শুক্রবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়া গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই টেন্ডার বাণিজ্যে লিপ্ত
কুষ্টিয়া গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই টেন্ডার বাণিজ্যে লিপ্ত
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে বর্তমানে তিনি দুর্নীতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ নিলেও মেডিকেল কলেজের কাজে তার দুর্নীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেন নির্মান, পুকুর খনন ও লিফট ক্রয় টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতাদরা কাজ পায়নি। ইতিমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী এই সকল কাজের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাজ দিয়ে শতকরা আড়াই টাকা করে প্রায় কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। ইতিমধ্যে মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরীণ সড়ক, বাউন্ডারি প্রাচীর, ড্রেন নির্মাণ, লিফট ক্রয়সহ পুকুর খননের টেন্ডারের সার্বিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী শামীম নামের ঠিকাদার অভিযোগ দায়ের করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে ঠিকাদারদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করে যাচ্ছেন। যে কারণেই মেডিকেল কলেজ নির্মাণের এত ধীর গতি। সূত্র জানায়, সম্প্রতি এই প্রকল্পের কিছু দরপত্র আহ্বান করা হলেও নিষ্পত্তি করতে সময় লাগে প্রায় চার মাস। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী এই চার মাস সময় নিয়েছেন শুধু দর কষাকষির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে রাস্তা, ড্রেন, পুকুর খনন, ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য গত ৫ই জানুয়ারি গণপূর্ত বিভাগ কুষ্টিয়া প্রায় ৭ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করে। এ কাজের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা গ্যালিক্সি অ্যাসোসিয়েটস এর নিকট থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে অগ্রিম টাকা নিয়ে কার্যাদেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এখানেও সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ টাকার উপরে। এদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বাউন্ডারী প্রাচীর নির্মাণ কাজের জন্য ২৭শে ডিসেম্বর ১৯ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়। উক্ত কাজের জন্য দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজ ও সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। সৈকত এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাছ থেকে দাবীকৃত ঘুষের টাকা না পেয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। তাদের অভিযোগ প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলীকে অগ্রিম শতকরা আড়াই টাকা দিতে হবে। তারা এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতা ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে কোটি টাকার উপর ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে মনে করেছে এ প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ টাকার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নতুন প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে টেন্ডার আহবান করে গণপূর্ত। প্রতিটি প্যাকেজে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ই ডিসেম্বর একাডেমিক ভবনের লিফট, হাসপাতাল ভবনের লিফট, ওটি, আইসিইউ, সিসিইউ ভবনের লিফটের দরপত্র। উক্ত দরপত্রে সর্বনিম্ন কোন দরদাতা কাজ পাননি। এসব ক্ষেত্রে কটি কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারদের। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গণপূর্তে নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ না করে বারবার কেটে দেন।