মঙ্গলবার ● ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে এক মাসে লাশ উদ্ধারসহ ১২ খুন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত
ঝিনাইদহে এক মাসে লাশ উদ্ধারসহ ১২ খুন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঝিনাইদহে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় জানুয়ারি মাসে খুনসহ ১২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নতুন বছরে সবচে বেশি খুন হয়েছে শৈলকুপায়। ইউপি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ, সামাজিক দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শৈলকুপায় খুনোখুনি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত পহেলা জানুয়ারী শৈলকুপার ভাটবাড়িয়া গ্রামে খুন হয় জসিম উদ্দীন। ৫ জানুয়ারী একই উপজেলার কিত্তিনগর গ্রামে খুন হয় অখিল সরকার, ৮ জানুয়ারী কৃষ্ণনগর গ্রামে খুন হয় আব্দুর রহিম, একই দিন বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে খুন হয় কল্লোল, ১০ জানুয়ারী সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে খুন হয় আওলাদ হোসেন, ২০ জানুয়ারী সদর উপজেলার বোড়াই গ্রাম থেকে নাজির উদ্দীনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ জানুয়ারী শৈলকুপার সারুটিয়া গ্রামে খুন হয় মেহেদী হাসান সবুজ ও ২৪ জানুয়ারী কালীগঞ্জের পীর আলী নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় অন্তত ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে এসব লাশের ময়নাদন্ত করে আত্মহত্যা করে বলে রিপোর্ট আসে। এদিকে নতুন বছরের প্রথম মাসেই ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়কে ১১জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন অন্তত ৫০ জন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে গত ৪ জানুয়ারী কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ এলাকায় নিহত হন আব্দুস সালাম, ৫ জানুয়ারী মহেশপুরের সেজিয়া নামক স্থানে নিহত হন আমির হোসেন, ১০ জানুয়ারী সদর উপজেলার চান্দুয়ালী গ্রামের তন্ময় নিহত হন নয় মাইল নামক স্থানে, ১১ জানুয়ারী শৈলকুপার কদমতলায় নিহত হন শাহানারা খাতুন, ১২ জানুয়ারী, ১৪ জানুয়ারী সদর উপজেলার বোড়াই নামক স্থানে নিহত হন তারিক, ১৫ জানুয়ারী মহেশপুরের জিন্নানগর গ্রামে মর্জিনা খাতুন, একই দিন ইজিবাইক থেকে পড়ে কালীগঞ্জের মোস্তবাপুরে কলেজ ছাত্রী অন্বেষা সাহা, ২২ জানুয়ারী শৈলকুপার আসাননগর গ্রামে সেনা সদস্য তরিকুল, ২৬ জানুয়ারী সদর উপজেলার মাধবপুর গ্রামে মহিদুল ও ৩০ জানুয়ারী কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় হিমেলা বেগম নিহত হন। সড়ক মহাসড়কে অবৈধ যান বাহনের পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ঝিনাইদহ ট্রফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নীরবে চলছে দালাল দৌরাত্মে দিশেহারা আমজানতা
ঝিনাইদহ :: আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঝিনাইদহ চলছে দালালদের নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ নেই কোন ভুক্তভোগীর।সবার কাছেই এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নতুন পাসপোর্ট তৈরি ও পুরাতন পাসপোর্ট হালনাগাদ প্রকৃয়ার ৯৫ ভাগ কাজ দালালদের মাধ্যমেই হচ্ছে। প্রত্যেক শ্রেণি ও মেয়াদের পাসপোর্ট তৈরির সরকারি খরচের জায়গায় অতিরিক্ত টাকা নিয়েই প্রতিদিন আবেদন পড়ছে শতাধীক। দালালরা ভুক্তভোগীদের ব্যাংক ড্রাফটের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত টাকা অফিস খরচ হিসাবেই নিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দালাল না ধরে অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করলে বিভিন্ন ভুল ধরে,সময় বেশি লাগে। ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই দালালের মাধ্যমে কাজ করলে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টিও তারাই ম্যানেজ করবেন বলে সাধারণ ও ৫ বছর মেয়াদি একটি পাসপোর্টের ৪০২৫ টাকার জায়গায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে পাসপোর্ট। সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে পাসপোর্ট অফিসে দালাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও করোনার পর থেকেই পাসপোর্ট অফিসে জেকে বসেছে দালাল সিন্ডিকেট। দালালরা নিজেরাই বিসিএস ক্যাডারের সিল মোহর বানিয়ে নিজেরাই স্বাক্ষর করে সত্যায়িত করে দেয় আবেদন পত্র। ৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নতুন উপ পরিচালক হিসাবে শাখাওয়াত হোসেন যোগদান করেছেন। এর আগে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক হটাৎ বদলি হয়েছেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ বাবুল আক্তার জানান, প্রতিদিন গড়ে ৯০-১১০টি আবেদন আসে। তার মধ্যে হালনাগাদ ও নতুন দুই ধরণেরই রয়েছে। জানাগেছে, ঝিনাইদহ শহর ও বিভিন্ন জায়গায় পাসপোর্ট অফিসের দালাল রয়েছে। সোমবার দুপুরে পাসপোর্ট অফিসে প্রিন্ট হয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে পাসপোর্ট নিতে আসেন সাগান্না গ্রামের নুর আলী জোয়ার্দারের ছেলে সেলিম হোসাইন। তিনি পাসপোর্ট হালনাগাদ করেছেন। তার ডেলিভারি স্লিপ নাম্বার ৪২১৫-০০০০১৮৯২২। ১০ বছরের জন্য হালনাগাদ করেছেন তিনি। তিনি জানান, সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদের মাধ্যমে তিনি এই হালনাগাদ করেছেন। মাসুদই সব কিছু করে দিয়েছে। মাসুদ সাড়ে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। সোমবার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার দিতে আসেন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার কাশীপুর গ্রামের আইনাল খার ছেলে মোহাম্মদ আলী মোর্তজা। তিনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন। থানায় জিডি করে নতুন পাসপোর্ট তোলার জন্য আবেদন করেন। আলী মোর্তজা জানান, চাঁদপুরের বাবুলের মাধ্যমে তিনি আবেদন করেছেন। তার শ্বশুরই সব কিছু করে দিয়েছেন। টাকাও তিনি দিয়েছেন। কত টাকা লেগেছে সেই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পাসপোর্ট নিতে আসেন খুরশি গ্রামের জাকির বিশ্বাসের ছেলে ইকারুল। তিনি ১০ বছর মেয়াদি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তিনি আরাপপুরের সুকান্ত সেনের মাধ্যমে আবেদন করেন। তার খরচ পড়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তিনি জানান, ছবি তোলার সময় ও ফিঙ্গার দেওয়ার সময় তিনি এসেছিলেন সব কিছু সুকান্ত দাদা অফিসের লোকদের সাথে কথা বলেই করে দিয়েছেন। সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নতুন পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে? তিনি জানান,ব্যাংক ড্রাফট ৪০২৫ টাকা,পুলিশ ভেরিফিকেশন ও অফিস খরচ ধরে সাড়ে ৭ হাজার লাগবে। তার কাছে বলা হয়,” আমার এক ভাই জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করে বিদেশ ছিল অনেক দিন। তখন তার জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নি। জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখের মিল নেই নতুন করে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো যাবে কিনা? তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট না দেখে বলতে পারবো না। দালালদের দৌরাত্ব বিষয়ে উপ পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমি আজকেই যোগদান করেছি। সবাইকে জিজ্ঞাসা করে আবেদন জমা নেওয়া সম্ভব হয় না। এই কারণে কিছু লোক সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে। আমাদের অফিস উন্মুক্ত। আপনারাও চাইলে সরজমিনে খোঁজ খবর রাখতে পারেন। অনিয়ম রোধ করা গেলে সবার জন্যই ভালো।” অফিস সংশ্লিষ্ট কাদের সাথে যোগাযোগ করে বা অফিস খরচের টাকা কাদের পকেটে দিয়ে দালালরা নির্বিঘেœ এই কাজ চালাচ্ছেন তা তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।
