শুক্রবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » দখলবাজদের অত্যাচারে ঝিনাইদহের চিত্রা নদী এখন পুকুর
দখলবাজদের অত্যাচারে ঝিনাইদহের চিত্রা নদী এখন পুকুর
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: দখলবাজদের অত্যাচারে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদী এখন খালে পরণিত হয়েছে। কোথাও নদীর পাড় আবার কোথাও তলদেশ দখল করা হয়েছে। নদী পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় ভবন। নদীর মধ্যে কাটা হয়েছে পুকুর। কোথাও নদীর তলদেশে চলছে চাষাবাদ। প্রভাবশালী দখলদাররা এভাবে চিত্র নদীটি প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। এখন দেখলে মনে হবে একটা সরু খাল। কয়েক দশকে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশের বেশিরভাগ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে নদী দখলের এই প্রতিযোগিতা চলে আসলেও প্রশাসনিক ভাবে কোন বাধা দেওয়া হচ্ছে না। নদী দখলের খবর সাধারণ মানুষ মোবাইলে জানালে বলা হয় লিখিত অভিযোগ দেন। অথচ এই জমির মালিক খোদ প্রশাসন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় দখল হিসেবে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশে ৮ টি পুকুর উল্লেখ রয়েছে, যা হাস্যকর। পানি উন্নয়ন বোর্ডও চিত্রা নদীর রক্ষায় কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না বলে অভিযোগ। তথ্যমতে ঝিনাইদহ জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহি চিত্রা নদী। এই নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিন্মস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। নদীটি আরো দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখায় গিয়ে নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ঝিনাইদহ অংশ রয়েছে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এক সময় নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। ব্যবসায়ীদের পন্য পরিবহনে চিত্রা নদী ব্যবহার হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠে কালীগঞ্জ শহর, গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতা সহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাজার। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নদী এলাকায় দেখা গেছে কোটচাঁদপুরের তালসার থেকে কালীগঞ্জের শালিখা পর্যন্ত নদীর দুই পাড় অসংখ্য পুকুর কাটা হয়েছে। যেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসরাম জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও নদীর প্রবল শ্রোত ছিল, কিন্তু এখন মৃত খাল। সদর উপজেলার গান্না এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক জনতা ব্যাংক আবেদ আলী গান্না বাজারের নিচে নদীর মধ্যে একটি পুকুর কাটেন। তিনি মারা যাবার পর পরিবারের দখলে আছে। এই বাজারে মহি উদ্দিন, আলতাফ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তির পুকুর রয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা এলাকায় নদীর পাড়ে পুকুর আছে শাহজাহান আলী, রওশন আলী সহ কয়েকজনের। অবশ্য রওশন আলীর দাবি এগুলো তাদের মালিকানা জায়গা। ইকড়া সেতুর কাছে পুকুর কেটেছেন আব্দুল হামিদ। সদরের কাশিমপুর ও কোটচাঁদপুরের জালালপুর এলকায় নদীর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। সদর উপজেলার সুতি গ্রামের টিপু মন্ডলের একটি পুকুর রয়েছে নদীর পাড়ে। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মোঃ আব্দুলের ৮ টি পুকুর আছে নদীর জায়গায়। কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় দেখা গেছে জনৈক আব্দুল মালেক নদীর মধ্যে ধান চাষ করছেন। উপরের জমির মালিক তিনি তাই নিচের জমিও তারই দখলে। চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন রয়েছে। অথচ সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র ৮ টি পুকুর। ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদারের একটা তালিকা তৈরী হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এতোদিন করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তারা উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন বলে জানান। পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের পরিচালক হারুন-অর রশীদ জানান, পুকুর ভরাট, জলাশয় ভরাট, নদী ভরাট আইনগত নিষিদ্ধ। বিশেষ করে নদী ভরাট করলে নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। নদীর শ্রোত বাঁধাগ্রস্থ হয়। এতে নদীতে থাকা নানা প্রজাতির মাছ ধংস হয়ে। জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়ায় পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, তারাও এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
মহেশপুরের দত্তনগর বাজারে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কর্তৃক সরকারী জমি দখল করে চালাচ্ছে রমরমা বানিজ্য
