মঙ্গলবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » হরিণাকুন্ডুতে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৪৬
হরিণাকুন্ডুতে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৪৬
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের লস্কার পাড়ায় রবিবার সকালে আওয়ামলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এক রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও ২৬ জনকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান। হরিণাকুন্ডুর রঘুনাথপুর ইউনয়নে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি বশির উদ্দীন সমর্থিত দুই মেম্বর প্রার্থীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ও এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করে। নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও রেজাউলের সমর্থকদের মধ্যে আহতরা হলেন, শ্রীফলতলা গ্রামের আইরণ নেছা, ফাহিমা খাতুন, খোদেজা বেগম, আইয়ূব হোসন, তাজুল ইসলাম, তারেক, মিল্টন, জালাল হোসেন, তক্কেল হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল, জামাল মুন্তাজ, মেহেদী হাসান, দাদুল মিয়া, বিশারত আলী, আলামিন ও আব্দুল আজিজ। সাইদুল মেম্বর ও বশির গ্রুপের আহতরা হলেন, নজরুল ইসলাম, শিপুল, আব্দুল লতিফ, খায়রুল ইসলাম, আবু সাইদ, সেলিম (১), মসলেম উদ্দীন, দিদার হোসেন, সাগর, কামরুল, সেলিম, বেগম খাতুন, শাহিনুল ইসলাম, হাসেম আলীম, জমির উদ্দীন ও নরুল ইসলাম। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, আগামী ৫ জানুয়ারী ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীফলতলা গ্রামে সাইদুল ইসলাম মেম্বর ও রেজাউল ইসলাম মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই দুই মেম্বর আবার নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির উদ্দীনের সমর্থক। রোববার সকালে শ্রীফলতলা গ্রামের একটি চায়ের দোকানে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাইদুলের সমর্থক জমির লস্করকে মারধর করে নৌকা প্রাথীর্র সমর্থক রেজাউল ও আজিজ লস্কার। এ ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষের লোকজন রামদা, ঢাল, ভেলা, লাঠি সোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। সংঘর্ষে গোটা গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও হরিনাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রীফলতলা গ্রামে সাইদুল ইসলাম মেম্বর অভিযোগ করেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে বর্তমান চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল ও তার চাচাতো ভাই রওশন আলী নির্বাচনী এক সমাবেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী বশিরের লোকজনকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গনধোলায় দেবার উস্কানী দিয়ে যান। এরপরই তাদের সমর্থক আজিজ লস্কার চায়ের দোকানে জামিরকে মারধর করেন। এদিকে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টারের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল অভিযোগ করেন বিনা উস্কানীতে বিদ্রোহী প্রার্থী বশিরের লোকজন তার সমর্থকদের মারধর করেন। এ ঘটনার জন্য সাইদুল মেম্বর ও বশির দায়ী বলেও রাসেল জানান। এদিকে অভিযোগ প্রত্যাখান করে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি বশির উদ্দীন জানান, ২০১৬ সালে ৭ মে নৌকার প্রার্থী মুনছুর আলীর বিরুদ্ধে রাকিবুল হাসান রাসেল ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মাদক ব্যবসাসহ এহেন কোন কাজ নেই যা ইউনিয়নে করেননি। টিআর, কাবিটা, এলজিএসপি, এডিবি ও কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা লুটপাট করেছে। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড টাকা ছাড়া করেনি। নিজের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত একাধিক ঘর নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। যার অভিযোগ হরিণাকুন্ডুর ইউএনও তদন্ত করেছেন। গোটা ইউনিয়নে তিনি ত্রাসের রাজত্ব করে রেখেছেন। ২০১৬ সালে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করা রাকিবুল হাসান রাসেল মনোনয়ন পাবেন না বলে গ্রুপিং লবিং করে তার আশিতিপর বৃদ্ধ পিতাকে নৌকার মনোনয়ন এনে দিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়া ওই পরিবারের হাতেই আবার নৌকা প্রতিক তুলে দিয়ে তৃনমুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে বশির অভিযোগ করেন। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, সংঘর্ষের বিষয়ে থানায় মামলার পক্রিয়া চলছে।
ঝিনাইদহ সদরে ১৫ ইউপিতে ৩৫ প্রভাবশালী নেতা বহিস্কার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বাঘা বাঘা ৩৫ প্রভাবশালী নেতাকে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট করায় বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃত নেতারা উপজেলা ও আঞ্চলিক রাজরীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের ৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। দলের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ আঃ রশীদ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪র্থ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বহিস্কৃতদের মধ্যে অনেকেই তালিকাভুক্ত রাজাকার পরিবারের সন্তান রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। দলীয় সতর্কতা ও নির্দেশ ভঙ্গ করে ১৫ ইউনিয়নে ৩৫ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থতা প্রত্যাহার না করায় তাদের বহিস্কার করা হয়। বহিস্কৃতরা হলেন, ১ নং সাধুহাটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজির উদ্দিন, ২ নং মধুহাটিতে আলতাফ হোসেন, ফারুক হোসেন জুয়েল, তহুরুল ইসলাম, ৪ নং হলিধানী ইউনিয়নে অ্যাড এনামুল হক নিলু, ফাতিমা খাতুন, যুবলীগ নেতা নুর এ আলম বিপ্লব, হারুন অর রশিদ মিয়া, ৫ নং কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নে সাহিদুর রহমান সন্টু, সিরাজুল করিম, ৬ নং গান্না ইউনিয়নে নাসির উদ্দিন মালিতা, ময়নাল হোসেন, ৭ নং মহারাজপুরে আবু বকর, খুরশিদ আলম, ৯ নং পোড়াহাটি ইউনিয়নে আশরাফ আলী, মোঃ বদিউজ্জামান এ্যপো, ১০ নং হরিশংকরপুর ইউনিয়নে খন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ, ১১ নং পদ্মকর ইউনিয়নে বিকাশ বিশ্বাস, ১২ নং দোগাছি ইউনিয়নে আবদুল মান্নান, গোলাম কিবরিয়া কাজল, জাহাঙ্গীর আলম শিবলী, ফয়েজুল্লাহ ফয়েজ, সিরাজুল ইসলাম, ১৩ নং ফুরসুন্ধি ইউনিয়নে আবু সাইদ শিকদার, ১৪ নং ঘোড়শাল ইউনিয়নে তিতাশ বিশ্বাস, জাহিদুল ইসলাম, ১৫ নং কালীচরণপুর ইউনিয়নে এনামুল বিশ্বাস, কাইয়ুম হোসাইন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, ১৭ নং নলডাঙ্গায় মোলায়েম খান, কবির হোসেন, রবিউল ইসলাম, সাইফুল আলম ও মোঃ রাকিবুল ইসলাম লিমন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ আঃ রশীদ বলেন, শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই ভোট করবেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেক নেতা আছেন যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে গোপনে কাজ করছেন। তাদের সহায়তা করছেন। নৌকার প্রার্থীরা অভিযোগ দিলে আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীর সহায়তাকারীর বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।