শনিবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিশ্বনাথের মাকুন্দা নদী খননে অনিয়ম
বিশ্বনাথের মাকুন্দা নদী খননে অনিয়ম
মো. আবুল কাশেম, স্টাফ রিপোর্টার : দখল আর দূষণে একসময়ের খরস্রোতা নদী বাসিয়া, মাকুন্দা আর খাজাঞ্চী নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
আর চরচন্ডী নামে একটি নদী ছিল, সেটি এখন ছোট্ট একটি নালায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে হাওর, খাল-বিল ও নালা শুকনো থাকায় বোরো চাষাবাদে পানির জন্য হাহাকার করেতে হয় হাজার হাজার কৃষকদের।
বোরো চাষাবাদের সময়ে হাওরে গেলে কিংবা নদীগুলো পরিদর্শন করলে এমন দৃশ্য দেখা মিলবে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নদী ও কৃষিক্ষেতের। এরই প্রেক্ষিতে সরকারি উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাসিয়া নদী খনন করা হয়।
এরপর উত্তর বিশ্বনাথবাসীর পানির চাহিদা মিটাতে মাকুন্দা নদীর ২৮ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। ১৩ কোটি ৪৬লাখ টাকা বয়ে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ওই ২৮ কিলোমিটার খননের টেন্ডার পান ঢাকার ‘এসএ এসআই ইসরাত এন্ড জেভি এন্টারপ্রাইজ। অনিয়মের মধ্যেই ২০২১ সালে ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ শেষও করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকারও বেশি।
চলতি ২০২২ সালের জুন মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জিরো পয়েন্ট থেকে সোনালী বাংলা বাজার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ১০ থেকে ২০মিটার নদীর তলদেশ খননের নির্দেশনা থাকলেও বৈরাগী বাজার ও বাংলাবাজারের বেশিরভাগ এলাকায় কেবল তীরের ঘাস ছাঁটাই করেই নদী খনন শেষ করা হচ্ছে।
আর নদী পাড়ের অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে দোকান-মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে মেশিন দিয়ে তোলা নদীর মাটিও। এমন অভিযোগ উত্তর বিশ্বনাথের সহস্রাধিক কৃষক ও নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। বৈরাগী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে নদীর বুকে কৃষকের ধানের চারা এখনও দৃশ্যমান রয়েছে। এভাবে অনিয়মের মধ্যদিয়ে নদী খনন করা অর্থহীন বলে মনে করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ওই এলাকার হুমায়ুন আহমদ, আব্দুর রহিম, লিলু মিয়া, এমাদ উদ্দিন, আলাই মিয়া, সুরুজ আলী, নুরুলহক জানান, নদীর তলদেশ খনন না করে নদীর পাড়ের ঘাস ছাঁটাই করে খনন কাজ শেষ করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি আর ঠিকাদারের লোক মিলে মাটি বিক্রি করার পাশাপাশি নদী তীরের অবৈধ দোকান মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাও নিচ্ছেন।
রামপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, খনন কাজে অনিয়মের কথা তিনি জেনেছেন। সঠিকভাবে নদী খনন করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সাব ঠিকাদার শাহীন আহমদ এবিষয়ে কথা বলতে নারাজ। তবে, তিনি অনিয়ম ও চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছন।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী (খনন কাজের এসও) সেলিম জাহাঙ্গীর অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, সঠিকভাবে খননের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ১০/১৫দিন পরে তিনি খনন কাজ পরিদর্শন করবেন জানিয়ে সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, পরিদর্শনকালে খনন কাজে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আইন মতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর এ বিষয়টি তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেছেন, অনিয়মের বিষয় নয়, সেলিম জাহাঙ্গীর শুধুমাত্র মাটি বিক্রির বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিষয়টির খোঁজ খবর নেবেন বলেও জানান তিনি।