কালীগঞ্জে পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়া স্ত্রীকে অমানষিক নির্যাতনের অভিযোগ পেশকারের বিরুদ্ধে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খড়াশুনি গ্রামে পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় স্ত্রীকে অমানষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে লিমন পারভেজ নামের আদালতের এক পেশকারের বিরুদ্ধে। সেই সাথে যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় ওই গৃহবধুকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় অর্থলোভী পেশকার লিমন পারভেজ। এ ঘটনায় নির্যাতিতা ওই গৃহবধু দুটি মামলা দায়ের করেছেন। জানা গেছে, ২০১০ সালে পারিবারিক ভাবে কালীগঞ্জ উপজেলার খড়াশুনি গ্রামের মহাশিন আলীর ছেলে লিমন পারভেজের সাথে একই উপজেলার চাপালী গ্রামের পুলিশ সদস্য ফারুক হোসেনের মেয়ে ফারজানা আক্তার মুন্নীর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে স্বর্ণের আংটি, চেইন, গহনাসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী দেয়। বিয়ের পর ভালো ভাবেই চলছিল তাদের সংসার। ৪ বছর আগে তাদের ঘর আলো করে একটি কণ্যা সন্তান জন্ম নেয়। যশোরের শার্শা-বেনাপোল কোর্টের পেশকার হওয়ার সুবাদে লিমন পারভেজ যশোরে থাকা শুরু করে। চাকুরীর কথা বলে শশুরের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। সেসময় তাকে ৬ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হয় মুন্নীর পিতা। চাকুরী পাওয়ার পর থেকেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। কালীগঞ্জের এক কলেজ ছাত্রীর সাথে পরকীয়া করে আসছিল। বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পারলে বিভিন্ন সময় তাকে নিষেধ করে। এরপরও সে পরকীয়া চালিয়ে যায়। স্ত্রী মুন্নী বাঁধা দিলে শুরু হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। সেই সাথে আবারো ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। পরকীয়ায় বাঁধা ও যৌতুক না পেয়ে প্রতিনিয়ত মুন্নীকে অমানষিক নির্যাতন করে যৌতুকলোভী লিমন পারভেজ। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৮ তারিখে যশোরের নতুন খয়েরতলা গোরস্থানপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় পরকীয়া প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলে নারীলোভী লিমন। মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি মুন্নী টের পেয়ে নিষেধ করলে বেধড়ক মারপিট করে তাকে। এক পর্যায়ে গলায় টিপে হত্যার চেষ্টা করে। মুন্নীর আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরদিন সকালে মুন্নীকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক আনতে বাবার বাড়ীতে যেতে বলে। মুন্নী টাকা আনতে অস্বীকার করলে তাকে আবারো মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর মুন্নী বাবা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। মুন্নীর ৪ বছরের মেয়ে রোজা আধো আধো কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা আমার মাকে গলা টিপ দিয়ে ধরেছিল। আমি তখন বসেছিলাম। দেখলাম। মুন্নী বলেন, আমি সুখে সংসার করতে চায়। কিন্তু লিমন পারভেজ পরকীয়ায় জড়িয়ে আমাকে নির্যাতন করে। আমি এর বিচার চাই। আদালতের পেশকার হওয়ার কারণে তিনি আমাদের বলছে কোথাও গিয়ে নাকি আমরা বিচার পাব না। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লিমন পারভেজের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা। আমার সাথে স্ত্রীর বনি বনা না হওয়ায় আমি গত মাসের ১৯ তারিখে তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। আমার নামে দুটি মামলা করেছে। আমি আদালতে চাকরি করি। আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আইনগত ভাবে দোষী প্রমাণিত হলে আমি শাস্তি পাব।