শুক্রবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » তালাকে রেকর্ড গড়ল ঝিনাইদহের মেয়েরা
তালাকে রেকর্ড গড়ল ঝিনাইদহের মেয়েরা
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের কাঞ্চননগর পাড়ার সামিহা আক্তার (ছদ্ম নাম)। ২০১৮ সালে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহরপাড়ার সাবিতকে। স্বামীর সঙ্গে মাত্র এক মাস সংসারও করেছেন। সামিহা বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আর স্বামীর ঘরে ফেরেনি। দুই মাস পর তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেন। নোটিশে উল্লেখ করেন স্বামী কৃর্তক শারিরীক নির্যাতন ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অত্যাচার। শুধু সামিহা নয় ঝিনাইদহে প্রতিদিন বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় নিকাহ রেজিষ্ট্রারের রেকর্ড ভারি হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনায় স্ত্রী স্বীকে ও স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন। তবে বিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে রয়েছে। বিয়ে বিচ্ছেদের আশংকা জনক এই ঘটনা সামাজিক ব্যাধীতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে দুই যুগের সংসার ঠুনকো অজুহাতে নিমিষেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। সরকারী পরিসংখ্যান থেকে ঝিনাইদহ জেলায় তালাক ও বিচ্ছেদের এমন আশংকাজনক তথ্য উঠে এসেছে। তবে ঝিনাইদহ জেলা নিকাহ রেজিষ্টারদের নেতৃবৃন্দ জানান, জেলায় তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের এই হার আরো অনেক বেশি। ২০১৯ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরে ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭৮টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি মাসে গড়ে ২৭১.৬১টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টারের অফিস থেকে দেয়া তথ্য বিশ্লেষন করে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বি (ছেলে) তালাকের সংখ্যা ছিল ২৭৮, সি (উভয় পক্ষ) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৪৫৬ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৩৩০। ওই বছর জেলায় বিয়ে হয় ৭ হাজার ৮৪২টি। হিসাব মতে ৭ হাজার ৮৪২টি বিয়ের পর তালাক হয় ৩০৬৪ জনের। ২০২০ সালে বি (ছেলে) তালাকের সংখ্যা ছিল ২৩২, সি (উভয় পক্ষ) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৩৫৫ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১১৪৩। ওই বছর জেলায় বিয়ে হয় ৬ হাজার ৮৯৫টি। হিসাব মতে ৬ হাজার ৮৯৫টি বিয়ের পর তালাক হয় ২৭৩০ জনের। ২০২১ সালে বি (ছেলে) তালাকের সংখ্যা ছিল ৩৮৪, সি (উভয় পক্ষ) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৭৪৬ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৮৫৪। ২০২১ সালে জেলায় বিয়ে হয় ৯ হাজার ৪৬টি। হিসাব মতে ৯ হাজার ৪৬টি বিয়ের পর তালাক হয়ে যায় ৩৯৮৪ জনের। পরিসংখ্যান মতে বিচ্ছেদের দিক থেকে পুরুষের থেকে নারীরা এগিয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালে পুরুষ তালাক দেয় ২৭৮ জন নারীকে। অন্যদিকে নারী তালাক দেয় ১৩৩০ জন পাুরুষকে। ২০২০ সালে পুরুষ তালাক দেয় ২৩২ জন নারীকে। নারী তালাক দেয় ১১৪৩ জন পাুরুষকে। ২০২১ সালে পুরুষ তালাক দেয় ৩৮৪ জন নারীকে। অন্যদিকে নারী তালাক দেয় ১৮৫৪ জন পুুরুষকে। জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবাইদুর রহমান জানান, করোনাকালে জেলায় তালাকের ঘটনা নেহাতই কম নয়। বিয়ের ঘটনা বৃদ্ধি না পেলেও তালাকের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ঝিনাইদহ পৌর কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর জানান, করোনাকালে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিয়ে হয় ৩৯১টি। আর তালাকের ঘটনা ঘটে ১৬৯টি। প্রতি মাসে ২৮ জনের তালাক হচ্ছে। তথ্যমেত পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে গত ৬ মাসে একশটি বিয়ে হলেও তার অর্ধেক হয়েছে তালাক। এছাড়া জেলার ৬টি পৌরসভা, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা বিষয়ক অফিস, মহিলা সংস্থা ও জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসে প্রতিদিন তালাকের আবেদন জমা পড়ছে। ঝিনাইদহ পৌসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদে ঘুরে ফিরে একই কারণ দেখিয়েছেন আবেদনকারীরা। প্রাপ্ত আবেদনপত্রে দেখা যায় এগুলো একটি ছক আকারে তৈরি। যা