শুক্রবার ● ১১ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » ঢাকা » দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রতিরোধের দাবিতে ২৮ মার্চ বামজোট দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রতিরোধের দাবিতে ২৮ মার্চ বামজোট দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে
দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ উর্ধ্বগতি প্রতিরোধে বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী ২৮ মার্চ ২০২২ সোমবার দেশব্যাপী অর্ধদিবস (৬টা-১২টা) হরতাল ঘোষণা করেছে। আজ সকালে পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের প্রগতি মিলনায়তনে আহুত সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই ঘোষণা প্রদান করেন।
তিনি বলেন হরতাল সফল করতে সারাদেশে সভা, সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিল, বিক্ষোভ ও প্রচারপত্র বিলি করার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি দেশের জনগণকে নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনে দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি সফল করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি সকল বাম প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক দল, সংগঠন, শ্রেণীপেশার সংগঠন ও নেতৃবৃন্দকেও স্ব-স্ব অবস্থান থেকে একইদিন হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা, সমর্থন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় অতিজরুরী খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষ আজ নাকাল। মানুষ চরম দুর্ভোগ আর কষ্টে দিন পার করছে। গরীব ও স্বল্প আয়ের কোটি কোটি মানুষের খাদ্যগ্রহণও কমে গেছে। ঘরে ঘরে হাহাকার দেখা দিয়েছে। জনগণের এক বড় অংশ দুই বেলাও ভালভাবে খেতে পারছে না। এই অবস্থা চলতে দিলে দেশ আবারও দুর্ভিক্ষাবস্থায় নিপতিত হতে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকরি কোন মনিটরিং ও ভূমিকা না থাকায় মুনাফাখোর অসৎ সিণ্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দেশের মানুষকে পুরোপুরি জিম্মি করে ফেলেছে। প্রতিদিন ভোক্তাদের পকেট থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বাড়তি হাতিয়ে নিচ্ছে। আমদানিকারক, মিলার, চাতালের মালিক, আড়তদার, মজুতদার, ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী সিণ্ডিকেটসমূহের সাথে সরকারের অশুভ আতাতের কারণে প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম আজ আকাশচুম্বি। মানুষের জীবন নিয়ে তারা এখন রীতিমত ছিনিমিনি খেলছে। বাস্তবে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে কেবল গত ১০ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯০%, গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৪৪%, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৮২%, আর পানির দাম বেড়েছে ২৬৪%। এর মধ্যে আবার চরম স্বেচ্ছাচারী পন্থায় পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৬০%, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা রয়েছে ১১৭% আর তেলের দাম বৃদ্ধির কোন সীমারেখা নেই।
তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে চাল-ডাল-পিঁয়াজ-সিলিন্ডার গ্যাসসহ অতি জরুরী খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতলের যা দাম বেড়েছে; দেশে তার তুলনায় অনেক বেশী দাম বাড়ানো হয়েছে। আর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে পুরোপুরি খামখেয়ালিভাবে। এসব খাতের চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট আর অববস্থাপনার দায় চাপানো হচ্ছে ভোক্তাদের উপর।
জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, এই দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নজিরবিহীন ব্যর্থতা আর উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের ভোটের প্রয়োজন না থাকায় জনগণের এই দুঃসহ কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করছে না। আন্তর্জাতিক বাজার আর এখন যুদ্ধের কথা বলে এখন তারা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে মন্ত্রীরা কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে মানুষের ভাত খাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করছে। বাজারের নৈরাজ্য বন্ধে তাদের যদি কিছু করার না থাকে তাহলে কেন তাদেরকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না ? সরকারকেই বা কেন গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে?
তিনি বলেন, বস্তুত: সরকার ও অসৎ ব্যবসায়ীরা এক মহাসিণ্ডিকেট গড়ে তুলেছে। মুনাফাখোরী, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ, অর্থপাচারকে তারা তাদের নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে তারা লুটেরা বাজারে পরিণত করেছে। কথিত উন্নয়নের কথা বলে নিজেদের চুরি, দুর্নীতি ও লুটপাটকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় থাকার নৈতিক জোর না থাকায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা যা খুশী তাই করে চলেছে। এভাবে সংকীর্ণ কোটারি স্বার্থে দেশ ও জনগণকে তারা অনিশ্চিত অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনের পথে এই সরকারকে বিদায় দিতে না পারলে ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার কিছুই অর্জন করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ-মার্কসবাদী এর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মানস নন্দি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এড. মোসাদ্দেক হোসেন বাবুল, ওয়ার্কার্স পার্টি- মার্কসবাদীর বিধান দাস। উপস্থিত ছিলেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ কাফি রতন, আকবর খান, জুলফিকার আলী, বাচ্চু ভূইয়া, অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, লুনা নূর, মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ।