে করেন। ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, প্রাথমিক ভাবে আমরা ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা কৃষকদের নানা ভাবে সহায়তা করছি। যারা সরকারী ভাবে কৃষি উপকরণ পেয়েছিল, কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তাদেরও এই মুহুর্তে কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ভুট্টার ক্ষেতগুলো তেমন ক্ষতি হবে না। তাবাদে প্রায় সব ফসলের ক্ষেত কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬১২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল। ৯৮% জমির পাকা ধান কাটা শেষ হয়েছিল। কিন্ত যারা গরুর খাবার তৈরীর জন্য মাঠে ধান শুকাচ্ছিল, কেবল তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই ক্ষতির পরিমান ২৩৯২ হেক্টর বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে দুর্ভোগে হাজারও মানুষের মরণফাঁদ
ঝিনাইদহ :: ঘূর্নিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট দুদিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পিচ-খোয়া উঠে গেছে। ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টিতেই জমছে পানি। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন যানবাহন। এ অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ নিমতলা বাসস্টান্ড যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে। সড়কের এমন বেহাল দশায় প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুঘটনা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারও মানুষ। কালীগঞ্জ উপজেলা বাসস্টান্ডে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ নানান যানবাহন চলাচল করে। এটি ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর,ঢাকা, কুষ্টিয়াসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় যাওয়ার একমাত্র যাতায়াতের প্রদান সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতে ২ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। কালীগঞ্জ টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের সড়কটি উভয় পাশে পিচ ও খোয়া উঠে দেবে গেছে। চলাচলের বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। মেইন বাসষ্টান্ডে ও ঠিক একই অবস্থায় পরিনত। এ সড়ক দিয়ে দিন রাত ২৪ ঘন্টা যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি মেরামত করা হয় না। মাঝে মধ্যে সড়কে ইটের খোয়া ফেলে ও মহাসড়কে ইটের সলিং বসিয়ে সংস্কার করার চেষ্টা করা হলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সেখানে আবার খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যায়। বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে বড় বড় গর্ত আর বৃষ্টির পানি জমে কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়। যার ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হয় এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা বিভিন্ন যানবাহন।যানবাহন চালকেরা জানান, সহজে চলাচলের জন্য মহাসড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ রাস্তাটির এখন যে অবস্থা তাতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গাচোড়া আর গর্তের কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। অপরদিকে খানাখন্দের কারণে সময় ও তেল খরচও বেশি লাগে যাতে করে ভোগান্তির সীমা থাকে না তাদের। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বারবার ওপর মহলে বলা হয়েছে সড়কটি অতি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
শৈলকূপার রবিউল ছাত্রাবাসে হামলা; ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে জখম
ঝিনাইদহ :: ছাত্রাবাসে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের উচ্চস্বরে কথাবার্তায় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের। আর এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন। প্রথমে ছাত্রদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক ও পরে দলবল নিয়ে ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়ে ৬ ছাত্রকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের রবিউল ছাত্রাবাসে। এসময় ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম খাঁন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালেও তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভূক্তভোগীরা জানান, ত্রিবেনী রোডের সাকসেস কোচিং সংলগ্ন রবিউল ইসলাম মেসে ১২ জন ইবির শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। মেসের ছাত্র কামাল উদ্দীনের মাস্টার্স শেষ হওয়ায় তারা গভীর রাত পর্যন্ত সবাই মিলে ট্যুরের পরিকল্পনা করছিলেন। মেসের পাশেই ইবির আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের বাসা। মঙ্গলবার রাতে সহকারী রেজিষ্ট্রার জাহিদ মেসে এসে কামালকে ডেকে বলেন তাদের চিল্লাচিল্লির কারণে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এর আগেও মেসে শিক্ষার্থীরা চিল্লাচিল্লি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। মেসে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে সহকারী রেজিষ্ট্রারের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। জাহিদ শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যান। গভীর রাতে লোকজন নিয়ে মেসে ঢুকে ছাত্রদের মারধর করেন। হামলার মুখে শিক্ষার্থীরা মেস থেকে ক্যাম্পাসে চলে যান এবং গুরুতরসহ আহত অন্তত পাঁচ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নেন। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও ইবি থানাকে জানালে তারাও ঘটনাস্থলে আসেন। ভূক্তভোগী কামাল উদ্দীন বলেন, জাহিদ ভাই আমাদের পাশের মেসে থাকেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি আমাদের মেসে আসেন এবং আমরা প্রতিনিয়ত চিল্লাচিল্লি করি বলে অভিযোগ করেন। পরে তিনি ৩০/৪০ জনকে নিয়ে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা করেন। জাহিদ নিজেও আমাকে মেরেছে। সহকারী রেজিষ্ট্রার জাহিদ হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। মারামারির ঘটনার সাথে আমার সংশিষ্টতা নেই। উল্টো শিক্ষার্থীরা আমাকে বিনা কারণে অভিযুক্ত করে আমার বাড়ির গেটে ইট পাটকেল মেরেছে। আমি বিষয়টি প্রক্টরকে জানিয়েছি। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মেস মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড.শফিকুল ইসলাম ও প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান। তারা বলেন, ঘটনাটি তদন্তে সহকারী প্রক্টর শফিককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।