বুধবার ● ১৬ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » এশিয়ার বৃহত্তম দত্তনগর কৃষি খামারে চাহিদামতো বীজ উৎপাদন হয় না
এশিয়ার বৃহত্তম দত্তনগর কৃষি খামারে চাহিদামতো বীজ উৎপাদন হয় না
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের মহেশপুরে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম দত্তনগর কৃষি খামার সরকারে নির্দেশনার বাইরে ফসলের জাত নির্ধরন ও কৃষকের চাহিদানুযায়ি বীজ উৎপাদন করতে পারেনা। ফলে ঝিনাইদহের কৃষকের ফসলের বীজের জন্য ডিলার ও আমদানীকারকদের উপর নির্ভশীল হয়ে পড়েছে। সুযোগ বুঝে বীজ বিক্রেতারা ভোজাল ও মানহীন বীজ সরবরাহ করে কৃষকদের প্রতারিত করে আসছে। জেলার কৃষক ও বীজ উৎপাদনকারী খামার কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে নানাবিধ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা যায় কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অন্যতম জেলা ঝিনাইদহ। দেশের অন্যান্য জেলার মত এ জেলার কৃষকরা এক সময় শস্য উৎপাদনের জন্য নিজেরাই পরবর্তী বছরের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষন করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে জমীর পরিমান বাড়েনি বেড়েছে জনসংখ্যা। ফলে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মিটাতে সরকারের কৃষি বিভাগ গবেষনার মাধ্যমে হাইব্রীড জাতের শস্য বীজ তৈরী করে। যেখানে কৃষকের তৈরী সাধারণ বীজে বিঘা প্রতি ৮/১০ মন ধান বা গম উৎপাদন হতো সেখানে হাইব্রীড বীজে ২৫/৩০ মন উৎপাদন হচ্ছে। একই ভাবে গম, ভৃট্টা, পাট, আলু ও রবী শস্য উৎপাদন হাইব্রীড বীজের কারনে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে কৃষকরা তাদের চাহিদা মিটাতে আদি জাতের ফসলের বীজ তৈরী বা সংরক্ষন থেকে বেরিয়ে এসে হাইব্রীড ফসলের উৎপাদন শুরু করেছে। কৃষকরা নিজে হাইব্রীড ফসলের বীজ উৎপাদন বা সংরক্ষন করতে পারেনা বিধায় তাদের ফসলের বীজের জন্য সরকারী ও বে-সরকারী বীজ উৎপাদনকারী খামার ও আমদানীকারকদের বীজের উপর এখন নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। ফলে অনেক কৃষক বীজ কিনতে গিয়ে বিএডিসি’র ডিলার, বে-সরকারী খামার ও আমদানী করা বীজ কিনে প্রতারনার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দত্তনগর কৃষি খামারের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম পরিচালক (খামার) কৃষিবিদ এ,কে,এম কামারুজ্জামান বলেন, আমরা ইচ্ছামত বীজ উৎপাদন বা বীজের জাত নির্ধারণ করতে পারি না । সরকার আমাদের সু-নির্দিষ্ট জাত উল্লেক করে তার পরিমান নির্ধারণ করে দেয়। যেটি কৃষকদের চাহিদার গড় হার ৪০ শতাংশ হবে। তিনি আরো জানান বীজের উপযোগী ৫টি খামারে ফসল উৎপাদন করে বীজ প্রসেসিং সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে মান পরীক্ষার পরের বছর ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের নিকট পৌছে দেয়। এছাড়া সরকারী বীজ প্রণোদনা হিসাবেও গরীব ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে বিতারণ করা হয়ে থাকে। তিনি জোর দিয়ে বলেন সরকারী খামারের বীজ কখনো নিন্ম মানের বা ভেজাল জাতের হয়না। তবে তাদের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধা থাকায় কৃষকের শতভাগ চাহিদা তারা মিটাতে পারছেনা। এ দিকে বেনাপোলের বীজ আমদানি কারক সাজেদুর রহমান দাবী করেন, তাদের আমদানি করা কোন বীজ নিন্ম মানের নয়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি খামারের বীজে ভেজাল থাকে। এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরে দায়িত্বরত আমদানিকৃত বীজের মান যাচাইকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান কোয়ারান্টাইনের উপ পরিচালক কৃষিবীদ সুব্রত চক্রবর্তী জানান, তারা ভারত থেকে আমদানীকৃত ধান, পাট, ভুট্টা ও সবজী বীজের নমুনা গ্রহন করে উপযোগী কিনা সেটা যাচাই করতে ৭২ ঘন্টা সময় নিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। এছাড়া বীজের মান ও ফাঙ্গাস আছে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে তবে ছাড় পত্র দেন। যে কারনে তার দাবী আমদানীকৃত বীজের মান যাচাই করেই দেশে প্রবেশ করার ছাড়পত্র দেয়া হয়। যদি বীজ নিয়ে কোন প্রশ্ন বা কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তবে তা দেশের মধ্যে অসাধু ব্যবসায়িরা করে থাকতে পারেন। ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন বীজ ব্যবসায়ীদের বীজ কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন এমন অহরহ অভিযোগ পাওয়া যায়। শহরের অগ্নিবীণা সড়কের শহিদ বীজ ভান্ডার থেকে গত মৌসুমে আবাদের জন্য হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের কৃষক জনাব আলী, লিমন হোসেন আজিজার মন্ডল, আতিয়ার রহমান, নুজির আলী খাঁ, সজল হোসেন ও আকাশ মিয়া স্বর্ণা ধানের বীজ কিনে প্রতারিত হন বলে কথিত আছে। কিন্তু শহীদ বীজ ভান্ডারের মালিক সেই অভিযোগ খন্ডন করে বলেন তার ব্যবসায় সুনাম ক্ষুন্ন করতে এমন অভিযোগ করে একটি মহল। ফলে জরিমানা হিসেবে ৭ জন কৃষকের ২৫ বিঘা জমির জন্য ২ লাখ ২৯ হাজার ৫’শ টাকা ক্ষতিপুরণ আদায় করে ভোক্তা অধিকার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভুটিয়ারগাতী গ্রামের কওছার আলী শহরের অগ্নিবীণা সড়কেরে একটি বীজের দোকান থেকে বিআর-৬৩ জাতের ৪০ কেজী হাই ব্রীড বীজ কিনে প্রতারিত হন। ওই বীজে চারা গজায়নি। একই গ্রামের কৃষক দুলাল জোয়ার্দ্দার অভিযোগ করেন তিনি বিএডিসির ধানের বীজ কিনে জমিতে রোপন করার পর একই বস্তার বীজ থেকে অন্তত চার জাতের ধানের চারা গজিয়েছে। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আজগার আলী বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাহারের মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে ধান, গম, পাট বীজ এবং ডাল, তৈল ও মসলা উৎপাদন ও সংরক্ষন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের বীজ উৎপাদন করছে। যে গুলো কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে নিয়মিত মনিটারিং করা হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন তিনি শুধু সরকারী ও সরকার অনুমোদিত বীজ উৎপাদনকারী খামারের বীজ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে সঠিক মান নিশ্চিত হলে তার প্রত্যায়ন করে ট্যাগ দিয়ে থাকেন। যদি কোন অসাধু ব্যবসায়ি গোপনে নিন্মমানের বীজ বিক্রি করেন বা অভিযোগ আসে সেক্ষেত্রে জেলা ভোক্তা অধিকার দপ্তর বা বীজ ল্যাবে পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।