রবিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণে বাঁধা দেয়ার কারণে একে একে তিনটি হত্যা করে ইয়াদ আলী
বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণে বাঁধা দেয়ার কারণে একে একে তিনটি হত্যা করে ইয়াদ আলী
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে ৭ দিনের ব্যবধানে খুন হয় এক নারীসহ তিন জন। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পুলিশ। একই রকম হত্যাকান্ডের ধরণ দেখে পুলিশ মাঠে নামে। এঘটনায় ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে চলছে তোলপাড়। এরই মধ্যে গত ১০ ফেব্রয়ারি সদর উপজেলার পোড়াহাটী গ্রামে ধর্ষনের পর খুন করা হয় বিবিজান নেছা (৪৫) নামে এক নারী। এ ঘটনায় জনতার হাতে আটক হয় ইয়াদ আলী মোল্লা নামে এক খুনি। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের রিমান্ড চায়। বিজ্ঞ আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বিবিজান নেছা হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বিকৃত যৌনাচার থেকে ইয়াদ আলীর সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠার ভয়ংকর গল্প। কি ভাবে সে একে একে তিনটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার বর্ননা দেন ঘটনাস্থলে গিয়ে। তার এই বর্ননা শুনে চমকে ওঠে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিরিয়াল কিলার ইয়াদ আলী নড়াইল জেলা শহরের বিলডুমুরতলা গ্রামের মৃত চাঁন মোল্লার ছেলে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার জানান, গত ১০ ফেব্রয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে বিবিজান নেছা (৪৫) নামের এক নারীকে ধর্ষনের পর তাকে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে ইয়াদ আলী মোল্লা। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে র্যাবে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় ওই দিন নিহতের ছেলে আবু জাফর বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা করে। এর আগে গত ৬ ফেব্রয়ারি সদর উপজেলার তেঁতুলতলা এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে ইলিয়াস আলী পাটোয়ারি ও ৯ ফেব্রয়ারি লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিঁড়ি ঘরের নিচ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ধরণ এক রকম দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ ওই দুই হত্যার সাথে জড়িত কিনা তা নিয়ে ইয়াদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ওই দুই হত্যাকান্ডের সঙ্গেও জড়িত। ইয়াদ আলীর দেয়া বর্ণনার উদ্বৃতি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, গত ৫ ফেব্রয়ারি রাতে এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ইলিয়াস পাটোয়ারির সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে। সে প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়ে টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে হত্যা করে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার নুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ ইলিয়াসকে। এর আগে ৩ ফেব্রয়ারি লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গেও ইয়াদ বিকৃত যৌনাচারের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ইয়াদ। সেই লাশ উদ্ধার হয় ৯ ফেব্রয়ারি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, আমরা তদন্ত করে ও তার হত্যার বর্ণনা দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ার কারণে ইয়াদ আলী একে একে তিনটি হত্যা করে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মো: সোহেল রানা বলেন, ৩টি ঘটনায় ২টিতে হত্যা মামলা ও ১ টিতে অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন ৩টি হত্যা মামলা বলে গন্য হবে। তিনি বলেন, ইয়াদ আলী আরও কোন হত্যার সাথে জড়িত কি না তা বের করার চেষ্টা করছি। ইয়াদ আলী মাদক সেবন করে বিকৃত যৌনাচার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে হানা দিত। সে নড়াইল থেকে গত ৫ মাস আগে ঝিনাইদহ শহরে আসে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
ঝিনাইদহে আইন অমান্য করে বেপরোয়া ভাবে চলছে অবৈধ ইটভাটা, দেখার কেউই নেই
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে চলতি ইট পোড়ানো মৌসুমেও অবৈধ ভাবে আইন অমান্য করে ইট পোড়ানোর কাজ পুরোদমে চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব ইট ভাটা। অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে নাম মাত্র কয়েকটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা উচ্ছেদ ও জরিমানা আদায় করলেও জেলার ৬ টি উপজেলায় প্রায় ১২৬ টি ভাটা রয়েছে। নাম মাত্র কয়েকটিতে অভিযান করলেও বাকি গুলো হরহামেশাই অবৈধভাবে চলছে। আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভাটা মালিকরা বেপরোয়া ভাবে ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভাটা মালিকরা জানান,ভাটা মালিক সমিতির অনুমতি ক্রমে তারা প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পোড়াচ্ছে। তারা আরো জানায়,ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ যেকোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে দায়ভার ভাটা মালিক সমিতি বুঝবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে,পরিবেশ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত/২০১০) ও ইট প্রস্তত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ এর কোন বিধি মানছে না এসব ভাটা গুলো । বেপরোয়া ভাবেই পরিবেশ দূষন করে প্রতিদিন হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছে এসব ইটভাটার ব্যবসা। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহেশপুর পৌর এলাকাসহ ২১টি ইট ভাটা রয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ । আবার কোন কোন ভাটায় কিছু কয়লা রাখা হলেও পাশাপাশি কাঠ এনে কাঠ দিয়েই পোড়ানো হচ্ছে ইট। এভাবে ইটভাটায় সৃষ্টদূষন পরিবেশ বির্পযয় ও জনস্বাস্থ্যর মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। গত ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর জেলা র্কাযালয়ের উদ্যোগে এক অভিযান পরিচালনা করে। সেসময় পরিবেশ অধিদপ্তররে ছাড়পত্র ছাড়া ,কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এই উপজেলায় ৩টি ইট ভাটা উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া ৫টি ইটভাটার মালককে মোট ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে। এর মধ্যে পদ্মপুকুর এলাকায় রাফি ব্রিকস তিন লাখ টাকা,শ্যামকুড় সীমান্ত ব্রিকস দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা,কাজিরবেড় এলাকার রুমা ব্রিকস কে দুই লাখ টাকা, নেপা মোড়ে সোলেমানপুরে ভাই-ভাই ব্রিকসকে তিন লাখ টাকা সহ মোট ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ভাটাকে র্শত মেনে ভাটা পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ অভিযানের পরের দিন থেকে আবার আগের মতই পরিবেশ দূষণ করে ইট পোড়াচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর’র উদ্যোগে পরিচালিত এই ভ্রাম্যমান আদালতে সদর দপ্তরের এনর্ফোসমেন্ট এক্সকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট সাঈদা পারভিন নেতৃত্ব দেন। এসময় যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ হারুন অর রশিদ, পরিদর্শক মোঃ জাহিদ হাসান,পুলিশ ও আনসার বাহীনির বিশেষ টিম ও অন্যান্যরা উপস্থতি ছিলেন। এছাড়া গত মৌসুমে শৈলকুপা উপজেলার পৌর এলাকার ইটভাটাগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান হলেও আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর এলাকায় অবস্থিত মোল্যা ব্রিকস,থ্রী স্টার ব্রিকস ও সাইফুল এর ইটভাটায় কোনো কালেও কোনো অভিযান পরিচালনা হয় না। এছাড়া উমেদপুর ইউনিয়নের ষষ্ঠীবর এলাকায় টুটুল ব্রিকস ৬০ ফিট ড্রামচিমনি ব্যবহার করে ইটভাটা পরিচালনা করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের যশোর জেলা র্কাযালয়ের অধীনে থাকা যশোর, নড়াইল,ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে সহকারি পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান। তিনি আরো জানান, পর্যায়ক্রমে সকল ইটভাটায় অভিযান করা হবে। অবৈধ সকল ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।