শুক্রবার ● ১৮ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে: ড. জাফর ইকবাল
বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে: ড. জাফর ইকবাল
রাউজান প্রতিনিধি :: (১৮ মার্চ ২০১৬: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০৫ মিঃ) ২০৫০ সালে বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে এমন আভাস আমরা পেয়েছি। এই তোমরাই সেই মানুষ যারা দেশকে এগিয়ে নিবে। তোমাদের মত সাড়ে ৪ কোটি স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী আছে আমাদের মাঝে। ১৮ মার্চ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আঞ্চলিক পর্বের আসর উপলক্ষে চুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল এসব কথা বলেন, তিনি আরো বলেন, আগে একটা সময় ছিল আমরা অনুপ্রেরণা দিতে ঘুরে বেড়াতাম, বলতাম এটা করো, এভাবে করো, বেড়ে উঠো। এখন উল্টো। আমি এখন তোমাদের মত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে ঘুরে বেড়াই। অনুপ্রেরণা পাওয়ার আশায় ছুটে আসি। এই যে, সামনে ১২০০ স্টুডেন্ট আছে দেখলে ভালো লাগে, অনুপ্রাণিত হই। আমি তোমাদের বয়সে কোন পুরস্কার পাইনি। দৌড়ে ভালো নই, লাফাতে পারতাম না, পা ভাঙ্গার ভয় ছিল, উচ্চারণে ভালো নই বলে আবৃত্তিতেও পুরস্কার পেতাম না। তাই আজ যারা পুরস্কার পাচ্ছো না, আমি তোমাদের দলে। মনে রাখতে হবে পুরস্কার কেবল সব কিছু নয়। মনে রেখো, আজ সেই পুরস্কার না পওায়া আমি, পুরস্কার দিয়ে বেড়াচ্ছি। তোমরাও একদিন সফলকাম হয়ে আমার মতো মেডেল তুলে দিবে। পুরস্কার পাওয়ার চেয়ে পুরস্কার দেয়ার মজা আরো বেশি। আমি শত-হাজারো পুরস্কার দিয়ে এটি বুঝতে পারছি। তাই যারা এখন সফল না তারা দমবে না বরং আরো অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়ে সফল হবে। নুতন সহশ্রাব্দের সম্পদ হলো জ্ঞান। অস্ত্র কিংবা অন্য কোন সম্পদের ভান্ডারকে বলা হয়নি। আমি সেই জ্ঞান কারখানার একজন মানুষ। আমার কাজ হচ্ছে জ্ঞান দেয়া। ২০৫০ সালে বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে এমন আভাস আমরা পেয়েছি। এই তোমরাই সেই মানুষ যারা দেশকে এগিয়ে নিবে। তোমাদের মত সাড়ে ৪ কোটি স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী আছে আমাদের মাঝে। যারা বাংলাদেশকে বিশ্ব মাঝে তুলে ধরবে অনন্যভাবে। তোমরাই বাংলাদেশকে বড়লোক বানাবে। একটা অংক করবে আর বাংলাদেশ বড়লোক হবে, এভাবে একটি ছবি আকঁবে, কবিতা পড়বে, প্রোগ্রামিং করবে আর বাংলাদেশ তোমাদের হাত দিয়ে বড়লোক হতে থাকবে। ভাবতে পারো তোমাদের মত সাড়ে ৪ কোটি ছেলে-মেয়ে যখন দেশের দায়িত্ব নেবে সেই বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! বাংলাদেশকে তখন আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমি হয়তো তখন থাকব না। কিন্তু উপর থেকে তাকিয়ে দেখব তোমাদের উন্নতি-অগ্রগতি আর দেশের অগ্রযাত্রা। তোমাদের এখানে সমস্যা সমাধানে সারা বিশ্ব থেকে লোক আসবে একদিন। মঙ্গলগ্রহে স্পেসশিপ পাঠাতে সমস্যা কিংবা বিশ্বসেরা চিকিৎসা সেবার জন্য বিশ্বের লোক এই দেশে তোমাদের কাছে ছুটে আসবে। তোমরা যে বিষয়ে ভালো অনুভব করো সে বিষয়টায় নিজের সেরাটা ঢেলে দাও। সবাইকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন কথা নেই। তবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংটা ছেড়ো না। কারণ এটা বর্তমানে সবখানেই খুব কাজে লাগে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামনে বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি সুন্দর দিন অপেক্ষা করছে। নতুনরাই এই সুদিন নিয়ে আসবে। প্রোগ্রাম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীরাই বাংলাদেশকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রা আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন এবং উন্নত দেশের কাতারে পৌছাঁর অভিযাত্রায় শামিল হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মিনি সিলিকন ভ্যালী হিসেবে গড়ে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইটি সেক্টরে উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর, আইটি পার্ক,এবং আইটি ভিলেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।
চুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ডিভিশনের নিয়ন্ত্রক (যুগ্মসচিব) আবুল মনসুর মোহাম্মদ সারফ্ উদ্দিন, তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক মুনির হাসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ডিভিশনের সহকারী সেক্রেটারি আর. এইচ. এম. আলাউল কবির, চট্টগ্রাম জেলার এডিসি (শিক্ষা) দেবমময় দেওয়ান, বেসরকারী মোবাইল অপারেটর রবি’র রিজিওনাল ম্যানেজার এস. এম. জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়েটের সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুরুল হাসান।
এসময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় ৫৫টি স্কুল কলেজের সহস্রাধিক প্রতিযোগী অংশ নেয়।