আইনজীবীদের কাছে আগে থেকেই তৈরি থাকে। আবেদনগুলোতে তালাকের কারণ হিসেবে বেশির ভাগই ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া। স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ভরণ-পোষণ না দেয়া, স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহবন্ধনে আবব্ধকরণ, কাবিন না হওয়া, মাদকাসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক পীড়ন, পরকীয়া, আর্থিক সমস্যা, ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত। অন্যদিকে স্বামীরাও তাদের নোটিশে উল্লেখ করেছেন, পরকীয়া, আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, বেপরোয়া জীবনযাপন, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া, অবাধ্য হওয়া, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমে অবাধ বিচরণ করা, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী না চলাসহ বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন তালাকের যেসব আবেদন জমা পড়ে, তার সবগুলো একই রকম। মাঝে-মধ্যে দু’-একটি কারণ এদিক ওদিক হয়। ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টার অফিস সুত্রে জানা গেছে, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলায় হাজতবাসের ভয়ে পুরুষরা আগে তালাক দেয় না। যে ভাবেই হোক সংসার করে। কিন্তু নারীদের বিরুদ্ধে কোন আইন না থাকায় হরহামেশে তারা তালাক দিয়ে দীর্ঘদিনের সংসার তছনছ করে ছাড়ছে। তালাকের বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মোঃ রুহুল কুদ্দুস জানান, দেশের প্রচলিত আইন মতে স্বামী যদি স্ত্রীকে নিকাহনামার ১৮ নং কলামে ক্ষমতা প্রদান করেন তবেই স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবেন, তাছাড়া স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না। তিনি বলেন সমাজে যেভাবে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগই শর্ত পুরণ হচ্ছে না। ফলে তালাক ও বিচ্ছেদ নিয়ে সমাজে বিশৃংখা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হরিণাকুন্ডুতে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষণ : ধর্ষক পলাতক
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ষষ্ঠ শ্রেনীর এক ছাত্রী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ১০ ফেব্রয়ারি চুলে তেল দেওয়ার কথা বলে প্রতিবেশি এক দাদী ওই ছাত্রীকে বিশারত আলী (৫০) নামে এক লম্পটের হাতে তুলে দেয়। হাত ও মুখ বেঁধে লম্পট বিশারত তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। লোকলজ্জার ভয় ও স্থানীয় মাতুব্বররা বিচারের আশ্বাস দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখ হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধার দিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে হরিণাকুন্ডু থানার পুলিশ এসে ভিকটিম ও তার মাকে থানায় নিয়ে যায়। লম্পট বিশারত রঘুনাথপুর গ্রামের মহর আলী ওরফে মওরার ছেলে। এলাকাবাসি জানায় রঘুনাথপুর গ্রামের ওই ছাত্রী মান্দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী। গত ১০ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যার দিকে প্রতিবেশি দাদি ছালেহা খাতুন ওই ছাত্রীকে চুলে তেল দেওয়ার কথা বলে তার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে যায়। মেয়েটি ঘরের মধ্যে প্রবেশের সাথে সাথে আগে থেকেই ঘরে লুকিয়ে থাকা লম্পট বিশারত ঘরের দরজা ছিটকানি দিয়ে হাত পা ও মুখ বেঁধে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ধর্ষিতাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে বিশারত বলে এ ঘটনা কাউকে জানালে খুন করে ফেলবো। মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি তার মায়ের কাছে জানালে তার পিতা মাতা অনেকটা লোকলজ্জার কারণে তারা গোপন রাখে। তাছাড়া সামাজিক নেতারাও সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেওয়ায় মামলা করতে যায়নি। গ্রামবাসির অভিযোগ রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদের স্ত্রী ছালেহা বেগমের সঙ্গে লম্পট বিশারতের দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক রয়েছে। ছালেহার ঘরবাড়ি ও সংসার চালায় বিশারত। গ্রামের যুবতী নারিদের ফুসলিয়ে নিয়ে ছালেহা বেগম বিশারতের হাতে তুলে দেয়। ইতিপুর্বে এমন দুইটি ঘটনা নিয়ে গ্রামে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি ধর্ষন মামলা হয়েছে। লম্পট বিশারত ও তার সহযোগী ছালেহা বেগম পলাতক রয়েছে।