শুক্রবার ● ৪ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » চট্টগ্রামে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী সমাবেশ
চট্টগ্রামে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী সমাবেশ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীতি চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীতে নারী সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ শুক্রবার ৪ মার্চ বেলা ৩টার সময় চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের আগে ডিসি হিল থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব প্রদক্ষিণ করে আবার চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪শ’ জন নারী অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশের শ্লোগান হচ্ছে- “সামরিকায়ন নারীর নিরাপত্তা হরণ”, ‘নিরাপত্তা টহল ও তল্লাশির নামে নারী নির্যাতন বরদাস্ত করবো না, সাজেক-স্বনির্ভর-বড়ইতলি-ঘিলাছড়ি-রাঙ্গাপান্ন্যার মতো নারী সমাজ জেগে উঠুন’।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীতি চাকমার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ইন্দ্রানী সোমা ,প্রগতিশীল চিকিৎসক নেতা ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের পূর্ব-৩ সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি অংকন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি রেশমি মারমা ও সংহতি জানান গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগরের সহ সভাপতি শুভ চাক।
সভাপতির বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাহাড়ি জনগণের ওপর জাতিগত নিপীড়ন চলছে। সেখানে সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও দমনমূলক অগণতান্ত্রিক ‘১১ নির্দেশনা’ জারি রেখে অন্যায় দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ধরপাকড়, ঘরবাড়ি তল্লাশি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, নারী নির্যাতন, ভূমি বেদখলসহ নানা জুলুম-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। যার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে নারী ও শিশু সহ সাধারণ মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীতার মধ্যে রয়েছে।
তিনি পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের সাজা দেয়া হয় না অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর গোপন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় এ যাবত যত পাহাড়ি নারী ধর্ষণ-খুনের শিকার হয়েছেন কোন ঘটনারই বিচার হয়নি। কারণ, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও গোপন নিষেধাজ্ঞার করণে বরাবরই মেডক্যাল রিপোর্টে নেগেটিভ ফলাফল দেয়া হয়ে থাকে। যার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা সেনা, প্রশাসন ও সরকার দলীয় দুর্বৃত্তদের সহায়তায় পূনরায় একই অপরাধ কর্ম চালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন লে. ফেরদৌস গং কর্তৃক অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ফেডারেশন তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৬ বছর হতে চললো, কিন্তু আমরা এ ঘটনার বিচার আজো পাইনি। একইভাবে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে সোহাগী জাহান তনুর হত্যার বিচারও হয়নি।
নিরূপা চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এদেশের শাসকগোষ্ঠিই ধর্ষক-নিপীড়কদের রক্ষা করে থাকে। যার কারণে ধর্ষক, খুনি, নিপীড়নকারীরা যদি ক্ষমতাবান হয় কিংবা ক্ষমতাবানদের ছত্রছায়ায় থাকে তাহলে তারা রেহাই পেয়ে যায়। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক বিচারব্যবস্থা ও বিচারহীনতা নারীদের নিরাপত্তা আরো বেশি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
সমাবেশ থেকে তিনি রাষ্ট্রীয় এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা ভেঙে দিতে নারীদেরকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার ও ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সদস্য ইন্দ্রানী সোমা বলেন, নারীদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে পাহাড় এবং সমতলে অনেক আন্দোলনের হয়েছে। তিনি পাহাড়ের নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ের সকল নির্যাতন নিপীড়নসহ কল্পনা চাকমা ও মাইকেল চাকমা অপহরণ ও গুমের ঘটনার সাথে রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত। পাহাড় এবং সমতলে সকল নারীদের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
ডা. সুশান্ত বড়ুয়া পাহাড়ে সকল জাতিসত্তাদের ক্রাইসিস তুলে ধরে বলেন, পাহাড়ে জাতিসত্তারা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তিনি পাহাড়ে সংস্কৃতি রক্ষার এবং পাহাড়ে পিছিয়ে পড়ার শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে আহ্বান জানান।
এডভোকেট ভূলন ভৌমিক বাংলাদেশ শাসন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, এদেশের সরকারি আমলা,পুলিশ ডিজিএফআইদের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জিম্মি হয়ে আছে, জনগণের কোনো ক্ষমতা নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকার যতক্ষণ না উচ্ছেদ না হবে ততক্ষণ পাহাড় এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। তিনি দেশে নতুন সংবিধান তৈরি করার মাধ্যমে পাহাড়ে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের অন্যায় দমন-পীড়ন, জুলুম বন্ধ করে নিপীড়নমুক্ত সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।