সোমবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড,৬ জনের যাবজ্জীবন
মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড,৬ জনের যাবজ্জীবন
চাঞ্চল্যকর ঘটনা কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফাঁসির রায় শুনে চোখে পানি নিয়ে মলিন চেহারায় চুপচাপ এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার চেহারা দেখে মনে হয়েছে, তিনি কিছু বলতে চাইলেও যেন মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এক কথায়, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় শুনে তিনি যেন একটি জীবন্ত লাশ বনে গেছেন। প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর চেহারাতেও।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। সোমবার ৩১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিচারক এপিবিএন’র ৩ সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস দেন। এ ছাড়াও এসআই নন্দ দুলালসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
এর আগে দুপুর ২টায় এই মামলার এজাহারভুক্ত ১৫ আসামিকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার যে ১৫ জন আসামি ছিলেন
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
সেদিন যা ঘটেছিল
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়। আদালত কক্সবাজারের র্যাব-১৫-কে মামলাটির তদন্তভার দেন।
আত্মসমর্পণ করেছিলেন ৭ পুলিশ সদস্য
৭ আগস্ট মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ৩ বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ মামলায় ৪ মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীর নামের তালিকাসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৫ জনকে আসামি করে দেওয়া অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।