বৃহস্পতিবার ● ২০ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » দাযরা জজ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে সন্ত্রাসীর কায়দায় প্রতিপক্ষের বাগানের গাছ কর্তন
দাযরা জজ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে সন্ত্রাসীর কায়দায় প্রতিপক্ষের বাগানের গাছ কর্তন
রুমা ( বান্দরবান ) প্রতিনিধি :: জেলা দাযরা জজ আদালতের স্থগিতাদেশ নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিপক্ষে বাগান থেকে জোর পূর্বক প্রবেশ করে গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বাগান মালিকের গাছগুলো কেটে নেয়ার ফলে প্রায় লক্ষধিক টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে জানিয়েছেন ক্ষতি শিকার সুইমংউ মারমা। বান্দরবানে রুমায় রুমা সদর ইউনিয়নের রুমাচড় পাড়ায় গত ১৬ জানুয়ারি দিন দুপরে সন্ত্রাসীর কায়দায় জোর পূর্বক ও অবৈধভাবে প্রতিপক্ষ বাগানে ঢুকে এ গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় হুমকির মূখে দিন যাপন করছেন বাগান মালিক ভিকটিম শৈমংউ মার্মা ও তার পরিবার সদস্য। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে শৈমংউ মার্মা চাষকৃত জমির মালিকানা বিরোধ চলছিল। এ জমির বিরোধ নিয়ে বান্দরবান জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতর একটি মামলা শৈমংউ মার্মা বিপক্ষে রায় হয়। এতে শৈমংউ মার্মা সংক্ষুব্দ হয়ে এই রায়ে বিরুদ্ধ বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে ফৌজদারী রিভিশন ১/২০২২ আনয়ন করে। এতে জেলা দায়রা জজ রিভিশন মামলা নিস্পতি না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বান্দরবান এর মিস সি আর - ৪৯/২০১৭ মামলার বিগত ইংরেজি ২৫/১১/২০২১তারিখে আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতাদেশ দেন। ভিকটিম শৈমংউ মার্মা অভিযোগ করে জানান, মাননীয় জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আমার প্রভাবশালী মেদুশে মার্মা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি আমার সৃজিত বাগানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে গাছ গুলো কেটে নিয়ে যায়। ওই সময় গাছ না কাটতে অনুরোধ করলে মেদুসে মারমার লোকজন উত্তেজিত হয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। মেদুসে মার্মা লোকজন জোর করে বাগান থেকে কেটে নেয়ার কারণে আমার একলক্ষ টাকার বেশি সমপরিমাণ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও বাগানে সব গাছ গুলো কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছে মেদুসে গং। তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, মেদুসে মার্মার নেতৃত্বে তার লোকজন কর্তৃক কেটে নেয়া সেগুন গাছগুলো আমি পরিশ্রম করে প্রায় ২৫ বছর আগে নিজ জমিতে লাগিয়ে ছিলাম। এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন রুমাচড় পাড়া থেকে ১০০ গজ দূরত্বে একটি জমিতে কেটে ফেলা বেশ কয়েকটি সেগুন গাছ পরে আছে। তিনটি জায়গায় বেশ কয়েকটি সেগুন গাছ পরে থাকা এসব গাছ গুড়ায় কেটে ফেললেও তখনো ডালপালাগুলো কাটা হয়নি। আড়া-আড়ি পরেছিল সেগুন গাছগুলো। গাছ কাটার এলাকায় ঘুরতে গিয়ে দেখা হয় ভিকটিম শৈমংউ মার্মা সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি আমার জমি। এ জমিতে কেটে ফেলা সব গাছ আমার। জমিতে পরে থাকা গাছ গুলোর দিকে হাত দেখিয়ে শৈমংউ মার্মা এপ্রতিবেদক’কে বলেন এসব পরে যাওয়া গাছ গুলো লোভে বশত হয়ে মেদুসে মার্মা তার লোকজন নিয়ে গাছ গুলো কেটে দিয়েছে। তিনি একটি স্থানের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন এ গাছ গুলো কাটা সময় মেদুসে মার্মা লোকজনের সাথে কয়েকজন পুলিশও ছিল। ওইসব পুলিশ সদস্যরাও মেদুসে মার্মা পক্ষ নিয়ে আমার আত্মসমর্থের কথা বলতে সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন শৈমংউ মার্মা। বিষয়টি জানতে চাইলে উপ- পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম বলেন মেদুসে মারমা রুমা থানা সাধারণ ডায়েরি করার প্রেক্ষিতে সরে জমিনে খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলাম। যাতে উভয় পক্ষের মধ্যে আইন নিজের হাতে না নেয়। তবে কারোর পক্ষ পাতিত্ব নেয়ার কথাটি সত্য নয় উল্লেখ করে এসআই অতিকুল ইসলাম বলেন সুইমংউ কিংবা চাইশেপ্রু মারমা বিজ্ঞ আদালতের যুক্তিগত কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি তারা। এদিকে গত বুধবার সরে জমিনে ভোক্তভোগী সুইমং উ মারমা সঙ্গে আলাপকালে ঠিক ওই সময় গাছ কাটার স্পটে উপস্থিত হলে কথা হয়- শৈমংউ মার্মার কর্তৃক অভিযুক্ত সেই মেদুসে মার্মার সঙ্গে। জমিটি নিজের দাবি করে মেদুসে মারমা বলেন এ জমির বিপরীতে আমার বৈধ দলিল আছে। তাছাড়া এ জমি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট আদালতে থেকে সম্প্রতি একটি মামলার রায় হয়েছে। ওই রায় আমার পক্ষে ছিল। তাই এ জমি আমার। সুতরাং নিজ জমি থেকে সেগুন গাছগুলো বিক্রির জন্য লোক লাগিয়ে কেটেছি। আপনার প্রতিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী রিভিশন ১/২০২২ আনয়ন করার পর আদালত থেকে রিভিশন মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই রায়ের আদেশ কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন, তারপরও জোর করে কেন গাছগুলো কেটে ফেলেছেন এ প্রশ্নে মেদুসে মারমা বলেন আমাদের কাছে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এ ধরণের কোনো কাগজ আসেনি। ফলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেটের রায়-ই আমার ন্যায়সঙ্গত আসল দলিল মনে করেন মেদুসে মারমা। তবে সুইমং উ মারমার নিয়োজিত আইনজীবী জিয়াউল মুঠোফোনে বলেন মিস সি আর -৪৯/২০১৭ নং মামলার বিগত ২৫/১১/২০২১ তারিখে বান্দরবানের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট রায়ের আদেশ বিপরীতে সুইমংউ মারমা মাননীয় বিজ্ঞ জেলা দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী রিভিশন ১/২০২২ আনয়ন করলে মাননীয় দাযরা জজ আদালত থেকে রিভিশন মামলা নিস্পতি না হওয়া পর্যন্ত এই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত আদেশ দিয়েছেন। কাজেই জেলা দায়রা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করে বাদী সুইমংউ মারমা সৃজন করা গাছগুলো কেটে নেয়ার বিষয়টি অন্যায় করেছে বিবাদী মেদুসে মারমা ও তার লোকজন।