রবিবার ● ২০ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাঙামাটিতে ৬ বছরের শিশুকে চুরির অভিযোগে বেধে রাখা হয়েছে
রাঙামাটিতে ৬ বছরের শিশুকে চুরির অভিযোগে বেধে রাখা হয়েছে
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২০ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় সকাল ১১.৪০মিঃ) রাঙামাটিতে চুরির অভিযোগে মোঃ পারভেজ নামের ৬ বছরের শিশুকে পায়ে ও কোমরে বাঁশের খুটির সাথে শক্ত করে বেধে রাখার অমানবিক ঘটনা ঘটেছে৷
২০ মার্চ রবিবার সকাল সাত টায় রাঙামাটি জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে উদ্যোক্তা ও পাটপণ্য হস্তশিল্প মেলায় এঘটনা ঘটে৷ সকাল ৭টা থেকে ঘটনাস্থলে প্রতিবেদক পৌছার সময় সকাল সাড়ে নয়টা দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা শিশুটিকে বেঁধে রাখা হয়৷
সকালে দোকান থেকে নাস্তা আনতে পাঠায় শিশুটির বিধবা মা পারভিন বেগম(৩০), ছেলে নাস্তা নিয়ে আসতে দেরী করায় তার মা গিয়ে দেখে তার ছেলেকে খগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা সিকিউরিটি সুপারভাইজার মোকতাদের হেসেন (মোবাইল নং ০১৮১৯৭২৬৪৭০) বেধে রেখেছে৷ বাঁধাবস্থায় শিশুটির সামনে দু’টি প্লাষ্টিকের বাটি পড়েছিল যার মধ্যে ১টি ভাঙ্গা আর ১টি ভাল বাটি৷ পারভেজ বার বার কান্না করে বলছে তাকে ছেড়ে দিতে সে মায়ের কাছে যাবে৷
তাদের অভিযোগ শিশুটি স্টল নং ১৩০ থেকে দু’টি প্লাষ্টিকের বাটি চুরি করেছে যে পণ্যটির বাজার মূল্য সর্বোচ্ছ ৬০ টাকা৷ শিশুটির পিতা মোঃ তারেক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ বছর আগে মারা গেলে তার মা পারভিন বেগম রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমীর সামনে হাসেম এন্টারপ্রাইজে ইট ভাঙ্গার কাজ নেন৷ প্রতিদিন পারভিন বেগম ১২০-১৫০ টাকা উপার্জন করেন৷ সেই টাকায় চলে মা ও ছেলের সংসার৷ শিশু পারভেজকে নিয়ে তার মা রাঙামাটি ষ্টেডিয়ামের গেইটের সামনে আব্দুল মালেকের মোটর সাইকেল গ্যারেজের পিছনে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন৷ শিশুটি রাঙামাটি প্রতিবন্ধী স্কুল ও পুণর্বাসন কেন্দ্রে শিশু শ্রেণীর ছাত্র৷ শিশুটিকে শক্ত করে বেধে রাখার খবর পেলে প্রতিবেদক গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে সিকিউরিটি গার্ড সুপারভাইজার মোকতাদের হেসেন প্রতিউত্তরে বলেন শিশুটি চুরি করেছে এজন্য তাকে বেধে রাখা হয়েছে, পুলিশে দেয়া হবে৷ প্রতিবেদক শিশু নির্যাতনের বিষয়টি চরম মানবাধিকার লঙ্গন এবং শিশু নির্যাতন ইত্যাদি বললে আশপাশের মানুষ জড়ো হলে মোকতাদের হেসেন তাড়াহুড়ো করে শিশু পারভেজের কোমর ও পা থেকে রশি খুলে দেয় এবং ফোন করে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশিকার নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমাকে মেলা প্রাঙ্গনে ডেকে আনে৷
ততক্ষণে শিশুটির মা ঘটনাস্থলে এসে বলে আমার ছেলে চুরি করেনা, সে চোর নয়৷ শিশুটি ও চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে বারবার বলছিল আমি চুরি করি নাই, কেউ একজন আমাকে এই একটা ভাঙ্গা আরা একটা ভাল বাটি হাতে দিয়েছিল, আমি দোকানে যাওয়ার পথে মেলার গেইটের বাইরে দাড়িয়ে দোকানগুলি দেখছিলাম, আর আমাকে বাইরে থেকে এনে ঐ আঙ্কেলটা (মোকতাদের হেসেন) দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখে৷ বিপ্লব চাকমা প্রতিবেদকের কথা শুনে শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেন৷
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ তারিখ থেকে রাঙামাটি জিমন্যাসিয়াম প্রাঙ্গনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদ, রাঙামাটি ও ডেভেলাপমেন্ট পেট্রোনাইজিং সোসাইটি (ডিপিএস),ঢাকার আয়োজনে মাসব্যাপী উদ্যোক্তা ও পাটপণ্য হস্তশিল্প মেলা-২০১৬ চলছে৷
এ মেলাকে ঘিরে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ শুরু থেকে ছিল, কারণ আগামী ৩ এপ্রিল ২০১৬ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা শুরু হচ্ছে আর মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ স্বরে মাইক ও সাউন্ড সিষ্টেম বাজানো হয়৷ এতে করে ছাত্র ছাত্রীদের লেখা পড়া পরিবেশ এবং মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে৷
মেলা প্রাঙ্গনে রাঙামাটি প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূণর্বাসন কেন্দ্র, কাছা কাছি রানী দয়াময়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হিল পয়েন্ট স্কুল৷
স্থানীয়রা বলেন, এধরনের মেলা আয়োজনে রাঙামাটিবাসীর কি উপকার হচ্ছে ? ছাত্র ছাত্রী ও যুবক যুবতীরা গভীর রাত পর্যনত্ম ঘুরতেছে, এখানে চাওয়া বা পাওয়ার কি আছে ? এখানে আয়োজক কমিটি ও ষ্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের ব্যবসা ব্যাতিত রাঙামাটিবাসীরা অর্থনৈতিকভাবে ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন৷
এ মেলায় স্থানীয় হসত্মজাত পণ্য ও স্থানীয় পণ্য সামগ্রীর প্রচারের জন্য হলে রাঙামাটির উপকারে আসতো, মেলাতে বিভিন্ন ধরনের আচার ও খেলনা সামগ্রী অন্য জেলা থেকে আসা স্টল মালিকগণ তো আমাদের স্থানীয় রাঙামাটির কোন পণ্য সামগ্রী রাখেন নাই বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা৷
এবার দুটি বাটির জন্য একটি ৬ বছরের শিশুকে নির্দয়ভাবে বেধে রাখার ঘটনায় স্থানীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং মানবাধিকার লঙ্গন এবং শিশু নির্যাতনের দায়ে দোষীদের যথাযত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন৷
অনতি বিলম্বে রাঙামাটি জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী উদ্যোক্তা ও পাটপণ্য হস্তশিল্প মেলা-২০১৬ বন্ধ করারও দাবি করেছে স্থানীয়রা৷ (ভিডিওসহ)