মঙ্গলবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » চুয়েটে যন্ত্রকৌশল বিভাগের তিনদিনব্যাপী ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সমাপ্ত
চুয়েটে যন্ত্রকৌশল বিভাগের তিনদিনব্যাপী ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সমাপ্ত
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-এর মাননীয় সদদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, “আমরা এখন ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি। এই শিল্পবিপ্লব আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। চুয়েট সঠিক পথেই হাঁটছে। তাদের শিক্ষার্থীদের সবরকমের পোটেনশিয়ালিটি রয়েছে। শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটরে সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সেভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সম্প্রতি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তবে এটাই শেষ নয়, আমাদের আরও কাজ বাকি আছে। আমাদের দেশে জ্বালানি মাত্র ৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি হতে আসে। এই খাতে রিসার্চ ও ইনোভেশন নিয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগের সরাসরি কাজ করার সুযোগ আছে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলে।”
তিনি গতকাল ১৩ ডিসেম্বর (সোমবার), ২০২১ খ্রি. সন্ধ্যা ০৬.৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর যন্ত্রকৌশল বিভাগের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী ৬ষ্ঠবারের মত যন্ত্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে Ò6thInternational Conference on Mechanical Engineering and Renewable Energy (ICMERE2021)” শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। কনফারেন্সে গেস্ট অব অনার ছিলেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। যন্ত্রকৌশল বভিাগরে অধ্যাপক এবং কনফারেন্সের টেকনিক্যাল চেয়ার অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দীন আহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি), যন্ত্রকৌশল ডিভিশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। যন্ত্রকৌশল বিভাগের ‘১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ওয়াসিফ সাদমান তানিম ও শায়লা শাহরিন স্নিগ্ধার যৌথ সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বেগ, কনফারেন্সের উপদেষ্টা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কাজী আফজালুর রহমান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনফারেন্সের টেকনিক্যাল সেক্রেটারি ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউনিগ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ জোবায়ের, কেএসআরএম’র সাপ্লাই চেইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জনাব প্রকৌশলী মো. মোস্তফা আনোয়ার খান ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল)-এর প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী প্রামাণিক। এতে বিদেশি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকদের হতে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. মাসজুকি বিন হাজি হাসান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাসুল, প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম, প্রফেসর এমেল তাবান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ এখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ডিজিটাল কমিউনিকেশন, অটোমেশন, আইওটি ইত্যাদির পাশাপাশি মেশিনারিজ, ইন্ডাস্ট্রি লে-আউট এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়াতেও আমাদের উন্নতি করা প্রয়োজন। আমাদের যান্ত্রিক সিস্টেমকে উদ্ভাবন এবং আপডেট করতে হবে যাতে তারা ডিজিটাল যোগাযোগ, মেশিন লার্নিং এবং অটোমেশন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আমি মনে করি এই সম্মেলন বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যন্ত্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য শক্তির সর্বশেষ অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে। শিল্পকারখানায় অধিকতর যান্ত্রিকীকরণের সাথে সাথে শক্তির চাহিদা বাড়ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আমাদের বিকল্প শক্তির উৎস অনুসন্ধান করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি আমাদের জন্য সবুজ শক্তির উৎস হতে পারে। আমি আশা করি এই সম্মেলন শক্তির উৎসের কিছু বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে।”
এবারের কনফারেন্সে বাংলাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে আগত যন্ত্রকৌশল বিষয়ের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী, প্রফেশনাল এবং উদ্যোক্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। উক্ত কনফারেন্সে যন্ত্রকৌশল বিষয়ের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের আলোচিত ইস্যু নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধসমূহ উপস্থাপিত হয়। এবারের কনফারেন্সে ১৫টি টেকনিক্যাল সেশনে মোট ১৪৬টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। এছাড়াও ৮টি কী-নোট এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল টক উপস্থাপিত হয়।
মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে চুয়েট পরিবারের শ্রদ্ধা নিবেদন
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন চুয়েট পরিবার। এ উপলক্ষ্যে আজ ১৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার), ২০২১ খ্রি. সকাল ১০.৫০ ঘটিকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এ সময় চুয়েট পরিবারের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সকাল ১১.০০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে শহীদ বু্িদ্ধজীবী দিবসের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আরাফাত রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, মুজিববর্ষ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রনজিৎ কুমার সূত্রধর, স্টাফ ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহাম্মদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বনিক, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জনাব আমিন মোহাম্মদ মুসা, স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জনাব বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব এটিএম শাহজাহান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “আজকের এইদিনে আমরা দেশের সূর্যসন্তানদের হারিয়েছি। ডিসেম্বরের ১০-১৪ তারিখ মাত্র ৪দিনের পরিকল্পনায় পাক হানাদারবাহিনী এক হাজারের অধিক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করে দিতে। আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ পেতে সময় কম লাগলেও ত্যাগটা করতে হয়েছে সর্বোচ্চ। মাত্র ৯ মাসের সংগ্রামে প্রায় ৩০ লক্ষ মুক্তিকামী মানুষকে আমরা হারিয়েছি। বিশ্বে এমন আত্মত্যাগের নজির আর কোথাও নেই। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে ভিশন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই ভিশন অর্জন করেই উন্নত ও সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে নিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে।”
পরে সন্ধ্যায় ৭.৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকম-লী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।