বুধবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ঝালকাঠিতে ৩৮ বছরেও হয়নি নৌ ফায়ার ষ্টেশন
ঝালকাঠিতে ৩৮ বছরেও হয়নি নৌ ফায়ার ষ্টেশন
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি জেলায় নেই কোনো নৌ ফায়ার স্টেশন। নেই নৌ অ্যাম্বুল্যান্স, স্পিডবোট ও ডুবুরিদলও। ফলে নদীপথে লঞ্চ ও জাহাজে অগ্নিকান্ড ঘটলেই হচ্ছে প্রাণহানি। গত তিন মাসে লঞ্চ ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকান্ডে প্রাণ যায় ৫৫ জনের।
অগ্নিদগ্ধ হয় শতাধিক মানুষ। সুগন্ধা নদীর তীরে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় তিনটি কম্পানির জ্বালানি তেলের ডিপো রয়েছে, যেখানে আসা তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে তা প্রতিকারে নেই কোনো ব্যবস্থা। উপকূলীয় অঞ্চল ঝালকাঠিকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণার ৩৮ বছরেও নৌ ফায়ার স্টেশন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
জানা যায়, সুগন্ধা-বিষখালী-ধানসিঁড়ি-গাবখান এই চার নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঝালকাঠি বন্দর। খুলনা ও মোংলা বন্দরে প্রবেশের জন্য রয়েছে দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক কৃত্রিম চ্যানেল। এই নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন জাহাজ ও লঞ্চের পাশাপাশি ছোট-বড় অসংখ্য নৌযান বরগুনা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নৌবন্দরে চলাচল করে। ঝালকাঠি ঘাট থেকে প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। এ ছাড়া সপ্তাহে তিন দিন স্টিমার চলাচল করে ঢাকা-খুলনা রুটে। তা ছাড়া সুগন্ধা নদীর তীরেই রয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কম্পানির তেলের ডিপো। নদীপথেই কার্গোতে আসে অকটেন, পেট্রল ও ডিজেল। ঝালকাঠির সেই নদীপথই এখন অরক্ষিত। লঞ্চ ও জাহাজে অগ্নিকান্ড ঘটলেই হচ্ছে প্রাণহানি।
গত বছরের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ এমভি সাগরনন্দিনী-৩-এ অগ্নিকান্ডে নিভে যায় সাত শ্রমিকের প্রাণ। মাত্র ৪১ দিনের ব্যবধানে ২৩ ডিসেম্বর বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রাণহানি হয় আরো ৪৮ জনের। অগ্নিদগ্ধ হয় শতাধিক মানুষ। এই জেলায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি দ্বিতীয় শ্রেণির স্টেশন থাকলেও সেখানে নেই নৌ অ্যাম্বুল্যান্স, স্পিডবোট ও ডুবুরিদল। এ কারণে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতে এবং আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
এদিকে ঝালকাঠিকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৩ সালে জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় শ্রেণির একটি ফায়ার স্টেশন। ছয় বছর আগে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এই জেলার নৌপথে অগ্নিদুর্ঘটনায় দ্রুত নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই বলে মনে করছে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফিরোজ কুতুবী বলেন, ‘ঝালকাঠি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। তাই এখানে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন দরকার। আমরা ছয় বছর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসকে প্রথম শ্রেণি করার দাবি করেছিলাম, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
ঝালকাঠিতে দিনমজুর হত্যা মামলায় ইউপি সদস্যসহ ৯ জন কারাগারে
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠিতে দিনমজুর মিরাজ শেখ (৩৫) হত্যা মামলার আসামি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলামসহ ৯ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মোহাম্মদ পারভেজ শাহরিয়ার তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী ফয়সাল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বিবরণে জানাযায়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ দুই ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও উজ্জল হোসেন খানের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের রনমতি বাজারে দিনমজুর মিরাজ শেখকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। রাতেই আহত মিরাজকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশার শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত সারে ৩টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরেরদিন সকালে নিহত মিরাজের মা মাকসুদা বেগম ঝালকাঠি সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে কেওড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উজ্জল হোসেন খান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলামসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ইউপি সদস্য উজ্জল হোসেনসহ দুইজন আদালত আত্মসমর্পন করলে বিচারক তাদের জেল হাজতে পাঠায়।
মামলার প্রধান আসামি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ ৯ জন উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন। তাঁরা আজ বুধবার ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হলে বিচারক কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন। এছাড়া এজাহারনামীয় এক আসামি এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
মামলার বাদী নিহত মিরাজের মা মাকসুদা বেগম জানান, আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, এখন তাদের ফাঁসি দিলেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।