মঙ্গলবার ● ৮ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পানছড়িতে এইচডব্লিউএফ ও নারী সংঘের সমাবেশ
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পানছড়িতে এইচডব্লিউএফ ও নারী সংঘের সমাবেশ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য শিউলি ত্রিপুরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘হে নারী সমাজ, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে গর্জে উঠুন’ এই আহ্বানে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে র্যালি ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)।
আজ ৮ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় লোগাং করল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বাবুরো পাড়া বাজারে এসে শেষ হয় এবং সেখানে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের পানছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি মিনতি চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী শিউলী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল) সংগঠক বিপুল চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর পানছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি তৃষ্ণাংকর চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি উপজেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা।
সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা বলেন, আজকের দিনটি নারীদের একটি লড়াই সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের দিন। নারীদের লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ সারা বিশ্বে এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। এই দিনটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নারীদেরও আরো বেশি অধিকার সচেতন হতে হবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নারীদেরকে গর্জে উঠতে হবে, লড়াই সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী দিবস পালন করা হয় বটে নারী নির্যাতন, নারীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য দূর হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দিন দিন নারী নির্যাতন-ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমানতালে চলছে রাজনৈতিক ও জাতিগত দমনপীড়ন। এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ সংগঠিত করতে চায় তাদের ওপর শাসকগোষ্ঠি চড়াও হয়ে দমন-পীড়ন চালায়। যার অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সালে ১২ জুন সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার লে. ফেরদৌস কর্তৃক নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ইউপিডিএফে নেতা মাইকেল চাকমাকে গুম করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির দমন-পীড়ন এতটাই অমানবিক হয়ে উঠেছে যে, এখানে ইউপিডিএফ কর্মি, সমর্থকসহ সাধারণ জনগণকে প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার, নির্যাতন, খুন, মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ, তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে?
তিনি নারী নির্যাতনসহ সকল নিপীড়ন-নির্যাতন অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। দেখা গেছে, প্রতিটি গণহত্যায় ও সাম্প্রাদায়িক হামলায় নারীরাই সব চাইতে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নারীরা নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু সরকার নারীদের সুরক্ষা দিতে পারছে না। তাই নারীদেরকে নিজেদের সুরক্ষা ও অধিকার অর্জনের জন্য আন্দোলন করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালে ১২ জুন লে. ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার ২৬ বছরেও হয়নি। চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে আজও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। বিচারের নামে সরকার সময় ক্ষেপন করছে। একইভাবে বিচার হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যা ঘটনারও। তিনি এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।
তৃষ্ণাংকর চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের কোন নিরাপত্তা নেই। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এস মঙ্গল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু নারী নির্যাতন নয়, সেনা-সেটলার কর্তৃক জুম্মোদের ভুমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে সাজেকে ভুমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে লক্ষীবিজয় ও বুদ্ধপুতি চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদেরকে ভুমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মিনতি চাকমা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা ধর্ষণ-নির্যাতনসহ নারীর ওপর সকল সহিংসতা বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সকল অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এছাড়া দীঘিনালায়ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।