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর বাজারে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সরকারী জমি দখল করে রমরমা বানিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই চক্রটি সরকারী জমির উপর গড়ে ওঠা মার্কেটের দোকান ইচ্ছামতো বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে দত্তনগর পুলিশ ফাড়ির সামনে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট নামে পরিচিতি মার্কেটের দুইটি ঘর ২৩ লাখ টাকা বিক্রি করে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে মহেশপুরের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসোন্তষ ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ১০/১২ বছর আগে বাজারের একটি প্রভাবশলী সুবিধাবাদী চক্র বিএডিসির জমি দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে। এই নামের প্রতি প্রশাসনের সম্মান থাকায় চক্রটি জমিটি দখলে নেয়। গড়ে ওঠে ৪৪ জনের একটি সিন্ডিকেট। এই কমিটিতে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা রাখা হয়। বাকীরা সব অমুক্তিযোদ্ধা। ২০১৫ সালে মার্কেট তুলে ৪ জনকে ভাড়া দেওয়া হয়। এই ঘরের ভাড়ার টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে এই মার্কেটের দুইটি ঘর আব্দুল হালিম ও জুবায়েরের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ২৩ লাখ টাকায়। ফলে আগের ভাড়াটিয়াদের ২৮ ফেব্রয়ারির মধ্যে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঘর ছাড়তে বলায় ভাড়াটিয়া পড়েছেন বিপাকে। এতো টাকা দিয়ে তাদের দোকানের পজিশন কেনার ক্ষমতা নেই। এখন তার চোখেমুখে সরিষার ফুল দেখছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, এক সময় বিএডিসির এক একর জমিতে দত্তনগর বাজার গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে এখন তিন একর জমির উপর বাজার বিস্তার লাখ করেছে। বাজারের অনেকেই ডিসিআর কেটে ব্যবসা করলেও বেশির ভাগ অবৈধ দখলদার। সরকার তাদের কাছ থেকে কিছুই পায়না। প্রভাবশালী মহল সরকারী হাটের জমি করায়াত্ত করে দেদারছে বেচাকেনা করে যাচ্ছে। কিন্তু মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন ও স্বরুপপুর ভুমি অফিস একেবারেই নির্বিকার বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারটির জমি এখন সরকারের নামে রেকর্ড বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান জানান, প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এই মার্কেট কমিটি গঠিত হয়। এতোদিন তারাই নিয়ন্ত্রন করে আসছিল। এখন লোকমুখে শুনছি মার্কেটের দোকান বিপুল অংকের টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মার্কেট কেনাবেচার মতো অন্যায় কাজের ঘৃনা করি বলে তাদের সঙ্গে আমি এখন আর নেই। তিনি বলেন, আমি এক্সিডেন্ট করে যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। দত্তনগরে বিএডিসির উপ-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারী জমির উপর গড়ে ওঠা মার্কেট বেচাকেনা কার্যত অবৈধ। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি বলেন, এই জমি এক সময় বিএডিসির ছিল, এখন জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহের নামে রেকর্ড। মহেশপুরের এসিল্যান্ড কাজী আনিসুল ইসলাম জানান, এধরণের অর্গানিক বাজার সরকারী জমির উপর গড়ে ওঠে। সরব সময় জনসাধারণের সে সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সরকারী জমিতে মার্কেট তুলে কারো বিক্রি করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি স্থানীয় ভুমি অফিসের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
ঝিনাইদহে সড়কের জায়গা দখল করে চলছে বাঁশের ব্যবসা, পথচারিদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ শহরের ধোপাঘাটা গোবিন্দপুরে সড়কের জায়গা দখল করে বাঁশের ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে নামের বাচ্চু হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী গাড়ী চালক ও স্থানীয়দের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। জানা গেছে, ঝিনাইদহ ঘোপাঘাটা ব্রীজের পুর্ব পাশে আস সুন্নাহ ট্রাস্টের পশ্চিমে শহরে প্রবেশের মুল সড়কে বাঁশ ফেলে অবৈধ ভাবে বিক্রি করছেন বাচ্চু। এতে ধোপাঘাটা গোবিন্দপুর, পবহাটি, কাঞ্চননগরের বাসিন্দাসহ ওই সড়কে চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তী বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, পৌরসভায় মহাসড়কের পাশে বাঁশ বিক্রির জন্য আলাদা স্থান রয়েছে। সেখানে বাঁশ বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাচ্চু সড়কের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বাঁশ বিক্রি করছে। এতে প্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া বাশ বিক্রি করে নেওয়ার সময় রাস্তায় চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আরেক জন বাসিন্দা বলেন, তেমাথায় সড়কের জায়গা দখল করে বাচ্চু যেভাবে বাঁশ রেখেছে তাতে ওই এলাকার মানুষের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পৌর সভার প্রশাসক ইয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সেখানে লোক পাঠিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।