রবিবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » গাইবান্ধার ৪ জিনের বাদশা ঝিনাইদহে গ্রেফতার
গাইবান্ধার ৪ জিনের বাদশা ঝিনাইদহে গ্রেফতার
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: ঘটনা ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। গভীর রাতে মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা মাঝেরপাড়ার প্রবাসি শাহ আলমের স্ত্রী রেনুকা খাতুনের। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে ‘মা’ ডাক দিয়ে হাদিস কোরআনের বানী শোনাতে থাকে। সঙ্গে ভৌতিক শব্দ। কানে ভেসে আসে হা হা, হি হি, এইবার তোকে খাব, বহুদিন তাজা রক্ত খায়নি। রেনুকার চোখ থেকে ঘুম ছুটে যায়। রেনুকা তখনও জানেন না তিনি জ্বিনের বাদশা নামক প্রতারকের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষন আলাপচারিতায় প্রতারক চক্রটি বলে “আল্লাহর তরফ থেকে হুকুম হয়েছে. তোকে ৭ হাড়ি কাঁচা স্বর্ণ দিতে”। এ কথা বলে প্রতারক চক্র প্রথমে রেনুকার কাছে একটি জায়নামাজ হাদিয়া চাই এবং ৫৬০ টাকা দাবী করে। ৭ হাড়ি সোনার লোভ সামলাতে না পেরে রেনুকা বেগম বিকাশ একাউন্টে ৫৬০ টাকা পাঠায়। ৫ নভেম্বর জ্বিনের বাদশা দলের প্রতারকরা আবারো রেনুকা খাতুনের কাছে ফোন করে জানায় ৭ হাড়ি স্বর্ন পেতে হলে তোমার বাড়ির কিছু স্বর্ণ দিতে হবে। রেনুকা ঘটনার দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিপরীতে একটি কাছের নিচে দুই লাখ আশি হাটার টাকা মুল্যের প্রায় চার ভরি স্বর্ণ রেখে আসে। স্বর্ন রেখে আসার সময় তিনি দেখতে পান সেখানে একটি সোনা সাদৃশ্য মুর্তি রয়েছে। রেনুকার বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। এ ভাবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারক চক্রটি রেনুকার কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রেনুকা প্রতারিত হওয়ার পর গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারি ২০২২) ঝিনাইদহ সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন যার নং ৩৪। মামলাটি রেকর্ডের পর ঝিনাইদহ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের কাছে তদন্তের জন্য অর্পন করা হয়। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ ও ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের তত্বাবধানে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল প্রতারক চক্রটিকে সনাক্ত করতে সক্ষম হন। শুক্রবার রাতেই এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি বিলের মধ্য থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিন্টু পোদ্দারের ছেলে রায়হান ও তার ভাই তুহিন, একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে বিকাশ এজেন্ট জিয়াউর রহমান ও শাকপালা গ্রামের শ্রী নারায়ন দাসের ছেলে মিলন দাসকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, একটি ছুরি ও পিতলের মুর্তি উদ্ধার করে। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে সোপর্দ করে আসামীদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে রায়হানের নেতৃত্বে এই প্রতারক চক্র খুপরি ঘর বেধে ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো।
শৈলকুপার এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পার্থ প্রতিম শীল’র বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহারসহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধা গ্রহণ করে একটি পক্ষকে নাজেহাল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভূমি সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসদাচারণের। এতে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে উপজেলার মানুষের মাঝে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণে সরকারের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন উপজেলার সচেতন মহল। জানা গেছে, শৈলকুপা পৌরসভার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান। নতুন বাজারে গত ৪০ বছর যাবত বসবাস ও ব্যবসায় করে আসছেন তিনি ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বসবাসের সুবাদে তার বাড়ির সাথে লাগানো হাটের জমি ডিসি আর’র মাধ্যমে আঁধা-পাকা ঘর করে ব্যবসায় করে আসছেন। ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসিল্যান্ড পার্থ প্রতিম শীল নবায়ন না করে তাদের মৌখিক ভাবে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই জমির ইজারা বাতিলের জন্য সুপারিশ করে। বর্তমানে সেই জমিটি বরাদ্ধ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে মতিয়ার রহমানের ভাই আতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাশের জমিতে অনিয়ম করে দুই তলা ভবন করা হচ্ছে। অন্যপাশের জমিতে একজন ১৬ টি দোকান গড়ে তুলেছে। এমন নানা অনিয়ম থাকলেও এসিল্যান্ড তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের বরাদ্ধকৃত জমি তার পছন্দের ব্যক্তিদের দেওয়ার জন্য পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন নোটিশ দেয়নি, পাশের দোকানদাদের সাথে কোন গণশুনাণী হয়নি। কিভাবে সে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ভূমি অফিসে গেলে এসিল্যান্ডের সাথে কথাই বলা যায় না। তার ব্যবহার খুবই খারাপ। মানুষকে মানুষ মনে করেন না তিনি। এ বিষয়ে এসিল্যান্ড পার্থ প্রতিম শীল বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল তাই আমি ওটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।